দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বৃহস্পতিবার সকালেও দেখা গেল একদিনে সংক্রামিতের সংখ্যা সেই দশ হাজারের কাছাকাছিই রয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সকাল ৮টার বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড পজিটিভ রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৯ হাজার ৯৯৬ জন। একদিনে সংক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যাও কম নয়। কেন্দ্রের হিসেবে ৩৫৭ জন।

দেশে এখন করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৮৬ হাজার ৫৭৯ জন। আর কিছুদিনের মধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ছোঁবে বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ প্রতিদিনের হিসেবে সংক্রামিতের সংখ্যা বাড়ছে প্রায় দশ হাজারের কাছাকাছি। করোনা অ্যাকটিভ কেস অর্থাৎ শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে আইসোলেশনে রয়েছেন ১ লাখ ৩৭ হাজারের কাছাকাছি।

করোনা সংক্রমণের নিরিখে ফের রেকর্ড করেছে মহারাষ্ট্র। রাজ্যে মোট কোভিড পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ৯৪ হাজার ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে ৩২৫৪ । একদিনে ভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুও অনেক বেশি, ১৪৯ জন। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব বলছে, বাণিজ্যনগরী মুম্বইয়ের কোভিড পরিস্থিতি রীতিমতো শঙ্কাজনক। সেখানে ইতিমধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫২ হাজার। তবে আশার বিষয়, মহারাষ্ট্রের দুই বস্তি এলাকা ধারাভি ও ওরলিতে সংক্রমণের হার কমেছে, বরং সুস্থার হার বেড়ে হয়েছে ৫০%।

করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে রাজধানীতে। করোনা আক্রান্তের নিরিখে গোটা দেশের মধ্যে দু’নম্বরে রয়েছে দিল্লিতে। কেন্দ্রের হিসেবে, আজ সকাল অবধি সংক্রামিতের সংখ্যা ৩২ হাজার ৮০০। এ যাবৎ সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ৯৮৪ জনের। তবে সুস্থও হয়েছেন ১২ হাজারের বেশি। গত কয়েকদিনে দিল্লিতে করোনা সংক্রমণ দ্রুত হারে বেড়ে চলেছে। ডাবলিং রেট কমছে, প্রতি ১২-১৩ দিনে দ্বিগুণ হচ্ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।

রাজধানীর করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের উপ মুখ্যমন্ত্রী মণীষ সিসোদিয়া। গত মঙ্গলবারই একটি সাংবাদিক বৈঠকে তিনি দাবি করেছিলেন, গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু না হলেও জুলাইয়ের মধ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড করতে পারে দিল্লিতে। সংক্রামিতের সংখ্যা পৌঁছতে পারে পাঁচ লাখে।

দিল্লির পরেই ভাইরাস সংক্রমণের নিরিখে দেশের মধ্যে এগিয়ে তামিলনাড়ু। সে রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩২৬ জনের। পিছিয়ে নেই গুজরাটও। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ২১ হাজার ছাড়িয়েছে। তবে সুস্থও হয়েছেন ১৪ হাজারের বেশি। রাজস্থানের পরিস্থিতিও চিন্তা বাড়িয়েছে। ১১ হাজারের বেশি কোভিড পজিটিভ সে রাজ্যে। সংক্রমণ বাড়ায় আগামী এক সপ্তাহের জন্য সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজস্থান সরকার। বিশেষত চারটি রাজ্য উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, পঞ্জাব ও হরিয়ানার সীমান্ত বন্ধ করতে চলেছে মরু রাজ্য।

কেন্দ্রের হিসেব বলছে, দেশের ১৫টি রাজ্যের মধ্যে ৫০টি পুরএলাকায় সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। সংক্রমণের নিরিখে চিনকে ছাপিয়ে গেছে মহারাষ্ট্র। পুণে, ইনদওর, আমদাবাদ, দিল্লিতেও সংক্রমণের হার জাতীয় গড়ের চেয়েও অনেক বেশি। সংক্রামিত এলাকাগুলি পর্যবেক্ষণ করতে কেন্দ্রীয় টিম পাঠানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছে, সক্রিয় করোনা রোগীদের চেয়ে দেশে সুস্থ হয়ে ওঠাদের সংখ্যা অনেক বেশি।…. কেন্দ্রের হিসেবে দেশে এখন সুস্থতার হার প্রায় ৪৯%। তার মধ্যে পঞ্জাবে সুস্থতার হার সর্বাধিক, প্রায় ৮০%। পঞ্জাবে করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ৪৯৭, সেরে উঠেছে ২ হাজার ১৬৭ জন।

সম্প্রতি দেশজুড়ে ৭০টিরও বেশি জেলায়  ‘সেরো সার্ভে’ (রক্তে ভাইরাস প্রতিরোধে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডির উপস্থিতি বিষয়ক সমীক্ষা) চালাচ্ছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। জানানো হয়েছে, কিছু কন্টেনটেইনমেন্ট এলাকায় নতুন করে প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা পজিটিভ রোগীদের সংখ্যা যেমন উদ্বেগের কারণ, তেমনি আশার বিষয় হল সংক্রমণ সারিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠাদের সংখ্যাও কম নয়। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে জনগোষ্ঠীতে।

আইসিএমআর জানিয়েছে, ৫০ লাখের বেশি স্যাম্পেল টেস্ট করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় দেড় লাখ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। দেশের মোট ৭৫৯টি ল্যাবরেটরি, সায়েন্স রিসার্চ সেন্টারে কোভিড টেস্টিংএর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যার মধ্যে সরকারি ল্যাবরেটরির সংখ্যা ৫৩১ ও বেসরকারি ল্যাবরেটরি ২২৮। জুন মাস থেকেই প্রতিদিন গড়ে প্রায় দু’লাখ কোভিড টেস্ট করা হবে জানিয়েছিল আইসিএমআর। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে।

করোনা আপডেট- এক নজরে:

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড–১৯–এ সংক্রমিত হয়েছেন ৯৯৯৬জন এবং মারা গিয়েছেন ৩৫৭জন। এখনও পর্যন্ত এটাই দেশে সর্বোচ্চ সংক্রমণ। বলছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য এবং পরিবারকল্যাণ মন্ত্রক। একদিনে রেকর্ড সংক্রমণের ফলে সারা দেশে এখন করোনা–আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২,৮৬,৫৭৯জন। তাঁদের মধ্যে এখন চিকিৎসা চলছে ১,৩৭,৪৪৮জনের। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন ১,৪১,০২৯জন। এবং মারা গিয়েছেন মোট ৮১০২জন।

বৃহস্পতিবার সকালে এই তথ্য দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য এবং পরিবারকল্যাণ মন্ত্রক। মহারাষ্ট্র এখনও পর্যন্ত দেশের মধ্যে সবচেয়ে করোনা সংক্রমিত রাজ্য। সেখানে এপর্যন্ত মোট সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯৪,০৪১জন। তারপরেই রয়েছে তামিল নাড়ু যেখানে মোট সংক্রমিত এখন ৩৬,৮৪১জন এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে দিল্লি। সেখানে মোট করোনা–আক্রান্ত ৩২,৮১০জন। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here