দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পূর্ব ঘোষণা মতো শুক্রবার হরিশ পার্কে কলকাতার সবুজায়ন অনুষ্ঠানে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী। উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম, রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা, কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। সেই অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই রাজ্য কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলছে বলে দাবি করে মমতা বলেন, “তিন মাস কোনও আয় নেই সরকারের। শুধু খরচ হচ্ছে। তারপরেও রাজ্যের প্রতিটি কর্মচারীর কাছে মাস পয়লায় বেতন দিচ্ছি।”

একদিকে করোনার সঙ্গে লড়াই, অন্যদিকে আমপানের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা। এই পরিস্থিতির মধ্যেও ‘নোংরা’ রাজনীতি অভিযোগ করে কিছুটা রাগই দেখালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বিশ্ব পরিবেশ দিবসের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “একটা রাজনৈতিক দল সব সময় বলে যাচ্ছে বাংলা থেকে তাড়াও, এই সময় কি রাজনীতি করার সময়! রাজনীতির নামে নোংরা রাজনীতি করছে। এটা সময় নয়।”

ক’দিন আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় দুই তৃতীয়াংশ শক্তি নিয়ে ক্ষমতায় আসবে বিজেপি। এর পরে তৃণমূলনেত্রী কোনও পাল্টা মন্তব্য করেননি। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য এদিন যেন তারই জবাব দিলেন। তিনি বলেন, “কেউ কেউ এমন পরিস্থিতিতেও রাজনীতি করছেন। বলছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে গদিচ্যুত করে আমাদের ক্ষমতায় নিয়ে আসুন। এটা কি রাজনীতি করার সময়? আমি তো কই বলছি না দিল্লি থেকে নরেন্দ্র মোদীকে সরিয়ে দাও। কারণ, আমি মনে করিনা এটা ওইসব বলা বা রাজনীতি করার সময় নয়।”

মুখ্যমন্ত্রীর কোনও কথাই এখন মাটিতে পড়তে দিচ্ছেন না বিরোধীরা। তার আগেই পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। যেমন এদিনও রাজ্য বিজেপির মুখপাত্ররা বলেন, রাজনীতি কে করছে মানুষ কি জানেন না? কারা সরকারি ত্রাণের প্যাকেটে দলের প্রতি সেঁটে দিচ্ছেন, কারা করোনার তথ্য গোপন করে মেডেল পেতে চাইছেন, কাদের ক্রেডিট নেওয়ার চক্করে উমফানের পর সেনা নামতে দেরি হয়েছে—সবাই জানেন।

কেন্দ্রীয় সরকারের নিন্দা করে তিনি আরও বলেন, “কেন্দ্র তো সাংসদদের ৩০ শতাংশ বেতন কেটে নিয়েছে। সাংসদ তহবিলের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা করিনি। পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার ট্রেন ও বাসভাড়া আমরা দিয়েছি।” একই সঙ্গে দিদির অভিযোগ, কেন্দ্র অপরিকল্পিতভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে পাঠানোয় বাংলার করোনা পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। তিনি বলেন, “কেন্দ্র তো অপরিকল্পিতভাবে পরিযায়ী ভাইবোনদের রাজ্যে পাঠাচ্ছে। রাজ্যে পাঠানোর আগে না তাঁদের ঠিক করে খেতে দেওয়া হয়েছে। না চিকিৎসা করা হয়েছে। অনেকেই তো অসু্স্থ। তাঁরা ট্রেনে আসার সময়ই মারা যাচ্ছেন।”

এমন কথা মুখ্যমন্ত্রী আগেও বলেছেন। তবে এদিন বিরোধীদের উদ্দেশে সমালোচনার সুর ছিল বেশি। নাম না নিলেও তিনি যে, বিজেপিকেই আক্রমণ করছেন তা অবশ্য স্পষ্ট হয়ে যায়। কারণ, করোনা মোকাবিলা থেকে পরিযায়ী শ্রমিক আনা কিংবা উমফান বিপর্যয় সামাল দেওয়া সব ক্ষেত্রেই রাজ্য সরকারের ত্রুটি তুলে ধরতে বিজেপিই বেশি সক্রিয়। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কঠিন সময়ে কেউ কেউ স্রেফ রাজনীতি করছেন। ভয়ে তিন মাস বাড়ি থেকে বের হয়নি তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “ভয়ে তিন মাস সবাই মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে বাড়ির পিছনে ভিডিও কর্নারে লুকিয়ে ছিলেন। মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে শুধু রাজনীতি করছেন।”

জবাবে রাজ্য বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু বলেন, বিরোধীরা বাইরে বেরোলে পুলিশ, প্রশাসন দিয়ে যে আটকানো হচ্ছে তাও তো দেখছেন মানুষ। নবান্ন থেকে জেলা পুলিশকে বলে দেওয়া হচ্ছে, বিরোধীদের গাড়ি দেখলে আটকে দিতে। আর জেলা পুলিশ দলের লোকজনকে খবর দিচ্ছে। দলের লোক গাড়ি আটকাছে, তার পর পুলিশ এসে বলছে, লকডাউনে যাওয়ার অনুমতি নেই। অথচ সেই একই লকডাউনে তৃণমূলের নেতাদের বেরোনোয় বাধা নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here