দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃএ যেন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার বনাম অধিকারী পরিবারের লড়াই!


ডায়মন্ডহারবারের জনসভা থেকে যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দু অধিকারীকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, “তোমার বাড়িতে তো এতগুলো জোড়াফুল। নিজের বাড়িতে পদ্ম ফোটাতে পারছ না আর তুমি সারা বাংলায় পদ্মফুল ফোটাবে!”
ঠিক তার পরেই শুভেন্দু খড়দহের সভা থেকে বলেছিলেন, “বাবুসোনা, এখনও তো বাসন্তী পুজো আসেনি। রামনবমী আসেনি। এলে আমার বাড়ির লোকেরাও পদ্মফুল ফোটাবে। আমি তোমার বাড়িতে ঢুকেও পদ্মফুল ফোটাব।”

রামনবমী আসতে এখনও ঢের দেরি। তার আগে কাঁথি পুরসভার প্রশাসক পদ থেকে শুভেন্দুর ভাই সৌমেন্দুকে সরানোর পরেই তিনি গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়ে দিয়েছেন। বিষ্যুদবার দুপুরে উত্তরবঙ্গের গঙ্গারামপুর থেকে বঙ্গোপসাগরের তীরে কাঁথির অধিকারী পরিবারকে নিশানা করলেন অভিষেক।

এদিন তিনি বলেন, “রাজনীতি তো বুদ্ধিমত্তার লড়াই। আমি যেই বলেছি তোমার বাড়িতে তো একটাও পদ্ম ফোটাতে পারছ না, ওমনি একটা ভাইকে এনে জয়েন করিয়েছে। তার মানে তোমার বাড়িতে আরও অ্যাসিমটোমেটিক পেশেন্ট রয়েছে। তুমি নিজেই প্রমাণ করে দিচ্ছ!”

শিশির অধিকারী এবং তাঁর আর এক ছেলে দিব্যেন্দু অধিকারী তৃণমূলের সাংসদ। শিশিরবাবু আবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তৃণমূলের সভাপতি। এদিন কার্যত দলে থাকা সাংসদদেরই ‘উপসর্গহীন বেইমান’ বলে নিশানা করে বসলেন যুব তৃণমূল সভাপতি।
চার দিনের উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছেন অভিষেক। আলিপুরদুয়ার, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি ঘুরে এদিন তাঁর গন্তব্য ছিল দক্ষিণ দিনাজপুর। অভিষেক এদিন জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছোড়েন, “আচ্ছা আপনারা বলুন তো, টিভিতে টাকা কাকে টাকা নিতে দেখেছিলেন?” স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূলকর্মীদের মধ্যে থেকে জবাব আসে শুভেন্দু অধিকারী। একাধিকবার সেই প্রশ্ন করে যাচাই করে নেন অভিষেক।

সভার ভিড় রীতিমতো ভরসা জোগাতে পারে তৃণমূলকে। বৃহস্পতিবার ফের অভিষেক বলেন, ‘আমাকে ভাইপো বলে আক্রমণ করেন। কারণ ওদের বুকের পাটা নেই। কিন্তু আমি বলছি, অমিত শাহ, কৈলাস বিজয়বর্গীয় বহিরাগত, আকাশ বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষ গুন্ডা। সাহস থাকলে আদালতে আসুন, আমাকে জেলে ঢোকান।’

তাঁর ‘তোলাবাজি’ নিয়ে বারবার আক্রমণ শানানো বিজেপি নেতাদের এদিন চ্যালেঞ্জ করে অভিষেক বলেন, ‘আমি নাকি টাকা তুলি, তোলাবাজি করি। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, আমার জন্য ইডি-সিবিআই লাগাতে হবে না। প্রমাণ করে আমার জন্য ফাঁসির মঞ্চ করবেন, আমি নিজেই মৃত্যুবরণ করব। আমরা ক্ষুদিরামের আদর্শ মেনে চলি। ক্ষমতা দখলের লালসা আমাদের নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার ক্ষমতা ছেড়ে চলে এসেছেন। তাঁর আদর্শেই তৈরি তৃণমূল, তাঁর আদর্শই আমরা মেনে চলি।’

এ ব্যাপারে বিজেপির এক মুখপাত্র বলেন, “একেই বলে রাজনীতিতে কাল কা যোগী যদি বেশি কথা বলে তাহলে মুশকিল বাড়ে।” তাঁর কথায়, “নারদ কাণ্ডে এখনও তদন্ত চলছে। সে ব্যাপারে কিছু বলা সমীচিন নয়। তবে অভিষেক ভুলে যাচ্ছেন, ওখানে কাকলি ঘোষ দস্তিদার, ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সৌগত রায়দেরও দেখা গিয়েছিল। তাহলে কি ওঁরাও তোলাবাজ?”

এদিন সভায় ভিড় দেখে উৎফুল্ল অভিষেক বলেন, ‘দক্ষিণ দিনাজপুরে আজকের সভায় যে ভিড় হল, তা সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। যে কটা পদ্ম ২০১৯ সালে ফুটিয়েছিলেন, সেই সবকিছুই একুশের নির্বাচনে বানের জলে ভেসে যাবে। মে মাসের মধ্যে বিধানসভা নির্বাচন সম্পূর্ণ হয়ে ফলাফল ঘোষণা হয়ে যাবে। তার আগে শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করুন। আগামী ৫ বছর উন্নয়নের জোয়ার থেকে বাংলার কোনও পরিবার বঞ্চিত হবে না। কিন্তু এই দাঙ্গাবাজ বিজেপিকে বিদায় করতেই হবে। মমতাকে তৃতীয়বারের জন্য নবান্নে পাঠাতেই হবে৷

বিজেপিকে আক্রমণের ক্ষেত্রে তৃণমূলের এখন প্রধান হাতিয়ার ‘বহিরাগত’ ইস্যু। এদিনও অভিষেক সেই প্রসঙ্গে তুলেই বলেন, ‘ বহিরাগতদের ঢুকিয়ে, ভাড়া করে এনে বিজেপি এখন বাংলার কৃষ্টিকে নষ্ট করতে চাইছে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পর আর কোনও বিজেপি নেতা আসেনি। প্রধানমন্ত্রী, অমিত শাহরাও ভুলে গিয়েছিলেন। কিন্তু মানুষের পাশে থেকেছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। আগামী দিনেও তাই থাকবেন। এরা শুধু কার বাড়িতে মাস-মাংস রয়েছে সেই খবর রাখে। কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জওয়ানদের মেরে চলে গেল, সেই খবর রাখে না। ভোটে সেনাকে ব্যবহার করে।’

উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই বাবুল সুপ্রিয়কে আদালত অবমাননার আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার আইনজীবী সঞ্জয় বসু মারফত তিনি এই নোটিস পাঠান। আইনি চিঠিতে বলা হয়েছে, এর আগে অভিষেককে আসানসোলের কয়লা মাফিয়ার সঙ্গে জুড়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল। তা নিয়ে ২০১৭ সালে বাবুলের বিরুদ্ধে কলকাতা নগর ও দায়রা আদালতে মানহানির মামলা করেন অভিষেক। ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে আদালত বাবুলকে অভিষেকের বিরুদ্ধে এই ধরনের মন্তব্য করতে নিষেধ করে। কিন্তু তার পরেও ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর বাবুল এক সাংবাদিক বৈঠকে অভিষেককে শান্তিনিকেতনে গোরু পাচার, বালি পাচার, লোহা পাচারের কালো টাকা নিয়ে মহল বানানোর অভিযোগ তোলেন। অভিষেকের আইনজীবী নোটিস পাওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বাবুলকে ক্ষমা চেয়ে এই বক্তব্য প্রত্যাহার করতে বলেছেন। এ বিষয়ে বাবুলের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন বা মেসেজের জবাব দেননি।

এদিনও বহিরাগত ইস্যুতে বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করেন ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ। এই নিয়ে গতকালই অভিষেককে পাল্টা বিঁধেছিলেন বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ ডক্টর সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেছিলেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও দক্ষিণ দিনাজপুরে বহিরাগত।” এদিন অভিষেক বলেন, “এখানকার সাংসদ বলছেন, আমি নাকি বহিরাগত। বাংলায় জন্ম, বাংলায় বড় হয়েছি, ব্রাহ্মণের সন্তান, আমি বহিরাগত? বাহ বাহ! আর তোমার ইন্দোরের নেতা যারা বাংলা বুঝতে পারে না, বলতে পারে না, লিখতে পারে না, তারা কি দিনাজপুরের ভূমিপুত্র?”


অভিষেকের সভা শেষ হতে না হতেই আবার সুকান্তবাবু বলেছেন, “আমরাও বলছি রাজনীতি বুদ্ধিমত্তার লড়াই। যেই আমি ওঁকে বহিরাগত বললাম। তখন ওঁর গায়ে লাগল। উনি যদি বাংলার সন্তান হয়ে জেলায় জেলায় ঘুরতে পারেন, তাহলে আমাদের নেতারাও ভারতের সন্তান হয়ে রাজ্যে রাজ্যে ঘুরবেন।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here