দেশের সময় ওযেবডেস্কঃ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরে বলেছিলেন, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে তৃণমূলের বিস্তার ঘটানোই তাঁর লক্ষ্য। শুধু তাই নয়। তিনি বলেছিলেন, যে রাজ্যে তৃণমূল ইউনিট খুলবে সেখানে চার-পাঁচটা বিধায়ক জেতা বা পাঁচ-ছয় শতাংশ ভোট পাওয়ার জন্য যাবে না। সরকার গঠনের জন্যই যাবে।

তিন মাস বাদে গোয়ার বিধানসভা ভোট। বুধবার কলকাতায় এসে তৃণমূলে যোগ দিলেন গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা লুইজিনহো ফেলারিও-সহ প্রদেশ কংগ্রেস মোট ১০ শীর্ষ নেতা। নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার পর ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে তাঁদের তৃণমূলের যোগদান পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। সেই সাংবাদিক সম্মেলনই বর্ষীয়ান লুইজিনহো জানিয়ে দিলেন, তিন মাস হয়তো কম সময়। কিন্তু এই সময়েই জয় সম্ভব। কারণ বিজেপির শাসনে গোয়ার মানুষ বিরক্ত, বীতশ্রদ্ধ। তাঁরা একটা বিকল্প খুঁজছে। আর দিদির তৃণমূল কংগ্রেসই হয়ে উঠবে তাঁদের কাছে বিকল্প।

বাংলা-গোয়ার সম্পর্ক বোঝাতে এই বর্ষীয়ান নেতা বলেন, “বাংলা-গোয়ার সম্পর্ক চিরকালীন। আপনারাও মাছ ভালবাসেন, আমরাও তাই। আমরা যেমন ফুটবল ভালবাসি, বাংলাও তেমন ফুটবল পাগল। গোয়ানিজরা যেমন সংস্কৃতিপ্রেমী তেমন বাঙালিরাও।”

এদিন ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রের সাংবাদিক বৈঠকে লুইজিনহো এও বলেন, তাঁর উদ্দেশ্য টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া কংগ্রেসকে আবার ঐক্যবদ্ধ করা। তাঁর কথায়, কংগ্রেস অনেক ভাগে বিভক্ত হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস, ওয়াইএসআর কংগ্রেস, শরদ পাওয়ার কংগ্রেস, ইন্দিরা কংগ্রেস আমার লক্ষ্য ফের সবাইকে এক করা।

সম্প্রতি তৃণমূলের মুখপত্র জাগো বাংলার সম্পাদকীয় থেকে শুরু করে মমতা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের বক্তৃতায় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন।

এদিন সেই অভিষেকের পাশে বসেই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, টুকরো হয়ে যাওয়া কংগ্রেসকে ঐক্যবদ্ধ করা তাঁর লক্ষ্য। এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা অভিষেককে প্রশ্ন করলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আমরা তো বলেছি গত সাত বছরে বিরোধী পরিসরে কংগ্রেসের যে ভূমিকা নেওয়া উচিত ছিল তা তারা পারেনি।

আমাদের পার্টি কেবল টুইটারে নেই। আমরা রাস্তায় রয়েছি। আর কংগ্রেস সেই রাস্তার লড়াইটাই ছেড়ে দিয়েছিল। এর মানে কংগ্রেসের বিরোধিতা করেছি তা নয়।”

এদিন প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় এবং রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক সম্মেলনে। তাঁরা বলেন, গোয়ায় ইতিমধ্যেই তৃণমূলের চার নেতা ডেরেক ওব্রায়েন, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুখেন্দুশেখর রায় এবং মনোজ তিওয়ারি পৌঁছেছেন। আগামীকাল সেখানে আরও বড় যোগদান পর্ব হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

২০২৪ রাজধানী দখলের নীল নকশা তৈরিতেই কোমর বেঁধে নেমেছে ঘাসফুল হাইকম্যান্ড। দিল্লিকে সামনে রেখেই অন্যান্য রাজ্যে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার লক্ষ্য। আগামী বছর ৪০ আসনের গোয়া বিধানসভায় ভোট। গোয়া বিধানসভা দখলই এখন পাখির চোখ তৃণমূলের। কংগ্রেস ভেঙেই গোয়া উপকূলে ঘাসফুলের বিস্তারে কোমরবেঁধে নেমেছে তৃণমূল। দায়িত্বে আছেন সুখেন্দুশেখর রায়, মনোজ তিওয়ারি, ডেরেক ও’ব্রায়েন

ইতিমধ্যেই গোয়া জুড়ে হোর্ডিংয়ে জ্বলজ্বল করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ। রাস্তায় ছেড়ে তৃণমূলের পতাকা। গোয়ানিজ ভাষায় লেখা শ্লোগান। পানাজির গোয়া এয়ারপোর্ট এলাকাতে দেখা গেল রাস্তার ডিভাইডারে জোড়াফুল পতাকার সমাহার গোয়াতে ঘাসফুলের লোগো এবং স্লোগান আগেই প্রকাশিত। গোয়া তৃণমূলের জন্য আলাদা টুইটার হ্যান্ডেলও ইতিমধ্যেই খোলা হয়েছে।

তাতে বলা হয়, ‘বিশ্বাসযোগ্যতাই আমাদের নেতা বাছাইয়ের মানদণ্ড। রাজ্যের মানুষের উন্নয়নের জন্য দায়বদ্ধ তৃণমূল কংগ্রেস। এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারবেন এমন নেতাই বেছে নেব।’ জোরকদমে গোয়ায় যে সংগঠন মজবুতিকরণের জন্য কর্মী নিযুক্তির কাজ চলছে তা এতেই স্পষ্ট।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here