দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পর্যাপ্ত টিকা না থাকার কারণে।ধনী এবং উন্নত দেশগুলিতে জোরকদমে টিকাকরণের কাজ চললেও অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে গরিব দেশগুলি।এই পরিস্থিতিতে কোভিড অতিমারির মোকাবিলায় গরিব দেশগুলিতে টিকা পাঠানোর জন্য উন্নত বিশ্বের কাছে আবেদন জানালেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র প্রধান৷

কোভ্যাক্স কর্মসূচীতে সারা বিশ্বে সমানভাবে কোভিডের ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। ভ্যাকসিন তৈরি করছে যে দেশগুলি তাদের থেকে ডোজ নিয়েই পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে গরিব ও পিছিয়ে পড়া দেশগুলিতে। কিন্তু সেই কোভ্যাক্স টিমের হাতেই এখন ভ্যাকসিন নেই। উৎপাদন কমেছে, বিভিন্ন দেশ তাদের চাহিদার ভিত্তিতে সরবরাহ বন্ধ করেছে, সব মিলিয়ে পরিস্থিতি শোচনীয় বলেই দাবি করেছেন হু প্রধান টেড্রস অ্যাডহানম ঘেব্রেইসাস। বিশ্বের ধনী ও উন্নয়নশীল দেশগুলির কাছে তাঁর কাতর আর্জি, “কোভ্যাক্সে টিকা পৌঁছে দিন। গরিব দেশগুলি কিচ্ছু পাচ্ছে না।”

হু প্রধানের বক্তব্য, আফ্রিকার দেশগুলিতে কোভিড ভয়ঙ্কর হয়ে দেখা দিয়েছে। সংক্রমণ গত সপ্তাহের থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। মৃত্যুহারও সাঙ্ঘাতিক। অথচ আফ্রিকার দেশগুলিতে এখনও কোভিড ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত ডোজ পৌঁছয়নি। টেড্রস বলছেন, “গরিব দেশগুলির হাতে ভ্যাকসিন দিলে তারা ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারবে না এমন ধারণা তৈরি হয়েছে। এই ধারণা একেবারেই ভুল। এর ফলে গরিব ও পিছিয়ে পড়া দেশগুলির কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছচ্ছেই না।”

টিকার বিতরণের জন্য বিশ্বের নানা দেশকে জুড়ে গ্লোবাল কমিটি বানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। এর নাম ‘কোভিড ভ্যাকসিন গ্লোবাল অ্যাকসেস’ তথা ‘কোভ্যাক্স’। এর উদ্দেশ্য হল চাহিদা অনুযায়ী সব দেশেই করোনার টিকা পৌঁছে দেওয়া, বিশেষত যে দেশগুলিতে সংক্রমণের হার ও মৃত্যু বেশি তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া। কোভ্যাক্সের নেতৃত্বে আছে হু। তাদের সঙ্গে ভ্যাকসিন বন্টন ব্যবস্থার তত্ত্বাবধান করবে কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ারডনেস ইনোভেশন ও আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা গাভি। ভারত, নরওয়ে, বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ারডনেস ইনোভেশন। অন্যদিকে, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, উদ্যোগপতিদের সাহায্যে গরিব ও পিছিয়ে পড়া দেশগুলিতে টিকা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছে গাভি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগ রেখেই কাজ করে গাভি।

হু জানাচ্ছে এই গ্লোবাল কমিটির কাজই হল টিকার সমবন্টনের দিকে খেয়াল রাখা। কারণ ইতিমধ্যেই টিকার ডোজ ‘বুক’ করে রাখতে বিশ্বের ধনী দেশগুলির মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা বলাবলি করছেন, টিকার ডোজের যদি সমবন্টন না হয়, তাহলে করোনা অতিমহামারী ঠেকানো অসম্ভব ব্যাপার। বিশ্বের পিছিয়ে পড়া দেশ এবং যেখানে সংক্রমণের হার বেশি সেখানেই টিকা আগে পৌঁছনো দরকার। কোন দেশ বেশি পয়সা দিচ্ছে বা কার ক্ষমতা বেশি, এই দেখে যদি টিকার বিতরণ শুরু হয় তাহলে মহামারী রোখা যাবে না। নিঃস্বার্থভাবে সংহতির পথে টিকার বিতরণ হওয়া দরকার, ক্ষমতা ও রাজনৈতিক স্বার্থ দেখে নয়।

হু-প্রধান বলছেন, কোভ্যাক্সে এখনও অবধি ১৩২টি দেশকে ৯ কোটির বেশি টিকার ডোজ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ভারত এখন টিকা সরবরাহ বন্ধ করেছে, তাই জোগান আগের থেকে কম। কোভ্যাক্সের হাতে কোভিশিল্ড, অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকা, জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিনের কোনও ডোজই নেই। তাই বিশ্বের টিকা উৎপাদনকারী দেশগুলিকে এগিয়ে আসার বার্তা দিয়েছেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here