দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ গত কয়েক মাসে রাজ্যের জঙ্গলমহলে একাধিক এমন ঘটনা ঘটেছে যাতে স্পষ্ট মাওবাদীদের আনাগোনা বাড়ছে। বুধবার সেই প্রসঙ্গ নিয়েই ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক সভায় ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, সব ইনফরমেশন ঠিকঠাক আসছে না কেন? কেন গ্রিন পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়ারদের ব্যবহার করছেন না?

এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বম্বে থেকে লোক ঢুকছে। টাকার বান্ডিল নিয়ে বহিরাগতরা আসছে। বিভিন্ন গেস্ট হাউসে থাকছে। কেন আপনাদের কাছে ইনফরমেশন নেই? আপনার এলাকায় কত গেস্ট হাউস, হোটেল আছে, সেখানে কারা কোথা থেকে আসছে, কত দিন থাকছে খোঁজ নিন!”

এখানেই থামেননি মমতা। এরপরই বলেন, কয়েকদিন আগে বেলপাহাড়িতে কিছু পলিটিক্যাল দলের লোকজন পুরনো কিছু মাওবাদীদের নিয়ে গ্রামে ঘুরে গেল, পোস্টার লাগিয়ে গেল! অনেক কষ্টে শান্তি ফেরানো হয়েছে। টাকার বান্ডিল ছড়িয়ে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা হলে আমি বরদাস্ত করব না।”

জঙ্গলমহলে মাওবাদী আনাগোনা ঠেকাতে রাজ্য সরকার যে তৎপর তা বোঝা গিয়েছিল গত ১০ সেপ্টেম্বর পুলিশের রদবদলে। কাউন্টার ইন্সারজেন্সি ফোর্স তথা সিআইএফ-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আইপিএস অজয় নন্দাকে।

সিআইএফ হল জঙ্গলমহলে নৈরাজ্যবাদীদের রুখতে রাজ্যের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কমান্ডো বাহিনী। যাদের বিশেষত্ব হচ্ছে গভীর জঙ্গলে নিখুঁত অপারেশন। মূলত মাওবাদী দমনেই এই বাহিনী তৈরি হয়েছিল।

তবে এদিনের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে অনেকেই বলছেন, জঙ্গলমহলে মাওবাদীরা যে নিশ্চিহ্ন হয়নি তা আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল। তাঁদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীই বলেছেন পুরনো মাওবাদীদের নিয়ে বহিরাগতরা ঘুরছে। অতএব মাওবাদীরা ছিলই। তারা নিষ্ক্রিয় থেকে ফের সক্রিয় হচ্ছে।

গত বছরই নকশালবাদ দমনে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির বৈঠক হয়েছিল নবান্নে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং উপস্থিত ছিলেন সেই বৈঠকে। ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহারের সঙ্গে বাংলার প্রতিনিধি হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী যোগ দিয়েছিলেন তাতে। সেখানেও রাজ্যের তরফে বলা হয়েছিল, রাজ্যের মাওবাদী বলে আর কিছু নেই।

রাজনৈতিক মহলের অনেকে বলছেন, পুলিশ যদি মাওবাদী গতিবিধি সংক্রান্ত খবর না পায় তাহলে বুঝতে হবে সরকারের ইন্টেলিজেন্স ফেল করছে। একুশের ভোটের আগে প্রশাসনের কাছে যা অত্যন্ত উদ্বেগের বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষকদের একাংশ।

“বালি পাচার বরদাস্ত নয়”

নদীমাতৃক বাংলায় নদী থেকে বেআইনিভাবে বালি তুলে পাচার করার অভিযোগ আজকের নয়। দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ জেলা থেকে প্রায় প্রতিদিনই বালি পাচারের অভিযোগ ওঠে। রীতিমতো সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে একে ঘিরে। আর অধিকাংশ জায়গায়তেই নাম জড়িয়েছে শাসক দলের নেতাদের। তাতে সাধারণ মানুষের কাছে তৃণমূল কংগ্রেসের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে বলেই আক্ষেপ করেন দলের অনেক প্রথম সারির নেতা। সামনে নির্বাচন। এই অবস্থায় যাতে কোনওভাবেই এই বেআইনি বালি পাচার না হয়, সেদিকে কড়া নজর রাখার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বুধবার ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই বৈঠক চলাকালীনই ওঠে এই বালি চুরি ও পাচারের অভিযোগ। আর বালি পাচারের অভিযোগ উঠতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে সঙ্গে জেলার পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের তিনি বলেন, কোনও মতেই এই বালি পাচার বরদাস্ত করা যাবে না। অভিযোগ উঠলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। যারা বালি পাচারের সঙ্গে যুক্ত তাদের গ্রেফতার করারও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

কিছুদিন আগেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতায় শিলাবতী নদী থেকে বেআইনি পালি তোলার অভিযোগ ওঠে। জানা যায়, রাতের অন্ধকারে লরি লরি বালি পাচার হয়ে যাচ্ছে রোজ। আর এই গোটা ঘটনায় শাসকদলের নেতারা অভিযোগ তুলছেন, প্রশাসনের বিরুদ্ধেই। তাঁদের বক্তব্য, প্রশাসনের একাংশ ও অসাধু ব্যবসায়ীদের যোগসাজসে এই কারবার চলছে। অভিযোগ জানানোর পরও কোনও ব্যবস্থা হচ্ছে না। এই বালি পাচারের ফলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। 

বগড়ি ডিহি থেকে খড়কুশমা পর্যন্ত সরকারি অনুমোদিত ৯টি বালি খাদান রয়েছে। তার বাইরেও বালি তোলার কাজ চলছে রমরমিয়ে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত খাদানে বালি ওঠে দিনের বেলা। আর রাতে ওঠে বেআইনি খাদান থেকে।

সম্প্রতি দামোদর নদের বুক থেকে অবৈধভাবে বালি তোলাকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বাঁকুড়ার রাঙামাটি অঞ্চলে। কেনেটির মানা গ্রাম সংলগ্ন দামোদরের বুক থেকে অবৈধভাবে বালি তুলতে আসা এক গাড়ির চালককে ব্যাপক মারধর করে গ্রামবাসীরা। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে যথেষ্ট উত্তেজনা ছড়ায় সোনামুখী থানার ডিহিপাড়া পঞ্চায়েতের রাঙামাটি কেনেটি মানা গ্রাম এলাকায়।

বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, ঝাড়গ্রামের একাধিক জায়গায় বারবার এই ধরনের ঘটনায় এর আগেও বিভিন্ন প্রশাসনিক বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে। ফের একবার তার অন্যথা হল না। কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here