দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ জেলার পুলিশ কর্তাদের ভিডিও কনফারেন্সে ডেকে নবান্ন থেকে কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বস্তুত, সোমবার মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ কর্তাদের বৈঠকে ডাকার সঙ্গে সঙ্গে আন্দাজ করা গিয়েছিল, সম্ভাব্য কারণটা কী! হলও তাই। রাজ্য নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎকর পুরকায়স্থ ও ডিজি বীরেন্দ্রকে পাশে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ সুপারদের পাখি পড়ানোর মতো বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, বাংলায় সাম্প্রদায়িক অশান্তি লাগানোর চেষ্টা হতে পারে। যে কোনও ছুতোনাতায় তা শুরু করার ষড়যন্ত্রও হতে পারে। তাই চোখ-কান সর্বদা খোলা রাখতে হবে।

এদিনের বৈঠক নিয়ে ১৬ আনা গোপনীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা করে নবান্ন। কনফারেন্স রুমের আশপাশে কোনও সাংবাদিককে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। বৈঠকের পরে কোনও সাংবাদিক বৈঠকও হয়নি। কিন্তু সূত্রের খবর, বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও চরমপন্থী সংগঠনকে সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া চলবে না। একান্তই তা যদি দিতে হয় তা হলে ঊর্ধ্বতন কর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাঁরা সবুজ সঙ্কেত দিলে তবেই অনুমতি দেওয়া যাবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় কড়া নজর রাখার ব্যাপারেও পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যাতে কোনও উস্কানি না ছড়ায় তার জন্য প্রতিনিয়ত মনিটরিং করার কথা বলা হয়েছে।

সূত্রের খবর, সুনির্দিষ্ট ভাবে কতগুলি বিষয়ে পুলিশ কর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

১। একটি সংগঠন সংখ্যালঘুদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে। এলাকায় টহলদারি বাড়িয়ে সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।
২। লোকাল থানার অনেক অফিসার রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগসাজশ করছেন। এসব চলবে না।
৩। ঝাড়খণ্ড, বিহার সীমান্ত দিয়ে লোকজন ঢুকে পড়ছে । এলাকায় অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। থানার কাছে আগাম খবর থাকছে না কেন?
৪। পুলিশ যেন আরও সোর্স (যে সূত্র মারফৎ খবর পায় পুলিশ) বাড়ানোর চেষ্টা করে। সে জন্য তহবিলের অভাব হবে না।
৫। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার পুলিশ আইনশৃঙ্খলা ঠিকমতো রাখতে পারছেনা। গন্ডগোল লেগে রয়েছে। সীমান্ত পেরিয়ে এসে অপরাধ করে চলে যাচ্ছে দুষ্কৃতীরা।

বাংলায় সাম্প্রদায়িক অশান্তি লাগানোর চেষ্টা যে হতে পারে সে ব্যাপারে লোকসভা ভোটের আগে থেকেই উদ্বেগে রয়েছে নবান্ন। সম্প্রতি তিনটি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে তৃণমূল তিনটিতেই জিতে যাওয়ার পর সেই আশঙ্কা আরও তীব্র হয়েছে শাসক দলে। কারণ, তৃণমূল নেতারা মনে করছেন, উপনির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর বিজেপি আরও অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে পারে। রাজনৈতিক জমি ফিরে পেতে তীব্র ধর্মীয় মেরুকরণের পথে হাঁটতে পারে তারা।

এক দিকে যখন গেরুয়া শিবির সক্রিয় হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। তেমনই বাংলায় ইদানীং মাথা তোলার চেষ্টা করছেন কট্টর মুসলিম সংগঠন তথা রাজনৈতিক দল মজলিস ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন তথা মিম। প্রকাশ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের বিজেপির বি-টিম বলেছেন। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি টাকার ব্যাগ দিয়ে মিমকে বাংলায় পাঠিয়েছে।

এ দিনের বৈঠকে মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপারের কাজকর্ম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। হায়দরাবাদের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত পুলিশ সুপারদের বলেছেন, মহিলাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আরও কড়া নজরদারি চালাতে হবে। নির্জন, নিরিবিলি এলাকাগুলিতে বেশি করে টহল দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here