দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনা পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি বলে সোচ্চার হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ বৈঠক শেষে এদিন নবান্নে মমতা বললেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে, তাঁদের কথা বলতে দেওয়া হয়নি সৌজন্য বিনিময়ও করেননি।

করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের দাবিদাওয়া নিয়ে উপস্থিত ছিলাম। কাউকে ১ সেকেন্ডের জন্য কথা বলতে দেওয়া হয়নি। পছন্দমতো জেলাশাসকদের সঙ্গে কথা বলেন। আর ভাষণ দেন। সুপার ফ্লপ মিটিং। করোনা নিয়ে এত ক্যাজুয়েল বৈঠক! আমরা অপমানিত হয়েছি। পুতুলের মতো বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ যা হয়েছে তা স্বৈরতন্ত্র’।

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ভ্যাকসিনের ডোজ নিয়ে একেক রকম কথা বলা হচ্ছে। এর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে? ভ্যাকসিন নেই বলে ব্যধান বাড়াচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ফর্মুলা মানলে দেশে ভ্যাকসিন দিতে ১০ বছর সময় লাগবে’। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আজ রাজ্যের অসম্মান হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন মমতা। রাজ্যবাসীর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, ‘যোগান থাকলে তিন মাসের মধ্যে সকলকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।’ মহামারীর সময় প্রতিহিংসার রাজনীতি হচ্ছে বলেও সরব হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতা আরও বলেছেন, ‘করোনা ভ্যাকসিন, অক্সিজেন, ওষুধ নিয়ে কোনও কথাই বললেনি। ভাষণে বলছেন করোনা নাকি কমে গিয়েছে। তাহলে এত মৃত্যু হচ্ছে কেন? আবার বলবে ঘণ্টা বাজালে করোনা কমবে! করোনা মোকাবিলায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ কেন্দ্র। ঔদ্ধত্য আর অহংকার চলছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে ধ্বংস করা হচ্ছে। কেন্দ্রের কারণেই গোটা দেশে করোনা বাড়ছে’।

অন্যদিকে, গঙ্গায় দেহ ভেসে আসার ঘটনায় এদিন মমতা বলেন, ‘গঙ্গার জলে করোনায় উত্তরপ্রদেশের নদীতে মৃতদের দেহ ভাসছে। উত্তরপ্রদেশে কেন কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হচ্ছে না? দেশকে দূষিত করা হচ্ছে’।

এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ৯টি রাজ্য ও একটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের ৫৪টি জেলার কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক ছিল বৃহস্পতিবার। তাতে বিভিন্ন রাজ্যের মতো বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকের শেষে মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকে যা বললেন —

আপনারা সবাই জানতেন আজকে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল মিটিং চলছিল। ১০টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এবং কিছু রাজ্যের ডিএমরা ছিলেন।
কিন্তু আমাদের সবচেয়ে খারাপ লাগল, মুখ্যমন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁদের কথা বলতে দেওয়া হল না।
মুখ্যমন্ত্রীদের ডেকে তাঁদের কথা বলতে দেওয়া হয়নি। সৌজন্য বিনিময় হয়নি। ক্যাজুয়াল-সুপারফ্লপ মিটিং।
কিছু বিজেপি শাসিত রাজ্যের ডিএমদের বলতে দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নিজের মতো বলে গেলেন। কী বললেন সেটাই পরিস্কার নয়।
আমরা ভেবেছিলাম প্রধানমন্ত্রীকে বলব ভ্যাকসিন দিন সকলকে। কিন্তু বলতে দিল না।
উনি বললেন নাকি করোনা কমে গেছে। কমে গেছে তো মরছে এত কীভাবে?
৮ দফায় ভোট করে বাংলার গ্রামে গ্রামে ঘুরে কোভিড বাড়িয়ে দিয়ে গেছে। এখনও ১০৫ কোম্পানি বাহিনী রয়েছে।
আমাদের খারাপ লাগল যে প্রধানমন্ত্রী এত ইনসিকিউরড ফিল করছে যে একটা কথা শুনলেন না মুখ্যমন্ত্রীদের।

আমরা ৩ কোটি ভ্যাকসিন চেয়েছিলাম। কিন্তু দিচ্ছে না। কমিয়ে দিচ্ছে ধাপে ধাপে। আর প্রধানমন্ত্রী মুখ লুকিয়ে পালিয়ে গেলেন।
এ মাসে ২৪ লাখ ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা ছিল। পেয়েছি মাত্র ১৩ লক্ষের মতো।
প্রধানমন্ত্রী মুখ লুকিয়ে পালিয়ে গেলেন। কোনও কথা বলতে দিলেন না।
নদীতে মৃতদেহ ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সারাদেশটাকে আজ বিষাক্ত করে দিয়েছে। আবার বলছে করোনা কমে গেছে।
বাংলার ইলেকশনের আগে বলেছিলেন ফ্রিতে ভ্যাকসিন দেবেন। তা না করে মুখ লুকিয়ে পালিয়ে গেলেন।
যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে বুলডোজ করা হচ্ছে।
আমাদের এখানে যেটুকু গ্রামে গ্রামে বেড়েছে তা আট দফা ভোটের জন্য।
ভোট পরবর্তী হিংসার নাম করে সেন্ট্রাল টিম পাঠিয়ে দিচ্ছে। কই উত্তরপ্রদেশ যে গঙ্গায় মৃতদেহ ভাসিয়ে দিচ্ছে, সেখানে তো সেন্ট্রাল টিম পাঠাচ্ছে না!

গায়ের জোরে কী করছে সে তো দেখতেই পাচ্ছেন। সংবিধানের রীতিনীতি সব নষ্ট করে দিচ্ছে। আজকে বোগাস মিটিং করলেন একটা।
আমি প্রধানমন্ত্রীকে বহুবার চিঠি দিয়েছি, ভ্যাকসিনের জন্য। ভ্যাকসিন কেনার জন্য এখনও পর্যন্ত ৬৪ কোটি টাকা দিয়েছি।
আমি কথা দিচ্ছি ভ্যাকসিন পেলে সবাইকে ৩ মাসের মধ্যে ভ্যাকসিন দিয়ে দেবো। আমি কথা দিয়েছিলাম বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেব বাংলার সব মানুষকে।
ব্ল্যাক ফাংগাস, আমাদের এখানেও ৪ জনের ধরা পড়েছে। আমরা যে বলব এসব আমাদের কথাই বলতে দিল না।
আমরা রাজ্য চালাচ্ছি আর দিল্লিতে বসে রাজা বলছেন সব ঠিক আছে সব ঠিক আছে।
৭০০ মেট্রিকটন অক্সিজেন দরকার হচ্ছে আর দিচ্ছে ৪৫০ মেট্রিকটন। আমাদের এখানের অক্সিজেন নিয়ে চলে যাচ্ছে।
উত্তরপ্রদেশ কে বলতে দিয়ে বলছে দারুণ কাজ করছেন। কই একবার তো বললেন না গঙ্গায় কেন মৃতদেহ ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে!
কলকাতার মেয়র সারাক্ষণ কাজ করে বেড়ায়, আমি জুডিশিয়ারি বিষয় নিয়ে কিছু বলব না। কিন্তু যে ফিল্ডে ও কাজ করত, আমরা অন্য ভাবে কাজ গুলো করাচ্ছি। একজনের বিকল্প তো আর একজন হয়না। অতিমারী না রুখে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে।

কোর্ট নিয়ে কোনও কথা জিজ্ঞেস করবেন না। জুডিসিয়াল ব্যাপারে বলব না। আমাদের আইনজীবীরা দেখছেন। যা করেছে ওরা কোনও ক্ষমা নেই।
তবে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে ও সরকারের তরফে বলছি, আমাদের ববি অনেক কাজ করে। ছেলেটা ট্রায়াল দিয়েছে ভ্যকাসিন। ববি সুব্রতদা সবাই কে আটকে রেখেছে। সঠিক বিচার পাবে। মানুষ যোগ্য জবাব দেবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here