দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ মঙ্গলবারের তুলনায় ফের সামান্য বাড়ল দৈনিক আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা । কিন্তু, ক্ষীণ আশার আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে দেশে। লাগাতার দু’দিন দৈনিক আক্রান্তের তুলনায় বেড়েছে সুস্থতার সংখ্যা। তবে কি কোভিড যুদ্ধে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা ভারতের? কী জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান?

বুধবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বুলেটিন অনুযায়ী, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৪২১ জন। একদিনে দেশে মৃত্যু হয়েছে ৪২০৫ জনের। এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড মুক্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৩৩৮ জন। যা আক্রান্তের সংখ্যাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। তবে কি সংক্রমণের গ্রাফ এবার নিম্নমুখী। যদিও এই নিয়ে দ্বিমত রয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। একদল চিকিৎসক মনে করছেন, সংক্রমণের শিখর এখনও ছোঁয়া বাকি রয়েছে। অপরদিকে, বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছে শিখর ছুঁয়ে এবার ধীরে ধীরে নামছে ভারত।

চিন্তায় রেখেছে দেশে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা। এই মুহূর্তে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৭ লাখ ৪ হাজার ৯৯ জন। ২ থেকে ৮ মের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে পজিটিভ হচ্ছেন প্রায় ২২.৭ শতাংশ মানুষ। গোটা দেশের ৩০৬টি জেলায় এই পজিটিভিটি রেট সবচেয়ে বেশি। প্রায় ২০ শতাংশ করোনা রোগী এই ৩০৬টি জেলায় ছড়িয়ে রয়েছেন। এর মধ্যে আবার ৬৭ শতাংশ এলাকায় টিকাকরণ অত্যন্ত ধীর গতিতে চলছে।অন্যদিকে ,তিনটি ছোঁয়াচে স্ট্রেন ডালপালা মেলছে দেশে

অন্যদিকে ,তিনটি ছোঁয়াচে স্ট্রেন ডালপালা মেলছে দেশে

করোনাভাইরাসের ডবল ভ্যারিয়ান্ট তথা ভারতীয় প্রজাতিও বিভাজিত হচ্ছে খুব দ্রুত। এই মিউট্যান্ট প্রজাতির আবার তিনটি স্ট্রেন শাখাপ্রশাখা ছড়াচ্ছে দেশে। জিনোম সিকুয়েন্স অর্থাৎ ভাইরাল স্ট্রেনের জিনের বিন্যাস সাজিয়ে এমনটাই বলেছেন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা।

করোনা রোগীদের নমুনা থেকে সার্স-কভ-২ ভাইরাসের ১২ হাজার ১৭৯টি স্ট্রেন আলাদা করে তাদের জিনোম সিকুয়েন্স করেছিলেন গবেষকরা। গ্লোবাল রেসপিরেটারি জিনোমিক ডেটা তথা ‘গ্লোবাল ইনিসিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটা’  (GISAID)-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে সেই রিপোর্ট ছাপা হয়েছে সম্প্রতি। গবেষকরা বলেছেন, কোভিডের ডবল ভ্যারিয়ান্ট তথা বি.১.৬১৭ প্রজাতি এখন একা নয়। এটিও দ্রুত গতিতে বিভাজিত হতে শুরু করেছে। অর্থাৎ এই প্রজাতির স্পাইক প্রোটিনের অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলো আবার নিজেদের মধ্যে আদলবদল করছে। নতুন করে বিন্যাস সাজিয়ে নিচ্ছে। এই বদলগুলো হচ্ছে খুব দ্রুত। র‍্যান্ডম জেনেটিক মিউটেশন তথা জিনের গঠনবিন্যাসে পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে বি.১.৬১৭ মিউট্যান্ট স্ট্রেন এখন বিভাজিত হয়ে আরও তিনটি লিনিয়েজ তৈরি করে ফেলেছে—বি.৬১৭.১, বি.১.৬১৭.২ ও বি.১.৬১৭.৩।

ভাইরোলজিস্টরা বলছেন, গত বছর মার্চ থেকে করোনার যে প্রজাতি ভারতে ছড়াতে শুরু করেছিল তা এখন অনেক বদলে গিয়েছে। সুপার-স্প্রেডার হয়ে উঠেছে, মানে অনেক দ্রুত মানুষের শরীরে ঢুকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। সার্স-কভ-২ হল আরএনএ (রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) ভাইরাস। এর শরীর যে প্রোটিন দিয়ে তৈরি তার মধ্যেই নিরন্তর বদল হচ্ছে। এই প্রোটিন আবার অ্যামাইনো অ্যাসিড দিয়ে সাজানো। ভাইরাস এই অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলোর কোড ইচ্ছামতো বদলে দিচ্ছে। কখনও একেবারে ডিলিট করে দিচ্ছে। এইভাবে বদলের একটা চেইন তৈরি হয়েছে। আর এই এই রূপ বদলের কারণেই নতুন নতুন প্রজাতির দেখা মিলতে শুরু করেছে।

বর্তমান সময় কোভিডের ডবল ভ্যারিয়ান্ট নিয়েই চিন্তা বেড়েছে। ব্রিটেন স্ট্রেনের (বি.১.১.৭)পরে এই প্রজাতিই এখন সবচেয়ে বেশি ছোঁয়াচে। করোনা ডবল ভ্যারিয়ান্ট নিয়ে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (হু)। গবেষকরা মনে করছেন, এই সংক্রামক প্রজাতিই কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী। ডবল ভ্যারিয়ান্ট মানে হল দুবার জিনের বিন্যাস বদলাচ্ছে, দুটি মিউটেশন হচ্ছে যাদের নাম–E484Q এবং  L452R। এই বদল মানে হল অ্যামাইনো অ্যাসিড তার একটা অবস্থানে বদলে গিয়ে অন্য অ্যামাইনো অ্যাসিডের কোড বসিয়ে দিচ্ছে। যেমন– E484Q মিউটেশন মানে হল ‘E’ অ্যামাইনো অ্যাসিড তার ৪৮৪ নম্বর অবস্থানে বদলে গিয়ে ‘Q’ কোড নিয়েছে। এইভাবে বদলটা চলতে থাকছে। ভাইরোলজিস্টরা বলছেন এখন দেখা যাচ্ছে ডবল ভ্যারিয়ান্টে তিন রকম বদল হয়েছে– E484Q, L452R ও P681R। তাছাড়াও স্পাইক প্রোটিনের ৬১৪ পজিশনে (অ্যাসপারেট থেকে গ্লাইসিন) দুটি বদল হচ্ছে– S-D614 ও S-G614। এই মিউটেশনের নাম D614G যেটি আগে দেখা গিয়েছিল তা এখন আবার ফিরে এসেছে। এই সব মিলিয়েই ডবল ভ্যারিয়ান্ট তার আরও শাখাপ্রশাখা তৈরি করে ফেলছে।

বি.৬১৭.১ নামক যে স্ট্রেনটা ছড়িয়েছে তার স্পাইক প্রোটিনে Q1071H মিউটেশন হয়েছে। বি.১.৬১৭.২ স্ট্রেন আবার আরও বেশি ছোঁয়াচে। এটির স্পাইক প্রোটিনে চার রকম বদল হচ্ছে–T19R, DEL157/158, T478K ও D950N। প্রতিটাতেই অ্যামাইনো অ্যাসিড একটা অবস্থান থেকে বদলে অন্য কোড নিচ্ছে। তৃতীয় বি.১.৬১৭.৩ স্ট্রেনেও তিনরকম বদল হচ্ছে।

গবেষকরা বলছেন, ডবল ভ্যারিয়ান্টের বি.১.৬১৭.২ স্ট্রেন ভারতের রাজ্যগুলিতে বেশি খুঁজে পাওয়া গেছে। এপ্রিল মাস থেকে এই স্ট্রেনের ছড়িয়ে পড়ার হার বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। ডবল ভ্যারিয়ান্টের এই স্ট্রেন সুপার-স্প্রেডার, মানুষের শরীরে দ্রুত ছড়াতে পারে। মহারাষ্ট্র, দিল্লি সহ দেশের অনেক রাজ্যেই এই স্ট্রেন ছড়িয়ে পড়েছে বলে আশঙ্কা করছেন গবেষকরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here