দেশের সময়: “দেশের সময় ” এর খবরের জেরে শনিবার সকাল থেকেই পেট্রাপোল সীমান্তে স্থল বন্দরে স্ক্রিনিং ক্যাম্প চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। পাশা পাশি বিএসএফ এর পক্ষ্ থেকেও এদিন একটি স্বাস্থ্য শিবিরের ব্যাবস্থা করা হয়৷ মুলত পেট্রাপোল সীমান্ত স্থল বন্দরে ভারত- বাংলাদেশের ট্রাক চালক সহ অন্যান্য গাড়ির ড্রাইভার ও খালাসিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় এদিন ।সেই সাথে কিভাবে করোনা সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে সেই বিষয়ে আরও বেশি করে সচেতনতার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়৷

বনগাঁ মহকুমা শাসক কাকলি মুখার্জী জানান জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভারত- বাংলাদেশ যাত্রীদেরও পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ এই স্ক্রিনিং ক্যাম্প থেকে দু’দেশের যাতায়াতকারীদের উপর নজরদারি রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

পেট্রাপোল ক্লিয়ারিংএন্ড স্টাফ ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন ট্রাক ড্রাইভার খালাসি সহ নিত্যযাত্রী সহ স্থানীয় মানুষের যাতায়াত এই স্থল বন্দরে প্রতিদিন সংখ্যায় অন্তত দশ হাজার। তার মধ্যে পাশপোর্ট যাত্রীর সংখ্যা গড়ে পাঁচ হাজার৷ এই পরিমাণ মানুষের করোনা সংক্রমণ পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনের তুলনায় স্বাস্থ্য কর্মী সংখ্যা বা পরিকাঠামো এখনও পর্যন্ত সে ভাবে প্রস্তূত নেই।যদিও জেলা স্বাস্থ্য দফতর শনিবার একটি মেডিকেল টিম সীমান্তে নিযুক্ত করেছে৷

বনগাঁ পুরসভার পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য বলেন করোনা নিয়ে তেমন ভয় বা আতঙ্কের প্রয়োজন নেই৷ জেলা স্বাস্থ্য দফতর সবসময় নজরে রেখেছে ,পুরসভা এবং ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েতের স্বাস্থ্য বিভাগ ও কর্মীরাও পেট্রাপোল সীমান্তে সব সময় করোনা সচেতনার বিষয়ে নিযুক্ত রয়েছেন।

অন্য দিকে ভুটানে মার্কিন পর্যটকের শরীরের করোনাভাইরাসের সন্ধান পাওয়ার পর থেকেই সতর্ক ভুটান লাগোয়া আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসন। আজ থেকেই ভুটান সীমান্তের জয়গাঁ ও কালিখোলা এলাকায় স্ক্রিনিং ক্যাম্প চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। এই স্ক্রিনিং ক্যাম্প থেকে ভুটানে যাতায়াতকারীদের উপর নজরদারি রাখা হবে বলে জানানো হয়েছে।

আলিপুরদুয়ার শহর লাগোয়া পুরো আয়ুষ হাসপাতালকেই করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য আলাদা কর ব্যবস্থা শুক্রবারই করে দিয়েছে আলিপুরদুয়ার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। শনিবারের মধ্যে এই হাসপাতালের অন্তর্বিভাগে ভর্তি সব রোগীদের অন্যত্র সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার ফালাকাটা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালকে নোডাল হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়। সেখানে তিরিশটি শয্যা নিয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছিল। আলিপুরদুয়ার জেলা সদর হাসপাতালে দশটি শয্যা নিয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে করোনাভাইরাসের ব্যাপারে সকলকে সচেতন থাকতে বলা হয়েছে।

আজ বিকেল তিনটেয় আলিপুরদুয়ার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরে জরুরি বৈঠক ডেকেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। এই বৈঠকে এসএসবি, বিএসএফ, বায়ুসেনা, রেল, হাসপাতাল, চাবাগান ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

প্রশাসন সবরকম ভাবে প্রস্তুত থাকলেও আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই বলে জানিয়েছেন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। আলিপুরদুয়ার জেলার ডেপুটি সিএমওএইচ (২) সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, “জেলা স্বাস্থ্য দফতর গুরুত্ব সহকারে সব সতর্কতামূলক ব্যাবস্থা নিচ্ছে। আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। শুধু সতর্ক থাকতে হবে।

এক সঙ্গে বেশি মানুষ এক জায়গায় জড়ো না হওয়াই ভালো। দোলের উৎসব এই বছর স্থগিত রাখুন। এখনও পর্যন্ত আলিপুরদুয়ার জেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে কোনও মানুষের খোঁজ পাওয়া যায়নি। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সব রকম পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে প্রস্তুত রয়েছে।”


দেশের বাইরে থেকে অন্তত পাঁচ জন সম্প্রতি আলিপুরদুয়ারে নিজের বাড়িতে ফিরেছেন। এই পাঁচজনকে বাড়িতেই কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে অর্থাৎ ছোঁয়াচে রোগ হওয়ায় আপাতত তাঁরা সকলের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলবেন। তাঁদের কারও শরীরে অবশ্য করোনা ভাইরাস আক্রমণের কোনও উপসর্গ এপর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাঁদের স্বাস্থ্য নিয়মিত ভাবে পরীক্ষা করছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

ভুটানে ৭৬ বছর বয়সী যে মার্কিন নাগরিকের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে তিনি ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেছেন। ২ মার্চ গুয়াহাটি থেকে ভুটানের পারো বিমানবন্দরে তিনি নামার পরেও তাঁর শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি তবে থিম্পুর ফ্লু ক্লিনিকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে সেখানেই তাঁকে আলাদা করে রাখা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here