সম্পাদকীয়ঃ–ভোটের বাদ্যি বাজতেই এ রাজ্যের ভোট চিত্রে নতুন মাত্রা যোগ হতে শুরু করে দিয়েছে। প্রথমে যেমন মনে করা হয়েছিল যে এ রাজ্যের শাসক দল একতরফা সব আসনের দখল নিয়ে নিতে পারে,সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ কিন্তু তেমনটা বলছে না।
এই কিছুদিন আগেই বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব একটা গোপন সমীক্ষায় আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছিল যে এ রাজ্যে বিজেপির আসন শূন্যে নেমে আসতে পারে।রাজ্য বিজেপি নেতারাও একেবারে মনমরা হয়ে পড়েছিলেন,কিন্তু আজকের পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গেছে।ভোটের বাদ্যি বাজতেই দেখা যাচ্ছে রাজ্যের শাসক শিবিরে ভাঙন ধরতে শুরু করেছে।
কেউ কেউ বলতেই পারেন তৃণমূলে গোষ্ঠী-কোন্দলের জেরে দল ছাড়া তো লেগেই ছিল,তাতে ভোটে কী আর হেরফের হবে!না এবারের বিষয়টা গতানুগতিক নয়।তৃণমূলের অন্দরে যে চোড়া স্রোত বইছে তা কিন্তু বেশ ভয়ের ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছে।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেষ্টা করেও তা সামাল দিতে পারছেন না।এখনও পর্যন্ত যা দেখা গেল তা তো মমতার আমলে কখোন দেখা যায় নি।
কেউ কী ভাবতে পারে তৃণমূলেরই কোন বিধায়ক খোদ নবান্নে গিয়ে বলে আসছেন আমাকে প্রার্থী না করলে আমি কিন্তু দলে থাকবো না,এমনকী কখনও হয়েছে যে মমতা কাউকে মন্ত্রী করে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও বাগে আনতে পারলেন না?না এর আগে হয় নি,এবার হল,তৃণমূলের দাপুটে নেতা অর্জুন সিং মমতার মুখের উপর বলে দিলেন মন্ত্রীত্বের লালিপপ দিয়ে কাজ হবে না,যা করার এখনই করতে হবে,না হলে আমি দলে থেকে সাবোতাজ করবো না তবে দলের বাইরে গিয়ে দীনেশ ত্রীবেদীকে হারাতে যা যা করার তাই করবো।হাঁ,তৃণমূল সুপ্রিমোর মুখের উপর কেউ এই প্রথম কথাটা বলার সাহস দেখালেন।
আর ফল সুদুর প্রসারি হতে পারে।অর্জুন সিং ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের অনেকটা অংশ জুড়ে সংগঠন করেন,তাঁর অনুগামিরা একে একে এবার দল বদল করবেন বলেই খবর।আর এর ফলে পুরসভা গুলোতে ক্ষমতার বদল হওয়া স্বাভাবিক।ওদিকে ভারতী ঘোষ,শঙ্কু পন্ডা যারা তৃণমূলের একসময়কার ঘরের লোক ছিলেন তারা কোন খেলা খেলবেন কেউ জানে না,শুরু হয়ে গেছে তৃণমূল স্তরে নানা চোড়া স্রোত।দেশভক্তি,ধর্ম,মতুয়া সম্প্রদায়,আদিবাসী সম্প্রদায় কেউ কিন্তু শাসক দলকে খুব স্বস্তি দিতে পারছে না।
এর মধ্যে আবার নির্বাচন কমিশন রাজ্যে ভোট করা নিয়ে প্রশাসনিক কড়া ব্যবস্থা নিতে বদ্ধ পরিকর।সবমিলিয়ে লড়াইটা আর একতরফা হবে বলে মনে হচ্ছে না।সক্রিয় হয়ে গেছেন তিনি সেই মুকুল রায়,যাঁর বক্তব্য উইকেটে টিঁকে থাকলে রান আসবে,রান আসার ইঙ্গিত পেয়েই কী এবার বিজেপি শিবিরে ভিড়তে শুরু করলেন তৃণমূলিরা,এখনও চিত্রটা পরিষ্কার না হলেও আভাস একটা মিলছে।সবমিলিয়ে এ রাজ্যের ভোট চিত্রে নতুন মাত্রা য়োগ হয়ে গেছে তা বলাই যায়।