এ ভরত ভূষণ বাবু  

সরকার বিগত ২০১৫র ৭ই নভেম্বর একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। আমাদের প্রতিরক্ষা বাজেটের উপর বিপুল আর্থিক বোঝা সত্ত্বেও প্রাক্তণ সেনানীদের দীর্ঘদীনের দাবি পূরণ করে ‘এক পদ এক পেনশন’ ব্যবস্থা  (ওআরওপি) চালু  করা হয় । ইতিমধ্যেই এর ৫ বছর পেরিয়ে গেছে । প্রতিরক্ষা বাহিনীর লক্ষ লক্ষ পেনশেনভোগী এবং তাঁদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিরা ওআরওপি-র সুবিধা ভোগ করছেন। কিভাবে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয় তা নিয়ে পর্যালোচনার এটিই সবথেকে আদর্শ সময়। 


এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে প্রাক্তন সেনানীদের কল্যাণের বিষয়টি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারের অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে। ২০১৪-১৫ সালের অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করার সময় তদানিন্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের জন্য এক পদ এক পেনশন ব্যবস্থা নীতিগতভাবে স্বীকার করে নেন। ষোড়শ লোকসভা গঠনের পরে রাষ্ট্রপতি সংসদের উভয় কক্ষে এই বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন এবং ২০১৪র ১০ই জুলাই নিয়মিত বাজেট পেশের সময় এই বিষয়টি স্থান পেয়েছিল।  


প্রতিরক্ষা পেনশনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন জটিল বিষয় ও এর  ব্যাপকতার দিকটি বিবেচনা করে সরকার ওআরওপি বাস্তবায়নের আগে বিশেষজ্ঞ ও প্রাক্তণ সেনাকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা চালায়। ওআরওপি-র মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীতে যারা একটি নির্দিষ্ট পদে সম পরিমাণ সময়ে কাজ করেছেন তাদের জন্য অভিন্ন পেনশন চালু করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তাঁদের অবসর গ্রহণের দিনটি বিবেচনার মধ্যে আনা হয়না। আর তাই পর্যায়ক্রমে যারা সদ্য অবসর গ্রহণ করেছেন এবং অতীতে যারা অবসর গ্রহণ করেছিলেন তাঁদের পেনশনের পরিমাণের পার্থক্য ক্রমশ দূর করা হয়েছে।  
বহু বছর ধরে অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীরা সম পরিমাণ পেনশেনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এরফলে নতুন পেনশন প্রাপকদের সম পরিমাণ অর্থ যাঁরা একই পদে সম পরিমাণ সময়ে কাজ করেছেন তাঁরাও পাচ্ছেন।

প্রাক্তণ সেনানীদের সমস্যার বিষয়গুলি পর্যালোচনা করতে ১৯৮৪ সালে কে.পি. সিং দেও কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটি প্রাক্তন সেনাকর্মীদের পুনর্বাসন এবং কল্যাণের বিভিন্ন বিষয়ে সরকারকে অতিরিক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছিল। সেই সময় অবশ্য পেনশেনের বিষয়টি যুক্ত করা হয়নি। পরবর্তীকালে পেনশন সংক্রান্ত বিষয় উত্থাপনের পর কমিটি সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছিল নীতিগতভাবে এক পদ এক পেনশেনের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।

এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য, সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টের বিচারপতিদের পেনশন দেওয়ার ক্ষেত্রে এই নিয়মই প্রযোজ্য। এরপর ২০০৯ এবং ২০১২ সালে ক্যাবিনেট সচিবের  নেতৃত্বে দুটি কমিটি গঠন করা হয়। এই দুই কমিটিই  প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে যুক্ত কর্মীদের পেনশনের বিষয়টি বিবেচনা করেছে।

শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালে সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনার পর এক পদ এক পেনশনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আর এভাবেই প্রাক্তন সেনানীদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করা হয়েছে। বিগত ৫ বছর ধরে এই সিদ্ধান্তের ফলে লক্ষ লক্ষ অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী উপকৃত হয়েছেন।


৫ই নভেম্বরের হিসেব অনুসারে ২০ লক্ষ ৬০ হাজার ২২২ জন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মচারী বা যারা ফ্যামিলি পেনশন পান তারা ওআরওপি বাস্তবায়নের ফলে ১০৭৯৫.৪ কোটি টাকা পেয়েছেন। এরমধ্যে নেপালে বসবাসকারী পেনশনারদের ৩৪৮.৫৬ কোটি টাকাও রয়েছে। এক পদ এক পেনশেন কার্যকর করার ফলে ৭১২৩.৩৮ কোটি টাকা খরচ হয়। ২০১৪র পয়লা জুলাই থেকে এ পর্যন্ত এর জন্য প্রায় ৪২৭৪০.২৮ কোটি টাকা সরকারের ব্যয় হয়েছে।  
ওআরওপি সুবিধাভোগীরা সপ্তম সিপিসি-র সুবিধাও পেয়েছেন। যদিও এখনও বেশকিছু সমস্যার সমাধান হয়নি, কিন্তু ওআরওপি কার্যকর হওয়ার ফলে দেশের লক্ষ লক্ষ অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনীর জীবনে ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। 

* লেখক প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here