রতন সিনহা

শীত এলেই বাঙালির মনে পিঠে-পুলি খাবারের পাশাপাশি অন্য যে জিনিসটা মনে প্রভাব ফেলে তা হলো ঘর ছেড়ে দূরে কোথাও বেড়িয়ে পরবার ইচ্ছে। শীত আগমনের সময় প্রাকৃতিক রুক্ষতা ও শুষ্কতার বৈশিষ্ট্যে আমাদের জীবন জড়িয়ে ধরবার সাথে সাথে ছুটির বার্তা নিয়ে আসে। এছাড়া ভৌগলিক কারণে আমাদের দেশে এই ঋতুতে আবহাওয়া বেড়ানোর জন্য বেশ উপযোগী থাকে তাই অবসাদ কে বিদায় দিতে শীতে ভ্রমণের জুড়ি মেলা ভার। এ বছর তো কোডিড পরিস্থিতে ঘরবন্দি থাকতে থাকতে আরও বেশি মন খারাপ সকলের,তাই মনটাকে সতেজ করতে এবার শীতে বেড়িয়ে পড়ুন কাছে-দূরে কোথাও৷কিন্তু সবজায়গা শীতকালে ঘুরে বেড়াবার জন্য সমান উপযোগী নয়, সেই সাথে শীতে ভ্রমণের জন্য শরীরের পাশাপাশি বিভিন্ন আনুষঙ্গিক বিষয়ের দিকে একটু বাড়তি খেয়াল রাখতে হয়। কম্বল আর গরম চায়ের উষ্ণতা ছেড়ে শীতকালে ভ্রমণ করতে চাইলে যেসকল বিষয়ের উপর খেয়াল রাখতে হবে চলুন জেনে নেয়া যাক সেই সকল বিষয়ের বিস্তারিত।

উপযুক্ত পোশাক:

হিম হিম ঠান্ডায় ঘরের আরামদায়ক পরিবেশ ছেড়ে বের হতে গেলেই সবার প্রথমে দরকার যথাযথ শীতের পোশাক। কোথায় বেড়াতে যাচ্ছেন তার উপর এই পোশাকের মান ও পরিমাণ অনেকাংশে নির্ভর করে। শীতে বেড়ানোর জন্য পাহাড় সবচেয়ে উপযুক্ত। আর পাহাড়ি এলাকায় অন্যান্য জায়গার তুলনায় ঠাণ্ডাটাও একটু বেশি জাঁকিয়ে বসে। তাই পাহাড়ে বা তীব্র শীতের জায়গায় ঘুরতে গেলে কম ওজনের গরম কাপড় নিন। সমুদ্র বা কম ঠান্ডার জায়গায় গেলে মোটামোটি মানের শীতের পোশাকেই কাজ চলে যাবে। ব্যাকপ্যাকের ওজন না বাড়িয়ে সর্বাবস্থায় উপযুক্ত একটি গরমের কাপড় নেবার চেষ্টা করুন। মাফলার, মোজা, হাত মোজা, টুপি দুইটি করে নিতে পারেন কারণ এগুলো হারিয়ে যায় দ্রুত। জুতোর ব্যাপারে সাধারণ স্যান্ডেল বাদ দিয়ে কেডস, বুট বা স্নিকারস নিলে শীতের ধুলো ও ঠান্ডা থেকে সহজে পা রক্ষা করতে পারবেন। * সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল মাস্ক* সবকিছু নেওয়ার আগে এটা নিতে ভুলবেননা, কারণ এখন করোনা পরিস্থিতে মাস্ক আপনাকে দেবে প্রকৃত সুরক্ষা৷

প্রসাধনী:

শীতে আবহাওয়া ঘুরে বেড়াবার জন্য যথেষ্ট অনুকূলে থাকলেও ত্বকের উপর দিয়ে অন্যান্য ঋতুর মতোই প্রকৃতির নিরব অত্যাচার চলতে থাকে। সবসময় সাথে ছোট একটা পেট্রোলিয়াম জেলি কিংবা পোর্টেবল ছোট পাত্রে ক্রিম, লোশন, লিপবাম রাখা খুবই জরুরী। আর শীতের রোদ খুব আরামদায়ক লাগলেও তা ত্বকের জন্য সমান ক্ষতিকর। তাই রোদে বের হলে সবসময় সানগ্লাস ও সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

খোঁজখবর:

বেড়াতে যাওয়ার আগে গন্তব্যস্থল সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্য জেনে নেওয়াটা খুবই জরুরী। শীতকালে ভ্রমণে ক্ষেত্রে তো কথাই নেই কারণ একেক জায়গায় শীতের প্রকোপ একেক রকম। তাই ঘুরতে বের হবার আগে অবশ্যই ভালভাবে সেখানকার আবহাওয়ার খোঁজখবর নিয়ে বের হতে হবে। এই সামান্য খোঁজখবর নেওয়া প্যাকিং বা অন্যান্য প্রস্তুতির ছোটখাটো ঝামেলা থেকে বাঁচিয়ে দিবে।

বুকিং

শীতকাল আসে ছুটির আমেজ নিয়ে তাই এই সময় সবাই সাধারণত বন্ধুবান্ধব, পরিবার পরিজন নিয়েই ঘুরতে ভালবাসে। আমাদের দেশে যেকোন জায়গায় ভ্রমণের পিক সিজন বলতে শীতের সময়কেই বোঝায়। তাই এ সময়ে কোন দূরের জনপ্রিয় জায়গায় ঘুরতে যাবার পরিকল্পনা থাকলে আগে থেকে যানবাহন ও হোটেলের টিকিট বুকিং করে রাখাটা বুদ্ধিমানের কাজ। তা না হলে অনেকক্ষেত্রে পকেট থেকে অতিরিক্ত টাকা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ সেই সঙ্গে থাকা-খাওয়া ও যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে অনেক বেগ পোহাতে হয়।

ওষুধ

একা বা দল বেঁধে যেভাবেই ঘুরতে বের হন না কেন ভ্রমণের সময় সামান্য মাথাব্যাথাই বেড়ানোর আনন্দ মাটি করতে যথেষ্ট। শীতকাল ঠাণ্ডা, জ্বর, কাশি সহ নানা অসুখ নিয়ে এই ধরাধামে আসে তাই এসময়, ভ্রমণে সঙ্গে কাঁটা ছেড়ার জন্য ফার্স্ট এইডের পাশাপাশি ঠান্ডা, কাশি, মাথাব্যথা, পেট খারাপ ও জ্বরের ওষুধ রাখা খুব জরুরী।

খাবার

অতিরিক্ত তেল বা মশলা দেওয়া খাবার না খেয়ে একটু স্মার্টলি খাবার নির্বাচন করলে শীতে যেমন ভ্রমণে আনন্দ পাওয়া যায় তেমনি শরীরের উপর দিয়ে অত্যাচার খানিকটা কম হয়। শীতকালে বেড়াতে গিয়ে এমন খাবার খাওয়া উচিত যা শরীরকে গরম রাখবে এবং জলের চাহিদা পূরণ করবে। চকলেট, সুপ, স্টু, হট চকলেট ঠান্ডায় শরীরকে আরাম দেয়। দেশের বাইরে যেখানে তীব্র শীত সেখানে ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।

শীতকালে ভ্রমণের আরো কিছু পরামর্শ

  • শীতকাল ট্রেকিংয়ের জন্য আদর্শ সময়। শুষ্ক আবহাওয়া ও ট্রেকিংয়ের অনেক রাস্তাকে এ সময় চলাচলের উপযোগী করে তোলে। ফলে ভ্রমণের নতুন নতুন জায়গা আবিষ্কৃত হয়। কিন্তু দুর্গম জায়গায় ট্রেকিংয়ের ক্ষেত্রে শীতকালে অবশ্যই সবসময় সাথে হালকা ওজনের মালপত্র, আগুন জ্বালাবার ব্যবস্থা, শীত প্রতিরোধক স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে যাওয়া উচিত।
  • শীতকালে কুয়াশার আধিক্যের জন্য রাত এবং ভোরে রাস্তায় বের হওয়াটা সবসময় নিরাপদ থাকে না। দূরপাল্লার ভ্রমণের ক্ষেত্রে শীতের রাত ও খুব ভোরের সময় এড়িয়ে যাওয়া ভাল।
  • জলেরর পোর্টেবল বোতল সাথে রাখুন। শীতে জল কম খাওয়া হয় কিন্তু জলের অভাবে শরীর ভ্রমণের মাঝে যেকোন সময় খারাপ করতে পারে। পোর্টেবল বোতল থাকলে হোটেল বা বাইরে নির্ভরযোগ্য জায়গা থেকে যেকোন সময় রিফিল করে নেওয়া যাবে।
  • শীতকালে ভ্রমণের সময় সাথে শিশু থাকলে তার দিকে বাড়তি খেয়াল রাখা উচিত। সবসময় শিশুদের জামাকাপড় বড়দের তুলনায় একটু বেশী নেওয়া উচিত এবং ঠাণ্ডা আবহাওয়াতে শিশুদের খাপ খাইয়ে নেবার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
  • দেশের বাইরে তীব্র শীতের কোন জায়গায় বেড়াতে গেলে যাবার আগে ফ্লু শট দিয়ে যাওয়াটা খুব দরকার। কারণ অহরহই সেখানে ঠান্ডার এলার্জি থেকে জ্বর, কাশি সহ নানান অসুখে বেড়ানোটা বাতিল হয়ে যেতে পারে।

এবার ক্যামেরা আর স্মার্ট ফোন নিয়ে বেড়িয়ে পড়ুন মনের মতো জায়গা পছন্দ করে৷ছবি তুলুন এপ্রকৃতি বা মনে যা চায়, ঘরে ফিরে এসে লিখুন আপনাদের ভ্রমণ কাহিনী, আর ছবি সহ পাঠিয়ে দিন “দেশের সময়” এর দফতরে৷মনোনিত লেখা ছাপা হবে “দেশের সময়” পত্রিকায়৷ লেখা পাঠান এই ঠিকানায়:deshersamay@gmail.com সঙ্গে আপনার ফোন নং অবশ্যই যুক্ত করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here