পিয়ালী মুখার্জী, কলকাতা: সাংবাদিকতা এমন একটা পেশা যার থেকে মৃত্যু ছাড়া কোনো মুহূর্তেই ছুটি মেলে না। তার জ্বলন্ত প্রমান রেখে গেলেন অতি পরিচিত জনপ্রিয় এক সাংবাদিক হিলটন ঘোষ। একজন সাংবাদিক হয়ে আর একজন এমন সাংবাদিকের মৃত্যুর  পরবর্তী খবর করা অত্যন্ত দুঃখজনক।

হিলটন ঘোষ এমন একজন ব্যক্তিত্ব যাকে সংবাদ মহল থেকে পাঠক দর্শক সকলের কাছে অতি পরিচিত একটা নাম। উত্তরপ্রদেশের পাহাড় থেকে ফেরার সময় সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিলো সেই সদাহাস্য মিশুকে তুখোড় সংবাদিককে। পাহাড়কে ভালোবাসে সেখানেই বিলীন হলেন। দেখা যাবে না আর তার তোলা ছবি, যে ছবি কথা বলতো, শোনা যাবে না বুম হাতে দাঁড়িয়ে তার কণ্ঠস্বর। প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রাজনৈতিক সামাজিক ঘটনা তিনি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। সব ঘটনায় সবজায়গায় তিনি পৌঁছে যেতেন অকূতভয়ে। অপূরণীয় ক্ষতি বাংলার সংবাদ মহলে, এবং অবশ্যই তার পরিবারের। কিছুদিন আগেই আমরা হারিয়েছি রয়টার্স এর আর এক তরুণ সংবাদিক দানিশ দিদ্দিকী কে আফগানিস্তানের ভূমিতে। এবার উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ে দুর্ঘটনায় হারালাম বাংলার জনপ্রিয় সংবাদিক হিলটন ঘোষ কে।

গত ১৭ই অক্টোবর স্ত্রী ও কন্যার সাথে নিজের গাড়িতে পাহাড় ট্রেকের উদেশ্য রওনা দিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশে। গাড়ি চালাচ্ছিলেন তিনি নিজেই। পেশা সাংবাদিকতা হলেও নেশা ছিল ট্রেকিং, সাথে এডভেঞ্চার স্পোর্ট। উত্তরাখণ্ডের ট্রেকিং সেরে দিল্লি-লখনউ রোড ধরে ফেরার পথে বরেলির কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তাঁদের গাড়ি। হিলটন কে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের আঘাত ততটা গুরুতর নয় বলে জানা গিয়েছে। দুঃসংবাদ বাড়িতে পৌঁছানো মাত্র তাঁর এক দাদা সহ তিনজন রওনা দিয়েছেন লখনৌর উদ্দেশ্যে।

তাঁর কর্মজগতের সহকর্মী থেকে বন্ধু সকলে স্বাভাবিক ভাবেই গভীর মর্মাহত তাঁর আকস্মিক প্রয়ানে। আনন্দবাজার থেকে এবেলায় বেশ কিছু দিন চিত্রসাংবাদিক হিসাবে কাজ করেছিলেন। বর্তমানে হাওড়া জেলার গ্রামীন অঞ্চলে চ্যানেল নাইনের হয়ে সাংবাদিকতা করতেন। তিনি সংবাদিক মহলে জনপ্রিয় ছিলেন সদালাপী সহসী মানুষ হিসাবে। দেশের সময়ের সম্পাদক পার্থ সারথি নন্দী স্মৃতি চারণ করে বললেন “তাঁর সাথে মাঝে মাঝেই কথা হতো। হিলটন ছবির জগতে ডুবে থাকতেন, নতুন ক্যামেরা, ছবি নিয়ে কথা বলতে ভালোবাসতেন।আনন্দবাজার ও পরে এবেলাতে এক সঙ্গে কাজ করার সুবাদে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে, অত্যন্ত ভালো চিত্র সংবাদিক ও মানুষ কে আমরা হারালাম, যে ক্ষতি অপূরণীয়। আকস্মিক এই ঘটনা আমার ওপর বড় ধরণের প্রভাব ফেলেছে, আশোকদার (মজুমদার)ফেসবুক পোস্ট এবং জয়ন্তদার পোস্ট থেকে এই মর্মান্তিক ঘটনা জানতে পারি। পরে বিশিষ্ট চিত্র সাংবাদিক ধ্রুব দা(হালদার) আমাকে এই খবরটি দেন “৷

 হিলটনের বর্তমান কর্মক্ষেতের প্রধান ও সম্পাদক অমৃতাংশু ভট্টাচার্য জানালেন  এমন একজন মানুষ কে হারালাম যিনি ছুটিতে থেকেও, বেড়াতে গিয়েও তাঁর কর্তব্য ভোলেন না, বুম টা তিনি ব্যাগ এ করে নিয়ে গিয়েছিলেন ট্রেকিং এ। সেখানে থেকে তিনি খবর পাঠিয়েছেন তাঁর চ্যানেলে। হিলটনের মতো বিরল মানুষকে হারানো সংবাদ মাধ্যম তথা তাদের বেক্তিগত ক্ষতি। তাঁর জায়গা কখনো পূরণ হবে না। যারা দুর্যোগে উত্তরাখণ্ডে আটকে পড়েছিলেন এমন অনেক মানুষকে কে হিলটন উদ্ধার করেছিলেন, কিন্তু নিজেকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছাতে পারলেন না। হিলটন আমাদের সকলের কাছে দৃষ্টান্ত।


জেলা কো অর্ডিনেটর অধীর রায় বললেন ঘুরতে গিয়ে যেখানে ফোনের নেটওয়ার্ক পেতেন সেখান থেকে হিলটন তাকে ফোন করতেন রোজ। খবর পাঠাতেন সেখানের দুর্যোগের। ওই পরিস্থিতিতে, তিনি হিলটনকে সাবধানে থাকার কথা বলেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন ধস নেমেছে তাঁর ফিরে এসেছেন, কালী পুজোর পরেই তিনি আবার কাজে যোগ দেবেন। অধীর রাযের আফসোস আর হিলটন ফোন করবেন না, আর কাজে যোগ দেবেন না। উলবেড়িয়ার প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে। রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরিমন্ত্রী পুলক রায় হিলটনের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।

চিএ সাংবাদিকের বড় প্রিয় পাহাড়ই কেড়ে নিল সাংবাদিকের প্রাণ। বৃষ্টির জেরে পাহাড়ের ধসে বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল উত্তরাখন্ড। মারা যান বেশ কিছু পর্যটক , ট্রেকার। অনেকেই বাংলার নাগরিক ছিলেন। সেই তালিকায় নয়া সংযোজন আমাদের সকলের প্রিয় সাংবাদিক বন্ধু হিল্টন ঘোষ৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here