দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ হুগলির পুরশুড়ার সভায় বেজায় চটলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন মমতার সভায় ইন্টারনেট বিভ্রাট ঘটে। প্রায় ১০ মিনিট ইন্টারনেট ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছে। এই সময় কাজ করছিল না মাইক। যড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলল তৃণমূল কংগ্রেস। মঞ্চ থেকেই ফোন করে ইন্টারনেটের সার্ভিস প্রোভাইডারকে ভর্ৎসনা করেন মমতা। এ ঘটনার জেরে সভা শুরুতে খানিকটা বিলম্ব হয়।

এদিন পুরশুড়ার সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সব ধর্মের মানুষ হুগলিতে থাকেন। এখানে বন্যা হলে আমিই ছুটে আসি। বন্যা হত, কেউ দেখত না আগে। ২-৩ বছরের মধ্যে বন্যা রোধে ব্যবস্থা করা হবে’।

পুরশুড়ার সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘আমি আপনাদের পাহারাদার। আমি নেতা নই, বুথের এক কর্মী। আপনাদের পাশে আমাকে পাবেন। জুন মাস পর্যন্ত সকলে বিনামূল্যে রেশন পাবেন। আগামী দিনেও পাবেন বিনামূল্যে। আমরাই ছিলাম, আমরাই থাকব’। উল্লেখ্য, ভোটের মুখে যেভাবে নিজেকে নেতা না বলে বুথস্তরের কর্মী হিসেবে জনতার উদ্দেশে বার্তা দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো, তা রাজনৈতিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল।

এদিনও ফের বিজেপি-কে নিশানা করেছেন মমতা। বিজেপি-কে আক্রমণ করে এদিন তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, ‘বিজেপি এখন বহিরাগত জ্বালাও পার্টি। সব ফেক ভিডিও ছড়াচ্ছে। আমি জেলে থাকতে রাজি আছি, কিন্তু বিজেপি-র ঘরে যাব না। আমি জনগণের কাছে মাথা নত করব। কিন্তু বিজেপি-র কাছে মাথা নত করব না। যতই আক্রমণ করুক না কেন আমায়’।

অন্যদিকে, অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত, সায়নী ঘোষদের যেভাবে বিজেপি নেতারা আক্রমণ শানিয়েছেন, সেই প্রসঙ্গে এদিন ফের গর্জে ওঠেন মমতা। এই প্রসঙ্গে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘দেবলীনা-সায়নী আমাকে বলছে, যে ওঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ওঁরা নারীকে সম্মান জানাতে পারেন না। বাংলায় বিজেপি-কে খালি করতে হবে’।

হুগলির পুরশুড়ায় সভায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বক্তৃতায় যা বললেন


বুথকর্মীরাই দলের সম্পদ। তারাই ইলেকশন করে। তারাই জলে-ঝড়ে ঘুরে বেড়ায়। সারা বছর কাজ করে। তাই আজকের মিটিং আমি বুথকর্মীদের ডেডিকেট করছি।


নেতা তৈরি হয় পরিশ্রমের মাধ্যমে। গাছ থেকে পড়ে কখনও নেতা হয় না। একথা স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বলেছেন।


আমি যে শাড়িটা পরে আছি সেটা কারা করে দিয়েছে। ধনেখালির তাঁতিরা। আমি তাঁদের সেলাম জানাই, প্রণাম জানাই। আমি এদের থেকে তৈরি করাই। কখনও বর্ধমান, কখনও হুগলি, কখনও নদিয়া।


আসতে আসতে দেখছিলাম, আলু চাষে ভরে আছে ক্ষেত। দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। বাংলার মানুষ আলু-সেদ্ধ ভাত খেতে খুব ভালবাসে। আর দিল্লিতে আলু কা বড়া ভি নেহি মিলতা।

আমরা ক্ষমতায় আছি বলবে ১০ বছর। অ্যাকচুয়াল ১০ বছর নয়। মে মাস পেরলে ১০ বছর হবে। আর এক বছর কোভিডের জন্য আমরা কোনও কাজ করতে পারিনি। করোনায় মানুষকে সাহায্য করতে গিয়ে করতে পারিনি। থেমে থাকেনি। কিন্তু অসুবিধা হয়েছে। এই ৯ বছরের মধ্যে দুটো অ্যাসেম্বলি ইলেকশন, দুটো লোকসভা ইলেকশন, দুটো পঞ্চায়েত ইলেকশন করতে গিয়ে এক বছর কেটে গিয়েছে। তাহলে আমি হাতে পেলাম আট বছর। আট বছরে কী হয়নি বলুন।


আমি চিরকাল দেখেছি বন্যা এসেছে, খানাকুল, পুরশুড়ার মানুষ ভেসে যেত। আমরা আড়াই লক্ষ পুকুর কেটেছি। যাতে বৃষ্টির জল সেখানে গিয়ে পড়ে। লোয়ার দামোদর রিভার বেসিন প্রজেক্টের মাধ্যমে ইরিগেশন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ হবে। দু’বছরের মধ্যে হয়ে যাবে। তারপরে আর বন্যার সমস্যা হবে না।


পুরশুড়া, খানাকুল প্রতি বছর ডুবে যায়। আর আমি ছুটে এসে বলি ওদের আগে চাল দাও, ওদের আগে ডাল দাও, ওদের আগে সাহায্য কর। দিনের পর দিন এই পরিস্থিতি ফেস করতে হয়েছে। বিষ্ণুপুর থেকে তারকেশ্বর রেল লাইন আমি করে দিয়েছিলেন। জয়রামবাটি পর্যন্ত হয়ে গেছে। বাকিটাও হয়ে যাবে।

উত্তরবঙ্গ যাওয়ার জন্য একটা রাস্তা তৈরি করছি। তিন হাজার কোটি টাকা খরচ।
অনেক কাজ হয়েছে। আমি সময় নষ্ট করে কিষাণ মাণ্ডি, কন্যাশ্রী, সবুজ সাথীর কথা আর বলব না। ৯ লক্ষ ছেলেমেয়েদের ট্যাব দেওয়া হয়েছে। দুয়ারে সরকারে জানা নাম লিখিয়েছিলেন, বিধবা ভাতা ও ওল্ড এজ হোমের জন্য, ১৫ লক্ষ লোককে করে দিচ্ছি আমি।


স্বাস্থ্যসাথী সবাই পাবেন। তবে ওই বায়োমেট্রিক করার জন্য একটা মেশিন লাগে। অনেক চেষ্টা করেও দেড় লক্ষের বেশি করা যাচ্ছে না। তাই সময় লাগছে। যাঁরা পাবেন না, মনে রাখবেন যদি ইলেকশন ডিক্লেয়ার হয়ে যায় তাহলে আপনার হাতে একটা টেম্পোরারি কার্ড দেওয়া হবে। এটাই পরে স্মার্ট কার্ড হয়ে যাবে। ওই কার্ডে ট্রিটমেন্টও করতে পারবেন। রেশন কার্ডের মতো।

প্রথম প্রথম মনে রাখবেন একটা বা দুটো জায়গায় কেউ কেউ রিফিউজ করতে পারে। যদি রিফিউজ করে সঙ্গে সঙ্গে থানায় কমপ্লেন করবেন। কার্ডের পিছনেই কমপ্লেন নম্বর লেখা আছে। সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নেব।


বিজেপির লোকেরা নোংরামি করে কয়েক দিন আগে একটা ছবি দেখাচ্ছিল যে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে গেছিল কিন্তু পায়নি। আসলে তথ্যটা আলাদা। সে তার আগেকার একটা বিল মেটাতে গেছিল। সেটা তো দেবে না। যখন থেকে কার্ডটা হবে তখন থেকে তো দেবে। আগের বিলের টাকা তো দেবে না।


ওবিসি ও সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রীদের ২ কোটি স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছে। তফশিলি ভাই-বোনেদেরও প্রায় ৯০ লাখ স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছে। আগে একটা কাস্ট সার্টিফিকেট পেতে এক-দু’বছর লেগে যেত। আমরা দুয়ারে সরকারের মধ্যে দিয়ে ১০ লক্ষ কাস্ট সার্টিফিকেট দিয়েছি। বাদ বাকি যারা অ্যাপ্লাই করেছেন, কাগজ পত্র ঠিক আছে, তাদেরও হয়ে যাবে চিন্তা করবেন না।


কৃষক বন্ধু স্কিমে কৃষকদের জমি দেওয়া হবে। তার কাজ আমরা সরলীকৃত করেছি। ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে একজন কৃষক মারা গেলে ২ লক্ষ টাকা করে আমরা দিচ্ছি। শস্যবিমা বিনা পয়সায় করেছি। আগে কোনও ক্ষতিপূরণ পেতেন না। আমরা আমফান থেকে শুরু করে সব ক্ষতিপূরণ দিয়েছি।

একটা রাজ্য সরকার কীভাবে আমফান, কোভিডকে মোকাবিলা করল একবার ভাববেন না। কোনও সরকার এই কাজ করতে পারেনি।
তৃণমূল সরকার আগামী দিনেও বিনা পয়সায় রেশন পাবে। এটা প্রতিশ্রুতি নয়।

বিজেপির মতো নয় যে বলছি সবার অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। তারপরে বিজেপি ভোঁ-ভাঁ। বিজেপি বাই বাই। দেখা নেই। পালিয়ে যা পালিয়ে যা। আমরা করে বলছি। ফ্রিতে রেশন দিচ্ছি কিনা। দিচ্ছি দেব। কারণ আমরাই ছিলাম, আমরাই থাকব।


আমি বলে ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম, বিদায় যাও বিজেপি, বাম’। আর ‘হরে কৃষ্ণ হরে হরে, তৃণমূল ঘরে’।


দু’একজন দেখতে পাচ্ছেন না পালিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। আসলে অনেক টাকা করেছে। ভাবছে কোথায় রাখব। আসলে বিজেপি একটা ওয়াশিং মেশিন। ওয়াশিং মেশিন বিজেপি। চোরগুলো যাচ্ছে, ওয়াশিং মেশিনে স্নান করছে। আর করলেই সানলাইটে সাদা হয়ে যাচ্ছে। যারা অনেক টাকা করেছে, আর অনেক টাকা গচ্ছিত আছে তাদের জন্য বিজেপি।

কেউ কেউ লোভী আছে। ভাবছে বিজেপিতে গিয়ে নাম লেখাই। আমি বলছি ভাল করে লেখাও। এরপরে আর তৃণমূলে আসবার চেষ্টা করবে না। আমরা তোমাদের নেব না। কাকে কাকে নিতে হয় সেটা আমরা জানি। সম্মানীয় লোকেদের নেব। কিন্তু তোমাদের মতো এইচোর, মানে ইচরে পাকা, তাদের আমরা নেব না।


যারা যারা লাইন দিয়ে আছেন বলব তাড়াতাড়ি চলে যান। ট্রেন ছেড়ে দেবে। তাড়াতাড়ি ওদের পায়ে গিয়ে পড়ুন। বাংলা আপনাদের চায় না।

আমার কোনও যায় আসে না। কারণ ইলেকশন আর এক মাসের মধ্যে। আজকে গিয়ে কী লাভ বাবু? আজকে গিয়ে আর কী পাবে? টাকা করেছ। তাই বিজেপির ঘরে রাখতে যাচ্ছ। তৃণমূল তো তোমাদের টিকিট দিত না, তাই পালিয়ে যাচ্ছে ভয়ে। তৃণমূল তাকেই টিকিট দেবে যারা মানুষের জন্য কাজ করেছে। আর যারা করেনি তাদের দেবে না। তাই যাদের ভয় আছে তারা পালাচ্ছে। লেজ গুটিয়ে পালাও।


বলুন তো আমায় আপনি যদি আমাকে বাড়িতে খেতে ডাকেন, তাহলে কি বলবেন, এক থাপ্পড় মারব, বেরিয়ে যাও বাড়ি থেকে। বলবেন কখনও। এটা আমাদের রীতি, সৌজন্যতা, ভদ্রতা নেই। নেতাজি আমাদের সবার নেতা। তার প্রোগ্রামে গেলাম। এত সাহস। কয়েকটা গর্ধ গদ্দার এবং উগ্র গর্ধ ধর্মান্ধ আমায় টিজ করছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী সামনে বসে।

ওরা আমায় চেনে না। আমায় যদি কোনও মা বলে আমার ঘরে এসে বাসনটা মেজে দাও মা, আমি বলব হ্যাঁ দিচ্ছি। কারণ এটা মেয়েদের কাজ। ছেলেদেরও কাজ। কিন্তু আমায় যদি বন্দুক দেখিয়েছ তাহলে আমি বন্দুকের সিন্দুক দেখাব। কারণ আমি সত্যিকারের বন্দুকে বিশ্বাস করি না। রাজনীতি দিয়েই তোমাদের জবাব দেব।

তুমি যদি নেতাজি নেতাজি করতে, আমি স্যালুট জানাতাম। তা না করে যা করেছ, বাংলাকে অপমান করেছ, নেতাজি সুভাষকে অপমান করেছ। এর আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অপমান করেছ। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছ। যখন কোভিডে সবাই কষ্ট পাচ্ছিল তখন দিল্লিতে দাঙ্গা করেছ।


বিজেপি আজ সিপিএম আর কংগ্রেসের সমর্থনে এখানে এসেছে। আমি আগেই বলতাম, এরা তিন ভাই। জগাই, মাধাই, গদাই। বড় ভাই জগাই, ছোট ভাই মাধাই আর মেজ ভাই গদাই। এরা বলে কানে কানে কথা বল, ভোটবাক্সে কেন বল না। একটা দেশ জ্বালাও পার্টি, আর একটা সিপিএম ৩৪ বছর ধরে অত্যাচার করেছে।


সারা ভারতে ৪০ পারসেন্ট চাকরি কমে গিয়েছে। আর আমরা ৪০ পারেসেন্ট দারিদ্রতা কমিয়েছি আর ৪০ পারসেন্ট চাকরি বাড়িয়ে দিয়েছি। এটাই বাংলা। মনে রাখবেন বাংলা মানে হ্যাংলা নয়। বাংলা মাথা নত করে না।


যত টিভিতে দেখাবে বিজেপি জিতছে, তত ভাববেন হারছে। আমার আবেদন, হুগলির সব কটা সিট আমাদের দিন। যদি কোনও ভুল ভ্রান্তি থাকে তাহলে আমি দেখে নেব। কিন্তু বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসকে দয়া করে একটি ভোটও দেবেন না। ওরা কিছু টাকা পয়সা নিয়ে আসবে। ভোটের সময় এগুলো বললে আমার বিরুদ্ধে কেস করবে। তাই আগেই বলে যাচ্ছি। টাকা নিয়ে নিন, মাংস ভাত খেয়ে নিন। ও টাকা পচা টাকা, তাই যা ইচ্ছে করুন। কিন্তু ভোট বাক্সে ভোটটা পালটে দিন।

কয়েকটা সিট পেয়েই আগুন লাগাচ্ছে। বাইরের গুণ্ডাকে আমরা অ্যালাও করব না। খানাকুলে একটা ৬০ বেডের হাসপাতাল আছে। ওটা ১০০ বেডের করা হবে। আমি আপনাদের পাহারাদার। আমি একজন নেতা নই, আমি একজন বুথ কর্মী, জনগণের একজন সেবক হিসেবে থাকতে চাই। দুঃসময়ে আমাকে পাবেন।


ওদের কোনও ভিডিও বিশ্বাস করবে না। ওরা ফেক ফেক ফেক। কোটি কোটি টাকা খরচ করে মিথ্যা কথা রটায়। বিজেপি পার্টিটাই এখন ফেক আর ভেকধারী পার্টি হয়ে গিয়েছে। ওদের বিশ্বাস করবেন না।


বিজেপি হয়ে গিয়েছে বহিরাগত জ্বালাও পার্টি। বাক্স প্যাটরা নিয়ে এসে বলছে ‘হাম বাঙ্গাল কো গুজরাট বানা দেঙ্গে’। আমি বলছি ‘গুজরাট কো হাম বাঙ্গাল বানা দেঙ্গে।’ বিজেপির কাছে মাথা নত করার আগে নিজের গলা নিজেই কেটে দেব। তাও ভি আচ্ছা হ্যায়। তাও ভি সাচ্চা হ্যায়।

আমাকে দেবলীনা, সায়নী বলল, ফেসবুকে বিজেপি বলছে তোরা বাংলার বাইরে যাবি না, তোদের রেপ করে দেব। আমি বললাম এত সাহস, একটা করে দেখা না। তারপরে আমি দেখিয়ে দেব মমতা ব্যানার্জিটা কী, আর পশ্চিমবঙ্গটা কী।


বিজেপি যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে, লাল চুল কানে দুল পরে একটু যদি বোমা বন্দুক বের করে, তাহলে মা বোনেরা আপনারা হাতা খুন্তি নিয়ে ভালো করে রান্না করে দেবেন তো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here