দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বাংলার আট দফা নির্বাচনের তৃতীয় দফা আজ। হাওড়া, হুগলি ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার মোট ৩১টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ। গত দুই দফার থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার খাতিরে নজিরবিহীনভাবে ১৬ কেন্দ্রেই জারি ১৪৪ ধারা। এর মধ্যে রয়েছে হাওড়ার ৭টি, দক্ষিণ ২৪ পরগণার ১৬টি ও হুগলির ৮টি আসন।

দক্ষিণ ২৪ পরিগনার যে ১৬টি আসনে আজ ভোটগ্রহণ চলছে সেগুলো হল বাসন্তী, কুলতলি, কুলপি, রায়দিঘি, মন্দিরবাজার, জয়নগর, বারুইপুর পূর্ব, ক্যানিং পশ্চিম, ক্যানিং পূর্ব, বারুইপুর পশ্চিম, মগরাহাট পূর্ব, মগরাহাট পশ্চিম, ডায়মন্ড হারবার, ফলতা, সাতগাছিয়া, বিষ্ণুপুর। হুগলির যে ৮টি আসনে ভোটগ্রহণ, তা হল খানাকুল, জাঙ্গিপাড়া, গোঘাট, হরিপাল, আরামবাগ, ধনেখালি, পুরশুড়া, তারকেশ্বর। এছাড়া হাওড়ার ৭টি আসন হল উদয়নারায়ণপুর, জগৎবল্লভপুর, উলুবেড়িয়া উত্তর, উলুবেড়িয়া দক্ষিণ, বাগনান, শ্যামপুর, আমতা। গত কয়েক বছরের ফল দেখলে এই কেন্দ্রগুলি জোড়াফুল শিবিরের দুর্গ। আজ সেখানে অ্যাসিড টেস্ট।

তৃতীয় দফা ভোট শুরু আগেই সামনে এল চাঞ্চল্যকর ঘটনা। ভোটের আগের রাতেই হাওড়ার উলুবেড়িয়া উত্তর বিধানসভার টিএমসি নেতা গৌতম ঘোষের বাড়িতে মিলল ইভিএম, ভিভিপ্যাট। ভোটের সরঞ্জাম এলাকার তৃণমূল নেতার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠল সেক্টর অফিসারের বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানতে পেরেই উত্তেজিত গ্রামবাসী ঘেরাও করে তৃণমূল নেতার বাড়ি। চলে বিক্ষোভ। ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন উলুবেড়িয়া ২ নম্বর ব্লকের বিডিও।

উলুবেড়িয়া উত্তরের বিজেপি প্রাথী চিরণ বেরার অভিযোগ, তুলসিবেড়িয়ার তৃণমূল নেতা গৌতম ঘোষ রাতের অন্ধকারে কমিশনের গাড়ি নিয়ে ৪টে ইভিএম মেশিন ৪টে ভিভিপ্যাট মেশিন রাখার সময় হাতেনাতে ধরে ফেলেন গ্রামবাসীরা। রিগিং করতেই পরিকল্পিত ভাবেই এগুলো আনা হয়েছিল বলে অভিযোগ।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশ। উত্তেজক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয় পুলিশ কর্মীরা। অভিযুক্ত সেক্টর অফিসারকেও হাতনাতে ধরা হয়। অভিযোগ পেয়ে সেক্টর অফিসারকে সাসপেণ্ড করল কমিশন। যদিও ইভিএম সরানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। সেক্টর অফিসারের দাবি, তিনি জানতেন না ওটা তৃণমূল নেতার বাড়ি। স্থানীয় এজেন্ট তাঁকে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য সেখানে আসতে বলেছিলেন।

তৃতীয় দফার ভোটের আগের রাত থেকেই বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর মিলেছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার নানা প্রান্ত থেকে। ক্যানিং ১৩৮ নম্বর পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে এক বিজেপি এজেন্টকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, সোমবার মধ্যরাত থেকেই তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়েছে বাসন্তীতে। বুথের সামনে থেকে বোমা, গুলির খোল উদ্ধার হয়েছে।

ক্যানিং পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের নিকারীঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় দফায় দফায় ঝামেলা চলছে গতকাল রাত থেকেই। ওই পঞ্চায়েত এলাকার ১৯৬ নম্বর বুথের এজেন্ট গণেশ কেওটকের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, গতকাল মাঝরাতে ৮ থেকে ১০ জনের একটি দল এলাকায় ঢুকে তাণ্ডব চালায়। গণেশ বাবুর বাড়িতেও চড়াও হয়। তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ, হুমকি দেওয়া হয়েছে তাঁর বাবা-মাকেও।


গণেশ বাবুর দাবি, গতকাল রাতে দুষ্কৃতীরা বাড়িতে ঢুকে তাঁকে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে। তাঁর দুই পায়ে আঘাত গুরুতর। ভোট না দেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ গণেশবাবুর। তিনি আরও বলেছেন, দুষ্কৃতীরা হুমকি দিয়ে গেছে তাঁর বাড়ির লোকজন যদি ভোট দিতে যায় তাহলে প্রাণের আশঙ্কা থাকবে।

গতকাল রাতে গণেশবাবুকে উদ্ধার করে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে দলীয় কর্মীরাই। রাত তিনটে নাগাদ তিনি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এক বিজেপি কর্মীর বাড়িতেই আশ্রয় নিয়েছেন বলে খবর। গণেশবাবু জানিয়েছেন, তিনি বাড়ি ফিরতে ভয় পাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় বাহিনী যদি তাঁকে নিরাপত্তা দেয়, তাহলেই ভোট দিতে পারবেন। না হলে ফের দুষ্কৃতীদের হামলা হতে পারে বলে দাবি তাঁর।


গোটা ঘটনায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দিকেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, এলাকার তৃণমূল যুব সভাপতি মহরম শেখ এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তাঁর দলের লোকজনরাই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ। অন্যদিকে, মহরম শেখের বক্তব্য, বিজেপি কর্মীদের নিজেদের মধ্যে ঝামেলার কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। টাকাপয়সার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে অশান্তি চলছিল। তারই জেরে ওই এজেন্টকে মারধর করা হয়েছে। ভোটের বাজারে ফায়দা তোলার জন্য তৃণমূলের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে বলে দাবি তাঁর।

এদিকে সকাল থেকেই অশান্তি চলছে ক্যানিং পূর্বের দুর্গাপুর ১২৭ নম্বর বুথে। সূত্রের খবর আইএসএফ কর্মীদের বুথে যেতে বাধা দিচ্ছে স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা। এই ঘটনাকে ঘিরে দু’পক্ষের হাতাহাতির খবরও সামনে এসেছে। ঘটনাস্থলে রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।

বাসন্তীর হেদিয়াতে ১৪ ও ১৫ নম্বর বুথের সামনে থেকে বোমা, গুলি উদ্ধার হয়েছে গতকাল রাতে। পুলিশ জানিয়েছে, এই দুই বুথের সামনে বোমার সুতলি, গুলির খোলা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, গতকাল রাতে তৃণমূল কর্মীরা হামলা চালিয়েছে। বাসন্তীর সোনাখালি এলাকা থেকেও বোমা উদ্ধার হয়েছে বলে খবর। এলাকা ঘিরে রেখেছে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা।

বাংলায় তৄতীয় দফার নির্বাচন ৷ এই দফাতে হাওড়া, হুগলি এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মোট ৩১টি বিধানসভা আসনে ভোটগ্রহণ । নির্বাচনের নজরে বিশেষবাবে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক স্পর্শকাতর এলাকা।

সকাল ৭টা বাজতে না বাজতেই বুথে বুথে লাইন। বুধবার ভোটগ্রহণ হচ্ছে ৩ জেলার ৩১ কেন্দ্রে। হাওড়া ও হুগলি জেলায় ভোটের অবশ্য এটাই প্রথম দফা। দুই জেলার যথাক্রমে ৭ ও ৮টি আসনে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। আর দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভোট হচ্ছে ১৬টি আসনে।

রাজ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ হলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফে নানা অভিযোগ উঠেছে। ভোটের আগের রাতে বাগনানে আক্রান্ত তৃণমূলের বুথ সভাপতি যৌগীবর নাগ। ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপানোর অভিযোগ। এই ঘটনায় বিজেপির বিরুদ্ধে। গুরুতর জখম বাগনানের হ্যালান অঞ্চলের তৃণমূলের বুথ সভাপতি যোগীবর বাগ।

মঙ্গলবারের ভোট অভিযোগহীন করার লক্ষ্যে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, যে হেতু মঙ্গলবারের ৩১টির মধ্যে সব চেয়ে বেশি আসন দক্ষিণ ২৪ পরগনায়, তাই এই জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যাও বেশি। প্রথম দু’দফাতেই এ বার ভাল ভোট পড়েছে। কমিশনের হিসাব অনুযায়ী প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৮৪.৬৩ শতাংশ। আর দ্বিতীয় দফায় ৮৬.১১ শতাংশ। কমিশনের লক্ষ্য, তৃতীয় দফায় ভোটের হার আরও বাড়ানো।


তবে নিরাপত্তার দিকেও কড়া নজর রয়েছে কমিশনের। মোট ৬১৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বারুইপুর পুলিশ জেলায় ১৩০ কোম্পানি, ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলায় ১১৩ কোম্পানি, সুন্দরবনে ৬৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে। হুগলি জেলায় ১৬৭ কোম্পানি, হাওড়া গ্রামীণে ১৩৩ কোম্পানি, হাওড়া কমিশনারেটে ১১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। প্রতিটি বুথেই আধা সেনা রাখা হয়েছে। ভোট শান্তিপূর্ণ করতে, ‘ওয়েব কাস্টিং’-এর উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here