দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ আজই বাংলায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের দাপটে তছনছ হয়ে গেছে দক্ষিণবঙ্গের বড় অংশ। সেই ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শন করতেই আজ আসছেন প্রধানমন্ত্রী। আকাশপথে বাংলা এবং ওড়িশার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখবেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকও করবেন।

আজ বেলার দিকে কলাইকুণ্ডা এসে নামবে মোদীর কপ্টার। তার আগে আগে আকাশ পথে ওড়িশার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গেও বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। কলাইকুণ্ডায় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় নিজে।

এদিন বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে আকাশ পথে পূর্ব মেদিনীপুরের বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শন করতে পারেন মোদী। গতকাল নবান্নে মমতা বলেন, “আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী আসছেন কলাইকুণ্ডায়। আমাকে বলা হয়েছে। আমি যাব।”

তবে এই বৈঠকের আগে আজ উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পরে পশ্চিম মেদিনীপুরের কলাইকুণ্ডায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করবেন মমতা। তাঁর আজ প্রথমে যাওয়ার কথা সন্দেশখালি, ধামাখালি। আকাশ পথে এলাকা পরিদর্শনের পর বসিরহাটে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মমতা। সেখান থেকে তিনি যাবেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা। সেখানেও এলাকা পরিদর্শনের পর প্রশাসনিক বৈঠকের সূচি রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। তবে পূর্ব মেদিনীপুরে কাল পরিদর্শন করলেও প্রশাসনিক বৈঠক রয়েছে পরের দিন অর্থাৎ শনিবার। শুক্রবার রাতে দিঘায় থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী।

অন্যদিকে, ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনার জন্য আজ, শুক্রবার কলাইকুন্ডা বিমানঘাঁটিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকের কর্মসূচি ঠিক থাকলেও, বৃহস্পতিবার বেশি রাতে বিষয়টি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। রাত পর্যন্ত পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়ে, তাতে মমতা সম্ভবত ওই বৈঠকে যাবেন না। বিষয়টি নবান্নের পক্ষ থেকে রাতেই দিল্লিকে জানানো হয়েছে।

সূত্রের খবর, মমতার আপত্তির মূল কারণ, প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারীর উপস্থিতির সম্ভাবনা। এ দিন রাতে দিল্লি থেকে নবান্নকে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে থাকবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, এই রাজ্যের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এবং বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, এই তালিকা জানার পরে মুখ্যমন্ত্রী বেঁকে বসেন। তাঁর যুক্তি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা রাজ্যপাল বৈঠকে থাকবেন, তা না-হয় বোঝা গেল। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী থাকবেন কেন?

নবান্নের ব্যাখ্যা, বৈঠকে সরকারি স্তরের বাইরে অন্য কোনও রাজনৈতিক উপস্থিতি না থাকাই বাঞ্ছনীয়। তাই মুখ্যমন্ত্রী তাঁর আপত্তি ও অনিচ্ছা জানিয়েছেন। মমতার এই আপত্তির কথা রাতেই প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে জানানো হয়। তবে মধ্য রাত পর্যন্ত দিল্লির কোনও সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।

ইতিমধ্যেই জেলাগুলির থেকে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। গতকালই প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে মমতা জানিয়েছিলেন প্রায় তিন লক্ষ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সমুদ্রের নোনা জল চাষের জমিতে ঢুকে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া প্রায় এক কোটি মানুষ এই দুর্যোগ কবলিত বলে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

এখন দেখার কালকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাংলার জন্য স্পেশাল কোনও আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেন কি না। আগেই অবশ্য অর্থ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা।

গত বছরে আমফানের এক দিন পরেই বাংলার দুর্যোগ কবলিত এলাকা পরিদর্শনে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বসিরহাটের একটি স্কুলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে প্রাথমিক ভাবে এক হাজার কোটি টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণাও করেছিলেন তিনি।

রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার জানান, আগামী ২৮ মে শুক্রবার কলকাতা থেকে হেলিকপ্টারে উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ এলাকা পরিদর্শন করবেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সেখানে ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান নেওয়ার পাশাপাশি কী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পুনর্বাসন ও ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে, তা নিয়ে তিনি সন্দেশখালির ধামাখালিতে রিভিউ মিটিং করবেন৷

এর পর মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে যাবেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরে। সেখানে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন৷ সাগর থেকে তিনি যাবেন কলাইকুণ্ডায়। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সেরে মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছবেন দিঘায়৷ কাল, শনিবার দিঘায় প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী৷ কালই তিনি কলকাতায় ফিরে আসবেন। বুধবার বিকেলে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী নিজেও সাংবাদিকদের তাঁর এই সফরসূচির কথা জানিয়েছিলেন। সরকারি সূত্রের খবর, সেনাবাহিনীর কপ্টারে করে প্রধানমন্ত্রী ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ওডিশার ভদ্রক, বালেশ্বর ঘুরে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম, খেজুরি, কাঁথি পরিদর্শন করবেন।

বিধানসভা ভোটের পর এই প্রথম রাজ্যে আসছেন প্রধানমন্ত্রী। উম্পুনের পর একই ভাবে মোদী আকাশপথে দুই ২৪ পরগনার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন। তার পর জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সে বার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কপ্টারে সওয়ার হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীও। এ বার সেই রকমটা না-হলেও দীর্ঘদিন পর ফের দুই নেতা-নেত্রী মুখোমুখি বৈঠক করবেন।

শেষ পর্যন্ত বৈঠক হলে ভোটের পরে এটাই হবে প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীর প্রথম সাক্ষাৎ। কয়েক দিন আগে কোভিড নিয়ে মোদীর ভার্চুয়াল বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও কথা বলার সুযোগ পাননি মুখ্যমন্ত্রী। এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

ইয়াস আছড়ে পড়ার আগেই বাংলাকে দুর্যোগ মোকাবিলায় অগ্রিম ৪০০ কোটি টাকা দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ওডিশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশকে দেওয়া হবে ৬০০ কোটি টাকা। এই আর্থিক বৈষম্য নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ওডিশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গ জনঘনত্বে বড় রাজ্য হওয়া সত্ত্বেও কেন কম টাকা দেওয়া হলো, তা নিয়ে সে দিনই প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা। তাই, ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখে প্রধানমন্ত্রী বাংলার জন্য অতিরিক্ত কোনও আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেন কি না, আপাতত সেই দিকেই তাকিয়ে রাজ্য প্রশাসন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here