দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: আরও আগ্রাসী হয়ে ভূখণ্ডের দিকে এগিয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন আমপান। আগামীকাল, বুধবার দুপুর দুটোর আগে-পরে আছড়ে পড়ার কথা এই বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের। মঙ্গলবার জরুরি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে রাজ্যের মানুষকে সে ব্যাপারেই সতর্ক করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে বুঝিয়ে বললেন ঘূর্ণিঝড়ের গঠনও।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই ঝড়ের তিনটি অংশ। মাথা, চোখ আর লেজ। হেড, আই, টেল। সবার প্রথমে মাথা হিট করবে।” ঝড়ের প্রথম ঝাপটার পর প্রকৃতি যদি একটু শান্তও হয় তাতে মনে করার কারণ নেই যে দুর্যোগ থেমে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “যখনই দেখবেন ঝড়টা থেমে যাচ্ছে ভাববেন না থেমে গেল। আরএকটা বড় দমকা আসবে। সেটা আই। তারপর লেজ এসে মুড়িয়ে নিয়ে যাবে।” ফণীতে বিধ্বস্ত ওড়িশার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মমতা বলেন, ওখানে লেজটাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছিল।

‌‌ ক্রমশ উপকূলের দিকে এগোচ্ছে সুপার সাইক্লোন আমপান। বুধবার বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে আছড়ে পড়ার কথা থাকলেও ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় শুরু হয়ে গিয়েছে ঝড়বৃষ্টি। মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, ইতিমধ্যেই উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে তিন লক্ষ মানুষকে সরিয়ে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে দুলক্ষ, উত্তর ২৪ পরগনা থেকে ৫০,০০০, পূর্ব মেদিনীপুর থেকে ৪০,০০০ এবং পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে ১০,০০০ মানুষকে সরানো হয়। যাঁদের বাড়ি বিপজ্জনক অবস্থায় আছে তাঁদের ত্রাণশিবিরে যেতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

খোলা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম। কন্ট্রোল রুমের টোল ফ্রি নম্বর হল–১০৭০। এবং অন্য নম্বরগুলি হল— ০৩৩–২২১৪–৩৫২৬/‌১৯৯৫। 
রাজ্যবাসীকে সতর্ক করে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, বৃহস্পতিবার প্রশাসন না বলা পর্যন্ত ঝড় থামতে দেখেই যেন কেউ বাড়ির বাইরে না বেরোন। মমতা বলেছেন, ‘‌মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো ঘূর্ণিঝড় আমপান। সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পৌঁছিয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা দলও। মুখ্যসচিবের নির্দেশে কাজ করছে টাস্ক ফোর্স। সাইক্লোন সেন্টারে যতটা সম্ভব সতর্কতা নেবেন।’‌‌

মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, “একদিকে কোভিড সামলাতে হচ্ছে। তারপর ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের ফেরানোর বিষয় দেখতে হচ্ছে, কবে ট্রেন আসবে, কী ভাবে তাঁদের স্ক্রিনিং হবে, কী করে জেলায় পৌঁছে দেওয়া হবে– সবটাই দেখতে হচ্ছে। এর মধ্যেই আবার আমপান নাম নিয়ে ঝড় আসছে। গ্রীষ্ম কালে আমরা আম খাই। কিন্তু এবার আমপান চলে এসেছে।” এমনি সময়ে ঝড়ের পূর্বাভাস থাকলে উপকূলবর্তী এলাকার মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এবার করোনা সতর্কতায় এক জায়গায় অনেককে রাখা যাচ্ছে না। মানতে হচ্ছে সমাজিক দূরত্বের বিধি।মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, “কাল, বুধবার সারাদিন এবং বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত খুব সাবধানে থাকতে হবে।” কাউকে বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করেছেন তিনি।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার দুপুরেই জানিয়েছেন, আমপান বড়সড় ক্ষতি করবে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, “অনেকে তো বলছেন আয়লার থেকেও ভয়ঙ্কর হবে আমপান।” শিশু এবং বৃদ্ধদের বাড়তি যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দেন মমতা।

এই দু’দিন ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকদের রাজ্যের শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরানো হবে না বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতে বাড়তি বিপদ হতে পারে। রেলের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আগামী কাল সারারাত নবান্নের কন্ট্রোল রুমে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বর- ২২১৪ ৩৫৩৬, ২২১৪ ১৯৯৫ ও টোল ফ্রি নম্বর ১০৭০। এদিন সকালেই আমপান নিয়ে উপকূল এলাকার প্রস্তুটতি জানতে মমতাকে ফোন করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি, আমরা ঠিকআছি। সব ব্যবস্থা করছি। বুলবুলের সময়েও করেছি।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here