দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ নেই দলের নামে কোনও পোস্টার, নেই কোনও প্রতীকও। ফের অরাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা গেল রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে। চিরাচরিত ভঙ্গিতে এদিন সভামঞ্চ থেকেই কারোর নাম না করেই হুঁশিয়ারি দিলেন এই হেভিওয়েট নেতা। 

বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে হাজির হয়েছিলেন শুভেন্দু  অধিকারী ৷ হুগলির পান্ডুয়া যাওয়ার পথে ঘাটালের বিদ্যাসাগর উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে দুর্গাপুর ইউনাইটেড ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ডাকে বিজয়া সম্মেলনিতে যোগ দেন তিনি। সেখানে দাদার অনুগামী নামে প্রায় পাঁচ হাজার কর্মী হাজির হয়েছিলেন। এক সপ্তাহ আগে থেকেই এই সভার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছিল। এদিন সভা মঞ্চে ছিল না তৃণমূলের কোনও ফেস্টু, ব্যানার।

কী বার্তা দিলেন শুভেন্দু

সভায় মেদিনীপুর নিয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন শুভেন্দু অধিকারী।  উল্লেখযোগ্য ভাবে এই সভাতে যোগ দিতে দেখা যায় বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতাকে।  জেলা পরিষদের কর্মাধক্ষ রমাপ্রসাদ গিরি থেকে তৃণমূলের নেতা তপন দত্ত,জেলা পরিষদের সদস্য কাবেরী চট্টোপাধ্যায়, দুলাল মণ্ডল সহ একাধিক দাপুটে তৃণমূল নেতা উপস্থিত ছিলেন এই  বিজয়া সম্মেলনিতে।

প্রায় ১৫ মিনিট বক্তব্য রাখেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী। সেখানে মেদিনীপুর নন্দীগ্রাম নিয়ে একাধিক কথা বলেন।  কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, -“মেদিনীপুর, নন্দীগ্রাম কখনো মাথা নত করেনি, আর করবেও না৷ কাঁথির বাসিন্দা দেশপ্রান বিরেন্দ্র শাসমলকে শেষ কৃত্যের সময় মাথা নত না করানোর জন্য দাঁড় করিয়ে দাহ করানো হয়েছিল,কারন তিনি কখনও বৃটিশদের কাছে মাথা নত করেননি ৷ শুভেন্দু অধিকারী ছিল, আছে, থাকবে।

নন্দীগ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে কদিন আগে নাম না করে তাঁকে মীরজাফর বলেছেন ফিরহাদ হাকিম। দোলা-পূর্ণেন্দুও কম কড়া কথা শোনাননি। এর পরেও কোনও সমঝোতার জায়গা থাকে কি? বিশেষ করে, বিষ্যুদবারও ঘাটালের মাটিতে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু অধিকারী যখন বলেছেন, “আমরা এগিয়ে যাব। আর তোরা দেখে কাঁদবি। দেখবি আর জ্বলবি, লুচির মতো ফুলবি!”

তবু হয়তো শেষ একটা চেষ্টা করে যাচ্ছে তৃণমূল। হয়তো তাই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন প্রায়ই শিশির অধিরকারীকে ফোন করছেন বলে খবর, তেমনই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সটান কাঁথিতে অধিকারী-বাসভবনে পৌঁছে গেলেন কালীঘাটের বার্তাবহ তথা পেশাদার ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর।
কৌতূহলের বিষয় হল, শুভেন্দুর সঙ্গে তাঁর দেখা হল কি বা কথা?

এদিন কাঁথির বাড়িতে তিনি ছিলেন না। বরং তাঁর কর্মসূচি দেখে অনেকেই আন্দাজ করছেন, বড় কোনও পদক্ষেপের আগে তিনি জনসংযোগে ব্যস্ত। জেলায় জেলায় তাঁর যোগাযোগ, অনুগামী ও আস্থাভাজন কর্মী নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিচ্ছেন। কেউ আবার বলছেন, ক্রমশ মাঠ বড় করছেন শুভেন্দু। মুর্শিদাবাদ থেকে রাজারহাট। গোটা দিন ডজন খানেক কর্মসূচি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

শিশিরবাবুর সঙ্গে প্রশান্ত কিশোরের কী কথা হল, সে ব্যাপারে দুজনেই বাইরে কিছু বলেননি। প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে শুভেন্দুর ফোনে কথা হয়েছে কিনা তাও স্পষ্ট নয়। তবে তৃণমূল সূত্রে খবর, এর আগেও শুভেন্দুর সঙ্গে দুবার দেখা করেছেন প্রশান্ত কিশোর। অনেকের মতে, ওই দুই বৈঠকের পরেও যখন প্রশান্ত কিশোরকে বৃহস্পতিবার কাঁথিতে যেতে হয়েছে, তার মানে হল আগের বৈঠকে বরফ গলেনি। আর এ বার তো দেখাও হল না। তৃণমূল সূত্রের এও খবর, দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীও শুভেন্দুকে ফোন করেছিলেন। তাতেও খুব একটা সুবিধা হয়নি।

পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, শুভেন্দুকে যতটা সক্রিয় দেখা যাচ্ছে, এবং সেই সঙ্গে তৃণমূলের মধ্যে যে মরিয়া ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে, খুব শিগগির এই পর্বের যবনিকা পতন হতে চলেছে। হতে পারে তার আগে আগামী কয়েকদিন এ ব্যাপারে টানটান উত্তেজনা ও আগ্রহ থাকবে রাজ্য রাজনীতিতে।

এদিন রাত প্রায় ১০টা নাগাদ অধিকারী বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যান প্রশান্ত। শিশিরের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।দু’জনের মধ্যে ঘণ্টা দেড়েক কথাবার্তা হয়। তবে আলোচনায় ঠিক কী কী বিষয় উঠে এসেছে তা নিয়ে মুখ খোলেননি কেউই। কারণ অধিকারী বাড়ি ছেড়ে বেরনোর সময় সাংবাদিকদের এড়িয়ে গিয়েছেন প্রশান্ত৷

দিনকয়েক আগেই নন্দীগ্রামে একটি বিরাট জনসভা করেন শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে তিনি দলের কোনও প্রতীক কিংবা নাম ব্যবহার করেননি। সেই সভা থেকে তিনি বেশ কিছু বার্তা দেন। বিশেষত বেশ কিছুদিন ধরেই রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে এই দাপুটে রাজনৈতিক নেতার। আগামী দিনে শুভেন্দু অধিকারী কোন পথ নেন, সেই দিকেই তাকিয়ে বাংলার রাজনৈতিক মহল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here