দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ

অযোধ্যায় বিতর্কিত জমির অধিকার নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট ঐতিহাসিক রায়দানের পর থেকেই প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে খুব সতর্ক সঙ্ঘ পরিবার ও বিজেপি নেতৃত্ব। রাম মন্দির আন্দোলন জাতীয় রাজনীতিতে তাঁদের উত্থানের আধারশিলা হলেও সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর কোনওরকম উগ্র উদযাপনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছিলেন মোহন ভাগবত।

বুধবার সে পথেই হাঁটলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মর্যাদা পুরুষ রামকে ভারতের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের প্রতীক বলে ব্যাখ্যা করতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায় বারবার উঠে এল ধর্মীয় সদ্ভাব, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং উন্নয়নের কথা। তিনি এও বলেন, “রাম মন্দির নির্মাণের প্রক্রিয়া হল রাষ্ট্রকে জোড়ার একটা প্রয়াস। নরকে নারায়ণের সঙ্গে জোড়ার, লোককে আস্থার সঙ্গে জোড়ার প্রক্রিয়া”।

অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের জন্য এদিন ভূমি পুজো হয়েছে। তাতে পৌরোহিত্য করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে রামমন্দির নির্মাণের জন্য রূপোর তৈরি প্রথম ইঁটটি গাঁথেন মোদী। তার পরেই তাঁর দীর্ঘ বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “হাজার বছর আগে বাল্মিকীর রামায়ণ প্রাচীণ ভারতকে যেভাবে পথ দেখিয়েছিল, যে রাম মধ্যযুগে তুলসীদাস, কবিরের লেখনীতে উঠে এসেছিলেন, সেই রামকেই স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে মহাত্মা গান্ধীর ভজনে অহিংসা আর সত্যাগ্রহের শক্তি হিসাবে দেখা গিয়েছে”।

তাঁর কথায়, “তুলসীদাসের রাম হলেন স্বগুণ রাম। আর কবিরের রাম হলেন নির্গুণ রাম। ভগবান বুদ্ধও রামের অনুরাগী ছিলেন। আবার কয়েকশ বছর ধরে এই অযোধ্যা নগরী জৈন ধর্মের আস্থার কেন্দ্র ছিল। রামের এই সর্বব্যপকতাই ভারতের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের জীবন চরিত্র”।

তাৎপর্যপূর্ণ হল, প্রধানমন্ত্রী এদিন অযোধ্যায় পৌঁছনোর ঠিক আগে টুইট করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে সরাসরি রাম মন্দিরের প্রসঙ্গ না আনলেও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশ তার চিরায়ত বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে, এবং আমাদের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে এই ঐতিহ্যকে সংরক্ষিত রাখবো”।

পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, মমতা হয়তো বোঝাতে চাইছিলেন অযোধ্যায় ভূমি পুজোয় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মেরুকরণের রাজনীতি করছেন। ভারতের সনাতন ঐতিহ্য তা নয়। কিন্তু কৌশলে মমতা বা কংগ্রেসিদের সেই রাজনীতির সুযোগ দিতে চাইলেন না প্রধানমন্ত্রী। বরং তাঁদের তুলনায় আরও উঁচু তারে সম্প্রীতি ও সৌভাতৃত্বের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে, মানবজীবনে আমরা যখন রামকে মেনে চলেছি, তাঁর আদর্শের পথে আমারা থেকেছি তখনই বিকাশ হয়েছে। সেই পথ থেকে বিভ্রান্ত হলেই বিনাশ হয়েছে। আমাদের সবার অনুভূতিকে গুরুত্ব দিতে হবে, সবার সঙ্গে থেকে সবার উন্নতি করতে হবে। সবার আস্থা অর্জণ করতে হবে”।

তবে হিন্দু ভাবাবেগকে স্পর্শ করার চেষ্টা যে প্রধানমন্ত্রী করেননি তা নয়। জয় শ্রী রাম ধ্বনি তুলে এদিন বক্তৃতা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আজ পুরো ভারত রাম ময়। পুরো দেশ রোমাঞ্চিত। প্রত্যেকের মনে যেন দীপাবলী। বহু বছরের অপেক্ষা শেষ হতে চলেছে। কোটি কোটি মানুষের বিশ্বাসই হয়তো হচ্ছে না যে জীবদ্দশায় তাঁদের এই স্বপ্নপূরণ হচ্ছে”। তাঁর কথায়, “অনেক বছর ধরে কাঠ আর তাঁবুর নিচে থাকা রামলালার জন্য এবার মন্দির নির্মাণ। ভাঙা গড়ার মধ্যে দিয়ে উঠে আসা এই মন্দির ইতিহাসে অনন্য হয়ে থাকবে”।

প্রধানমন্ত্রী এও বলেন, “ভগবানের রামের অদ্ভূত শক্তি দেখুন। ইমারত ধ্বংস হয়ে গেছে। অস্তিত্ব মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু রাম এখনও আমাদের মনে রয়েছে। আমাদের সংস্কৃতির আধার তিনি। ভারতের মর্যাদা পুরুষোত্তম হলেন ভগবান রাম”।

তবে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে এদিনও সমালোচনা করেছেন বিরোধী রাজনীতিকদের অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী অযোধ্যায় গিয়ে মন্ত্রপাঠ করছেন, দূরদর্শন থেকে শুরু করে সমস্ত টিভি চ্যানেলে তা দেখানো হচ্ছে এর থেকে বড় হিন্দু রাজনীতি আবার কী হবে। বরং উনি মুখে যেটা বলছেন সেটা ভড়ং মাত্র। সর্বজনের হিতের রাজনীতি বিজেপি কখনও করেনি, করবেও না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here