পিয়ালী মুখার্জী, কালনা: ইতিহাসের পাতা ওল্টালে কালনা শহরের অস্তিত্ব চোখে পরে। বহু প্রাচীন স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে এই অম্বিকা কালনা শহর। ভাগীরথী নদীর এক পারে কালনা ও অন্যপ্রান্তে শান্তিপুর।


সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার অম্বিকা-কালনায় অবস্থিত একটি প্রাচীন কালী মন্দির।
মন্দির দেখলে মনে হবে দু’টি খড়ের চালা এক সঙ্গে রাখা হয়েছে৷ মন্দিরে র গায়ে রয়েছে পোড়ামাটির কাজ। ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নগর সংকীর্তনের চিত্র৷ কালনা শহরের বাসিন্দাদের আরাধ্য দেবী সিদ্ধেশ্বরী কালীর মন্দির বাংলার কুটির দেউলের অন্যতম নিদর্শন৷ বছরভর পুজো হলেও কালীপুজোয় সিদ্ধেশ্বরী কালীকে ঘিরে উৎসবে মেতে ওঠেন শহরবাসী৷


মন্দির ফলকে উল্লেখ অনুযায়ী, ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমানের জমিদার চিত্র সেনের আমলে মন্দিরটি তৈরি হয়৷ প্রাচীন তন্ত্র সাধনার পীঠস্থান হিসেবে অম্বিকা অঞ্চলের কথা চৈতন্য কাব্যগুলিতে উল্লেখ আছে৷ জনশ্রুতি অনুযায়ী এই সিদ্ধেশ্বরী কালী সাধক অম্বরীশের আরাধ্য দেবী৷ এই কালীমূর্তিকে প্রাচীন জৈন ও তন্ত্র সাধনার একটি বিশেষ দিক চিহ্ন বলে মনে করা হয়। কালনা যে তন্ত্র ও গুহ্য সাধনার কেন্দ্র ছিল সেই প্রমাণও মেলে৷


প্রাচীন এই দেবীমূর্তির কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে৷ দেবীমূর্তি নির্মিত নিম কাঠ দিয়ে৷ শিব এখানে শবরূপী৷ দেবী এখানে বামাকালী মূর্তি৷ দেবীমূর্তি নিম কাঠ দিয়ে তৈরি হলেও শিবমূর্তি নিম কাঠের নয়৷ দেবীর ভয়ঙ্কর মূর্তি, দৃষ্টিতে প্রলয়ঙ্করী। বছরভর দেবীর পুজো হলেও বছরের কটা দিন মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে৷ কোজাগরী পূর্ণিমার কৃষ্ণা পঞ্চমী থেকে কৃষ্ণা ত্রয়োদশী পর্যন্ত দেবী দিগম্বরী অবস্থায় থাকেন৷ সেই সময় ভোগ, পুজো সব কিছুই হয় মন্দিরের বাইরে৷ এক সময় কাছের অম্বিকা পুকুরে থাকত দেবীর অজস্র বাসনপত্র৷ গরিব মানুষেরা বিয়ে বা অন্য অনুষ্ঠানে সেই বাসন ব্যবহার করে ফের তা পুকুরের জলে রেখে আসতেন৷

১৯২০-১৯২১ সালে ভূতনাথ অধিকারী এই মন্দির স্থাপন করেন।সাধন কালী মন্দিরটি সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের বিপরীতে, সাধন কালী মাটির মূর্তি, প্রতি বছর দিগম্বরীর সময় রং করা হয়। এই ঠাকুরের বিসর্জন হয় না।ভক্ত দানে মন্দিরটি সুন্দর ও সুগঠিত হয়ে উঠেছে।

তবে, মন্দিরের বর্তমান ব্যাবস্থাপনায় যথেষ্ট খামতি ধরা পড়লো। মায়ের দিগম্বরী মূর্তি কেবল মহিলাদেরই দেখার অধিকার আছে। এই সময় ছবি তোলাও নিষিদ্ধ। কোর্টের রায় কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শহর চলছে মন্দির তথা শহর চলছে নিজের ছন্দে। কোভিড কালে মানা হচ্ছে না কোনো দূরত্ববিধি। অসম্ভব ভিড়ে ঠাসা মায়ের গর্ভগৃহ। অধিকাংশের মুখেই নেই কোনো মাস্ক। কর্মকর্তাদের নজর নেই সেদিকে। মন্দিদের সেবাইত দের ব্যাবহার বেশ রুক্ষ। কোনো রকম সহযোগিতায় চোখে পড়লো না। পুজোর প্রস্তুতি চলছে মহা সমারোহে। তবে সারা শহর সেজে উঠেছে দীপান্বিতা উৎসবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here