দেশের সময়, বনগাঁ: বুধবার বনগাঁর গোপাল নগরের স্কুল মাঠে প্রশাসনিক সভা এদিন চেনা মেজাজেই শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সকলকে ধন্যবাদ জানানো, ওই এলাকার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের কথা বলা, মতুয়াদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানো—সবই চলছিল প্রত্যাশা মতোই। কিন্তু ছন্দ কাটল মাঝপথে। রেগে গেলেন, তার পরে অভিমানী হয়ে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী। এতটাই অভিমান, যে তিনি সব ছেড়ে চলে যাওয়ার কথাও বলে ফেললেন! বললেন, “মাঝেমাঝে মনে হয় আমায় কেউ চাইই না!”


বস্তুত, আজ মমতার সভার শুরু থেকে প্ল্যাকার্ড নিয়ে হাজির ছিলেন কয়েক জন। সাধারণ মানুষের ভিড় থেকেই তাঁরা মাঝেমাঝেই সে প্ল্যাকার্ড উঁচু করে জানাতে থাকেন অভাব-অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রী প্রথম থেকেই বাধা দেন। তিনি জানান, ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্প এসে গেছে। সেখানে সকলে সবকিছু জানান। প্রয়োজনে তাঁকে চিঠি লিখুন, নবান্নতে চিঠি লিখুন। কিন্তু রাজনৈতিক সভায় কেন এসব করছেন তাঁরা বারবার!

একাধিক বার বলার পরেও যখন এমনটাই ঘটতে থাকে, একসময় চটে যান মুখ্যমন্ত্রী। অভিযোগ করে বলেন, “আপনারা তিন-চার জন গোটা সভাটাকে কেন নষ্ট করছেন! আমি বারবার করে বলছি, এগুলো করতে যাবেন না। আপনাকে তো বুঝতে হবে কোনটা করতে পারি, কোনটা করতে পারি না। আমি প্রতিটা মিটিংয়ে দেখছি, চার-পাঁচ জনকে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আর মিটিংয়ে সামনে বসে গন্ডগোল করছে।”

মুখ্যমন্ত্রী এর পরে দাবি করেন, তিনি অনেক কাজ করেছেন এই এলাকার জন্য। যিনি প্ল্যাকার্ড তুলে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি সেল্ফ হেল্প গ্রুপের প্রতিনিধি একথা জানতে পেরে তিনি বলেন, “ছিল ২০ দিন, ৪০ দিন করে দিয়েছি আপনাদের কাজ। এটা ইনসেনটিভ প্রোগাম, আমি তিন মাস আগেই করে দিয়েছি। করতে দেরি হয় না। আপনাদের কাছে পৌঁছতে দেরি হতে পারে।”


তিনি আরও অভিযোগ করেন, “দেওয়ার তো একটা লিমিট আছে। বলার তো একটা জায়গা আছে। পরের মিটিং থেকে এসে যদি দেখি কেউ এরকম বলছেন, আমি সেই কাজটা করব না। পলিটিক্যাল মিটিংয়ে এসে সরকারের কাজ করব না। কেন্দ্রকে বলুন না জিএসটির টাকা দিতে। মনে রাখবেন অনেক কষ্ট করে সরকার চালাতে হচ্ছে। বিদ্যুতের দাম বাড়বে না, বাসের ভাড়া বাড়বে না, বিনা পয়সায় খাদ্য, বিনা পয়সায় টেস্টপেপার, বিনা পয়সায় জুতো—টাকা আসবে কোথা থেকে?”

প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগে বিহারের ভোট প্রচারেও একই সমস্যার মুখে পড়েছিলেন নীতীশ কুমার। তাঁর জনসভায় আচমকা অভাব-অভিযোগ জানাতে থাকেন কয়েক জন। সেটাই ফের বাংলায় দেখা গেল এদিন। যাঁরা প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে দাবিদাওয়া জানিয়েছিলেন তাঁরা কেউ বাইরের লোক বলে জানা যায়নি এখনও। স্থানীয় মানুষরাই জানিয়েছিলেন না-পাওয়া। কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, এমন অভ্যাস সংক্রামিত হতে শুরু করলে তা বিপদ বাড়াবে দলের।


তবে রাগারাগি করলেও, খানিক পরেই আবার অভিমানী হয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। জানান, তিনি স্পষ্ট কথা বলেন, তাই ভুল কিছু বলে ফেললে তাঁকে যেন মানুষ ক্ষমা করেন। অনুযোগের সুরে বলেন, “১০ কোটি লোককে সুযোগ সুবিধা দিয়েছি। ৫০ লক্ষ মানুষ যদি না পায়… তাহলেই হল।

এর থেকে বেশি করা সম্ভব?”
এর পরেই তাঁর দাবি, “এই কাজ যদি একজন করে দেখাতে পারে তা হলে একদিনের মধ্যে ইস্তফা দিয়ে চলে যাব। কাজেই সব কিছু করুন, আমাকে দুঃখ দেবেন না। আমাকে দুঃখ দিলে অভিমান করে চলে যাব। অনেক সময় মনে করি আমার থাকাই হয়তো উচিত নয়, এরা চায়ই না।“

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here