দেশেরসময় ওয়েবডেস্ক: অবশেষে খোঁজ মিলল ল্যান্ডার বিক্রমের। অরবিটারের ক্যামেরায় ধরা পড়ল ছবি। রেডিও যোগাযোগের চেষ্টা চলছে, জানালেন ইসরো চেয়ারম্যান কে শিবন।

প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হয়নি। আশা ছাড়েনি ইসরো। ভরসা রেখেছিলেন ইসরো কর্তা কে শিবন। গত ২৪ ঘণ্টায় মনিটরে চোখ রেখে বসেছিলেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা। সম্ভাবনা ছিল বার্তা পাঠাতে পারে অরবিটার। রবিবার সকালে (ভারতীয় সময়) সেই অরবিটারই খুঁজে বার করল বিক্রমকে। ইসরো জানিয়েছে, চাঁদের বুকে অক্ষত অবস্থাতেই আছে বিক্রম। তার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

শুক্রবার রাত ১টা ৫৫মিনিটে সফট ল্যান্ডিংয়ের আগেই ল্যান্ডার বিক্রমের সঙ্গে রেডিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ‘টাচ ডাউন’-এর শেষ ১৫ মিনিট বেড়ে দাঁড়ায় আধ ঘণ্টায়। উৎকণ্ঠায় হই চই শুরু হয়ে যায় ইসরোর মিশন কন্ট্রোল রুমে। ভেঙে পড়তে দেখা যায় ইসরো কর্তা কে শিবনকে। তবে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার তরফে জানানো হয়, এখনও ভরসা হারায়নি ইসরো। বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে জোরকদমে। চাঁদের কক্ষপথে বসানো অরবিটারই খুঁজে বার করতে পারে তাকে।

কে শিবন জানিয়েছেন, অরবিটারের থার্মাল ইমেজে ধরা পড়েছে বিক্রমের ছবি। তার শরীরের ভিতরে প্রজ্ঞানও অক্ষত অবস্থাতেই আছে বলে মনে করা হচ্ছে। অরবিটারের মাধ্যমে তার সঙ্গে রেডিও যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুন: গতি কমিয়ে ‘ব্রেক’ কষতে পারেনি ‘বিক্রম,’ তাই কি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন?

লক্ষ্যের কাছে পৌঁছেও বিক্রম কেন লক্ষ্যচ্যুত হলো তার সম্ভাব্য কিছু কারণ জানিয়েছিলেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা। সেখানে গতি নিয়ন্ত্রণে বিপর্যয় একটা বড় কারণ বলে মনে করা হয়েছিল। টাচ ডাউনের আগে গতি বেড়ে গিয়ে মোক্ষম ধাক্কার ফলে বিক্রম ছিটকে যেতে পারে এমনটাই জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।

কী বলা হয়েছিল—

গলদ হতে পারে ফাইন-ব্রেকিং পর্যায়ে

ইসরো জানিয়েছে, অরবিটার থেকে আলাদা হওয়ার পরে একটু একটু করে চাঁদের দিকে এগিয়ে গেছে বিক্রম। চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে শেষ ১০০ কিলোমিটারের দূরত্ব পেরিয়ে অবতরণের জন্য মোট চারটি পর্যায় ছিল, রাফ ব্রেকিং, ফাইন ব্রেকিং, হোভারিং ও প্যারাবোলিক ডিসেন্ট। রাফ ব্রেকিং উতরে গিয়েছিল বিক্রম। সমস্যা হয়েছিল ফাইন ব্রেকিং-এর সময়।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, চাঁদের ৩০ কিলোমিটার উপর থেকে নামা শুরু করার সময় বিক্রমের গতি ছিল ১,৬৮০ মিটার প্রতি সেকেন্ড। পরবর্তী ১০ মিনিটে সেটা ক্রমশ কমে দাঁড়ায় ১৪৬ মিটার/সেকেন্ড। এর পর শুরু হয় ফাইন-ব্রেকিং স্টেজ। চাঁদের থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরত্বে গতির উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে বিক্রম। শেষ ২.১ কিলোমিটারে তাই আর কোনও যোগাযোগই করা যায়নি তার সঙ্গে। ঘড়ির কাঁটায় তখন ১টা ৫৫ মিনিট।

চাঁদের ধুলোয় মহাজাগতিক রশ্মির বিকিরণে তাপমাত্রা বাড়তে পারে

আগামী ১৪ দিন ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিক্রমের থেকে সিগন্যাল মেলার অপেক্ষায় থাকবে ইসরো। এই সময়ের মধ্যে অরবিটারও কোঁজ চালাবে বিক্রমের। মহাকাশবিজ্ঞানীদের ধারণা, চাঁদে যে ১৪ দিন কাজ করার কথা ছিল রোভার প্রজ্ঞানের, সেই ১৪ দিন চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সূর্যের আলো পড়ার কথা। হিমশীতল, অন্ধকার দক্ষিণ মেরু অভিযানের জন্য তাই ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২১ সেপ্টেম্বর মধ্যেকার সময়টাকেই বেছে নিয়েছিল ইসরো। কারণ, বিক্রম ও প্রজ্ঞান চলবে সৌরবিদ্যুৎশক্তিতে, তাই গবেষণা, অনুসন্ধান, পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য চাঁদের ওই অংশে সূর্যের আলোকে পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারবে ল্যান্ডার ও রোভার।

গবেষকদের মতে, পৃথিবীর আয়োনোস্ফিয়ার যেমন মহাজাগতিক রশ্মিকে প্রতিফলিত করতে পারে। চাঁদে তেমনটা হয়না। সরাসরি আছড়ে পড়ে চাঁদের বুকে। আর চাঁদের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ণ ধুলিকণায় সেই রশ্মির ঝাপটা লেগে উত্তাপ অনেকটাই বাড়ে। ল্যান্ডিং-এর সময় বিক্রম গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এই ধূলিকণা যন্ত্রের ভিতরে ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তা ছাড়া ধূলিকণার ঘর্ষণে উৎপন্ন তাপও রেডিও যোগাযোগ ছিন্ন করে দিতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here