অশোক মজুমদার

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি পরস্পরের সহকারী। যেকোন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এরা মিলে যান। তার দূরদর্শিতা যে কতদূর সঠিক তা গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত ওই তিন বিরোধী দলের নেতাদের আচরণ ও বক্তব্য থেকে আবার প্রমাণিত হল।

গতকাল সন্ধ্যা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী তথা আমাদের প্রিয় দিদির পায়ে আঘাত লাগার ঘটনা ঘটে। বিদ্যুৎবেগে তা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। যন্ত্রণায় তিনি তখন ঠিক করে কথাই বলতে পারছেননা। ঐ অবস্থায় গ্রিন করিডোরে তাকে কলকাতায় আনা হয়। এসব আপনারা সবই দেখেছেন, শুনেছেন। কিন্তু নিজেদের বিবেককে প্রশ্ন করে দেখুন তো এই ঘটনা নিয়ে বিরোধী দলের বক্তব্য ও টিপ্পনিগুলি কী সাধারণ ভদ্রতা, সৌজন্য ও শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছেনা? দিদির বিরোধিতায় সবসময় সব শেয়ালের এক রা’এর মত এমনই অশালীন হয়ে ওঠেন এরা। একজন মহিলার প্রতি নুন্যতম সন্মানটুকুও বাংলার বিরোধী রাজনীতিবিদরা দেখাতে জানেন না।

আমি আমার ষাটোর্ধ্ব জীবনে ৪০ বছরের সাংবাদিকতা করার সময়ে বারবার বাংলার জননেত্রীর প্রতি এদের এই অসৌজন্য ও হিংস্রতা দেখেছি। একজন মুখ্যমন্ত্রী তো বটেই, তারও আগে একজন মহিলার আঘাত নিয়ে এত কটাক্ষ, ট্রোল, হাসাহাসি কী করা যায়! তাকে দেখতে যাওয়া, খোঁজখবর নেওয়া তো দূরের কথা, তার আঘাতকে নাটক, ভন্ডামি বলে প্রমাণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন এরা সবাই! বিজেপি এ কোন রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমদানি করলো বাংলায়! আরো আশ্চর্য কমিউনিস্ট ও কংগ্রেস তাল মেলালেন। একজনের আঘাত নিয়ে সমবেদনার বদলে এভাবে সমালোচনা করা যায়! এরাই আবার কথায় কথায় বুক ফুলিয়ে নিজেদের এলিট, সুশিক্ষিত, রুচিশীল বলে নিজেদের ঢাক পেটান! এদের এই কুরুচি দেখে আমি সত্যিই অবাক!

চূড়ান্ত অসৌজন্য ও ব্যক্তিবিদ্বেষ থেকেই আজ আসলে আপনারা নিজেদের স্বরূপ দেখিয়ে দিলেন। আপনারা বুঝিয়ে দিলেন জননেত্রীর সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে ময়দানে লড়াই করার মত মানসিকতা ও ক্ষমতার অভাব রয়েছে আপনাদের। তবে আপনারা জেনে রাখুন, এই নোংরা রাজনীতি আমদানি করে আপনারা কিন্তু সাধারণ মানুষের মনে ঘৃণার বীজ পুঁতছেন। কারণ রাজনৈতিক নেতারা আমাদের সামাজিক অভিভাবক। তাদের আচার আচরণই সমাজের আয়না। সেখানে আপনারা রাজনীতিকে শত্রুতার পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তার ফল কিন্তু অমৃত হবেনা। আগামি প্রজন্মের কাছে এর জন্য কৈফিয়ত কিন্তু আপনাদেরই দিতে হবে।

রাজনীতিতে একদল জিতবে, এক দল হারবে। এটাই রীতি। জনগণের রায়ই সেটা ঠিক করে দেয়। তার জন্য সাধারণ সৌজন্যের বদলে এমন অশালীনতা কেন? রাজনৈতিক ময়দানে একে অপরকে টেক্কা দেওয়া, কথার উত্তাপ তো চলতেই থাকে। ব্যক্তিগত কিছুই সেখানে থাকেনা, ছোট থেকে তাই দেখে এসেছি। বিরোধী থাকাকালীন সময় এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই বারবার আঘাত করা হলেও সরকারে এসে তিনি কখনও বিরোধী দলের কোন নেতার প্রতি অসৌজন্যমূলক কথা বলেননি। বরং যেকোন বিরোধী নেতার অসুস্থতায় তিনি হাসপাতালে ছুটে যান। প্রাক্তন চীফ মিনিস্টার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এর বাড়ি একাধিক বার খোঁজ নিতে গেছেন।। কারও মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করতে তিনি কখনও ভোলেননা। কিন্তু তার অসুস্থতায় আপনারা যা করলেন তা নজিরবিহীন! আসলে আপনারা রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রজ্ঞার সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে আঙুর ফল টক বলে চিৎকার করছেন।

আশঙ্কার কথা এই যে আপনাদের এই দেউলিয়া রাজনীতি বাংলার সমাজজীবনে ছাপ ফেলছে। প্রতিবেশীর সঙ্গে হাজার বিবাদ থাকলেও বাড়িতে বিয়ে, অন্নপ্রাশন, জন্মদিন বা শ্রাদ্ধের মত কোন অনুষ্ঠানে ওই প্রতিবেশী অবশ্যই নেমন্তন্ন পান। এটাই আমাদের সামাজিক রীতি। কারও বিপদ হলে ছুটে যাই আমরা। তার সঙ্গে ঝগড়া বা বিবাদের কথা মাথায় আসেনা। সুখ ও দুঃখকে পরস্পরের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়াই আমাদের সংস্কৃতি, এভাবেই আমরা বড় হয়েছি। কিন্তু আপনাদের আমদানি করা অপসংস্কৃতি বাংলার সমাজজীবনকে কলুষিত করছে। আপনারা নিজেরা তো অধঃপাতে গেছেনই, আপনাদের হাতে পড়ে রাজনীতিরও অধঃপতন হয়েছে। এর চেয়ে বেদনাদায়ক সত্য আর কিছু নেই। ২০২১ এ বাংলার মানুষের ২ মে দুপুরেই এর উত্তর দেবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here