দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় হিউস্টনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এমনকী আমেরিকায় নির্বাচনের আগে কিছুটা আগ বাড়িয়ে স্লোগান দিয়েছিলেন, আব কি বার ট্রাম্প সরকার!

মঙ্গলবার যেন ছিল ঋণ শোধের পালা। নিউইয়র্কে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে, ট্রাম্পও বিশেষণে বিশেষণে ভরিয়ে দিলেন মোদীকে। বললেন, “উনি এক জন ভদ্রলোক ও মহান নেতা। আমি বেশ মনে করতে পারি আগে ভারতের অবস্থা ছিল খুবই দীর্ণ। খুবই অসন্তোষ ও দ্বন্দ্ব ছিল সেখানে। কিন্তু মোদী সবাইকে একসঙ্গে করে চলছেন”। এখানেই থামেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, “বাবা যেমন সবাইকে আগলে একসঙ্গে নিয়ে চলে, মোদীও তাই করছেন। হয়তো উনিই ফাদার অব ইন্ডিয়া। আমরা তো ওঁকে ফাদার অব ইন্ডিয়াই বলি”।

এরই পাশাপাশি মোদীর মেজাজ তথা স্পিরিটের তারিফ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প বলেন, উনি হলে ভারতের এলভিস (পড়ুন এলভিস প্রেসলি)। রকস্টার।

ভারতীয় সময়ের রাত ৯ টা নাগাদ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শুরু হয়েছিল। তার পর ট্রাম্পের এ হেন বিশেষণ জানাজানি হতেই সোশাল মিডিয়ায় হাসাহাসি শুরু হয়ে গিয়েছে। বিরোধীরা টিপ্পনি করতে ছাড়ছেন না। এমনকী ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে তীব্র সমালোচনাও করছেন।

স্বাধীনতার পর থেকে মহাত্মা গান্ধীকে জাতির জনক তথা ফাদার অব দ্য নেশন বলা হয়। কিন্তু ফাদার অব ইন্ডিয়া তকমাটা একটু বাড়াবাড়ি বলেই মতে অনেকের।

পর্যবেক্ষকদের অনেকে বলছেন, দুই রাষ্ট্রনেতা কতটা কূটনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন তা স্পষ্ট নয়। যেটা এখনও পর্যন্ত পরিষ্কার তা হল, পরস্পর পরস্পরকে রাজনৈতিক ভাবে অক্সিজেন যোগানোর চেষ্টা করছেন। মোদী যেমন আমেরিকান ভারতীয়দের ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির হয়ে পরোক্ষে ভোট চাইছেন। তেমনই ট্রাম্প মোদীকে ফাদার অব ইন্ডিয়া বলে ভারতে মোদীর রাজনৈতিক জমিতেই সার জল দিতে চেয়েছেন।

কংগ্রেসের একাধিক প্রবীণ নেতার কথায়, দুই রাষ্ট্রনেতাই নিজের নিজের দেশের সার্বভৌমত্বের শর্তকে লঙ্ঘন করছেন। ভারতের সংবিধানেই বলা হয়েছে যে ভারত যেমন অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবে না, তেমনই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য কাউকে নাক গলাতে দেবে না। অথচ মোদী ট্রাম্পের হয়ে কার্যত নির্বাচনী প্রচার করে আমেরিকার ঘরোয়া রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে চাইছেন। একই ভাবে ভারতের ঘরোয়া রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে চাইছেন ট্রাম্প। এটা চলতে পারে না।

কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ট্রাম্প বলেছেন মোদী ক্ষমতায় আসার আগে ভারতের অবস্থা দীর্ণ ছিল। ভুলে গেলে চলবে না যে ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী বিজেপি নেতা হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছিলেন না। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারতকে যখন অপমান করছেন তখন তিনি মুখ বুঁজে শুনলেন কী ভাবে? দেশে ফিরে ওনাকে এর কৈফিয়ত দিতেই হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here