সম্পাদকীয়–সম্প্রতি জঙ্গলমহলের এক কোণে সাতজন শবর জনজাতির মানুষের মৃত্যুর খবর নিয়ে গোটা রাজ্য জুড়ে শোরগোল পড়েছে।সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট অনুসারে বিনা চিকিত্সা ও অভাবজনিত কারণেই এই মৃত্যু বলে জানা যাচ্ছে।সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই ঘটনা নিয়েও যথারীতি চাপানউতোর শুরু হয়েছে।বিরোধীদের দাবি রাজ্যে যে উন্নয়নের প্রচার চলে তা যে কত বড় মিথ্যে এই অভাবজনিত কারণে আদিবাসী জনজাতির মৃত্যু তারই প্রমাণ।অন্যদিকে সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রীর দাবি কেউ না খেতে পেয়ে মারা যায় নি।অষুধ না খাওয়ার ফলে কয়েকজন মারা গেছে,এটা আদিবাসী মানুষের অসচেতনতার জন্য হয়েছে।প্রশাসন জানাচ্ছে বিষয়টা পুজোর ছুটির দিন গুলোতে হয়েছে,সে সময় প্রশাসন এ বিষয়ে নজর দিতে পারে নি,সেটাই এই ঘটনার বড় কারণ।

না,আমরা কোন রাজনৈতিক বাদ বিবাদের মধ্যে যেতে চাইছি না,আমরা কোন দলের পক্ষে বা বিপক্ষে বলতেও চাইবো না,আমরা শুধু এটা বলবো আজকের দিনে যে ভাবে এই শবর জনজাতির মৃত্যু হল তা আমাদের সভ্যতা -কৃষ্টির পক্ষে খুবই বেদনার ও দুর্ভাগ্যের।কেননা আমরা তো একটা গণতান্ত্রীক দেশে ও রাজ্যে বসবাস করি,যেখানে অভাবজনিত কারণে বা অনাহারে কারোর মৃত্যুকে সাংবিধানিক অপরাধ বলে মানা হয়ে থাকে।আজকের সমাজে কত সরকারি প্রকল্পের ঘোষণা,কত নানা সুযোগ সুবিধার কথা বলা,তার পরেও কেন অনাহার বা অর্দ্ধাহারে মানুষ মারা যাবে!সরকারি নানাবিধ প্রকল্প তো প্রান্তিক পেছিয়ে পড়া মানুষজনদের কথা ভেবেই করা, তা হলে তার সুযোগ যদি সেই মানুষজনদের কাছে না যায় তার দায় তো প্রশাসনকেই নিতে হবে।পুজোর ছুটি ছিল তাই প্রশাসন খেয়াল রাখতে পারেনি,এটা কোন যুক্তি হতে পারে না।প্রশাসন ছুটি নিয়ে বসে থাকবে আর মানুষ তার অভাব অনটনের বোঝা মাথায় নিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে,এমনটা হতে থাকলে সেই প্রশাসনের আর যাই হোক উন্নয়নের ঢাক পেটাবার কোন নৈতিক অধিকার থাকতে পারে না।এ রাজ্যের সরকার গরিব প্রান্তিক মানুষের কথা ভেবে নানা সরকারি প্রকল্পের ঘোষণা করেছে,তা কার্যকর করার দায়িত্ব অবশ্যই প্রশাসনের।তাই সাতজন শবর সম্প্রদায় মানুষের মৃত্যুর দায় থেকে প্রশাসন মুক্ত হতে পারে না।আমরা প্রশাসনকে মানবিক ও সংবেদনশীল দেখতে চাই।প্রশাসন বুঝুক গরিব অসহায় মানুষের যন্ত্রনা হাহাকার।গোটা দেশের মত এ রাজ্যেও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজনদের অবস্থা এখনও খুব খারাপ।তাদের কাজ নেই,ঘর নেই,খাওয়া নেই।সব মিলিয়ে এই সব মানুষ বাস করে এক নেই রাজত্বে।এখান থেকে এদের বার করে আনতে শুধু রাজনীতি করলে হবে না, দায়বদ্ধ হতে হবে,মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকার করতে হবে,এদের জন্য কিছু করে দেখাতে হবে।এদেশের সব রাজনৈতিক দল ও তাদের প্রশাসনের বোঝবার সময় এসেছে এ দেশের উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের চেয়ে সংখ্যায় অনেক বেশী এই নিম্নবিত্ত আদিবাসী মানুষ,এদের দুঃখ ঘোচানোর চেষ্টা না করলে কেউ শাসন ক্ষমতায় টিঁকে থাকতে পারবে না,এঁরা জাগলে সবার ক্ষমতা কেড়ে নেবে একদিন,তাই এদের পাশে দাঁড়াতে হবে,এই মানুষজনদের পিঠে হাত রেখে সব নেতা নেত্রী ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের বলার সময় এসে গেছে- মানুষ বড় কাঁদছে।মানুষের এই কান্নাকে উপেক্ষা করলে এ রাজ্যের শাসককেও ভুগতে হবে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here