দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ চন্দ্রযান ২ মিশন নিয়ে সংসদে বেফাঁস মন্তব্য করে তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিলেন সাংসদ সৌগত রায়। লোকসভায় সাংসদের দাবি, “চন্দ্রযান ২ মিশন পুরোপুরি ব্যর্থ। দেশের নাম খারাপ হয়েছে।” এখানেই থামেননি তিনি। ফের মন্তব্য করেন, চন্দ্রযান মিশনের ব্যর্থতার জন্য যারা দায়ী, তাদের চিহ্নিত করুক কেন্দ্র।

তৃণমূল সাংসদের এমন মন্তব্যের পরেই হইচই শুরু হয়ে যায় লোকসভায়। মন্তব্য প্রত্যাহার করারও দাবি ওঠে। সাংসদের বক্তব্যকে খারিজ করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন পাল্টা বলেন, দেশ শুধু নয় ইসরোর চন্দ্রযান ২ মিশন বিশ্বের কাছেই এক মাইলফলক। মহাকাশ গবেষণার জগতে ভারতের সম্মান বাড়িয়ে দিয়েছে।

তৃণমূল সাংসদকে উদ্দেশ্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আপনি জানেন একটা মিশনের জন্য কী পরিমাণ অর্থ ও পরিশ্রম লাগে? বছরের পর বছর গবেষণা, বহু মানুষের অবদান রয়েছে এই মিশনের পিছনে। কীভাবে এমন একটা ঐতিহাসিক অভিযানকে ব্যর্থ বলতে পারলেন আপনি?”

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কথায় যে চিঁড়ে ভেজেনি সেটা টের পাওয়া যায় এর কিছুক্ষণ পরেই। বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত সরকারি অনুদান সম্পর্কিত একটি আলোচনায় সৌগতবাবু ফের বলেন, এই অভিযান কী কারণে ব্যর্থ হয়েছে সেটা আগে খুঁজে বের করুক সরকার। তাঁর দাবি, মহাকাশ গবেষণা সংক্রান্ত এমন ব্যাপারে অতিরিক্ত বিনিয়োগ করা কোনওমতেই উচিত হবে না কেন্দ্রের।

সাংসদের কথায়, কৃষি ও কর্মসংস্থানের জন্য তেমনভাবে অনুদান দেওয়ার কথা ভাবছে না কেন্দ্র। দেশ থেকে আগে বেকারত্বের ভয় তাড়াতে হবে। তারপর অন্যান্য বিষয়ে ভাবা যাবে।

সৌগত রায়ের এমন মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে বিজেপির মীনাক্ষী লেখি বলেন, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ঐতিহাসিকভাবে ভাল কাজ করে এসেছে। এখনও করছে। সাংসদের এইসব ব্যাপারে আরও ওয়াকিবহাল থাকা দরকার।

এর আগে চাঁদের দক্ষিণ পিঠে চন্দ্রযানের ল্যান্ডার বিক্রমের আছড়ে পড়ার কথা মেনে নিয়েছিল কেন্দ্র। লোকসভার প্রশ্নোত্তর পর্ব চলাকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং বলেছিলেন, “চাঁদের মাটির খুব কাছাকাছি গিয়ে গতিবেগে গলদ হয়ে যায় বিক্রমের। যে নির্দিষ্ট মাত্রার বেগ তার সিস্টেমে আপডেট করা ছিল সেটা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে প্রবল বেগে আছড়ে পড়ে বিক্রম। যে জায়গায় তার ল্যান্ড করার কথা ছিল তার থেকে অন্তত ৫০০ মিটার দূরে ছিটকে পড়ে।” তবে দেশের চন্দ্রযান মিশনকে কোনওভাবেই ব্যর্থ বলেননি তিনি। বরং ইসরোর সাফল্যের প্রশংসা করেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, গত ৭ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সময় মধ্যরাতে চাঁদে নামার কথা ছিল চন্দ্রযান ২-এর। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের কয়েক সেকেন্ড আগে থেকে বিক্রম ল্যান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ইসরোর গবেষকদের ধারণা যে, চাঁদের মাটিতে হার্ড ল্যান্ড করেছিল বিক্রম। অর্থাৎ যে গতিতে নামার কথা ছিল তার থেকে বেশি গতিতে নেমেছিল। ফলে চাঁদের মাটিতে ধাক্কা খেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ল্যান্ডার। তার ফলেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

গত মঙ্গলবার চাঁদের মাটিতে ল্যান্ডারের ধ্বংসাবশেষের ছবি সামনে আনে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। আছড়ে পড়ার ফলে কী ধরনের অভিঘাত হয়েছিল এবং কী ভাবে ল্যান্ডারের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে রয়েছে সেই ছবি ধরা দেয় নাসার লুনার রেকনিসেন্স অরবিটার তথা এলআরও-তে । নাসার দাবি, চেন্নাইয়ের ইঞ্জিনিয়ার সন্মুগ সুব্রহ্মণ্যম প্রথম সেই ধ্বংসাবশেষ চিহ্নিত করেন। ইসরোর চেয়ারম্যান সেই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, অসরো আগেই দেখতে পেয়েছে বিক্রমের ধ্বংসাবশেষ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here