দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: সন্দেশখালির হাটগাছি রবিবার সকালে থমথমে। গ্রামবাসীদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। ঘটনাস্থলে পুলিশ টহল চলছে। দিল্লি থেকে ফিরে রবিবার সন্দেশখালি যাচ্ছেন মুকুল রায়।
মুকুল রায়ের সঙ্গে যাচ্ছেন চার সদ্য নর্বাচিত সাংসদ লকেট চ্যাটার্জি, অর্জুন সিং, শান্তনু ঠাকুর ও জগন্নাথ সরকার। যাচ্ছেন সায়ন্তন বসু ও দুলাল বর।
এই উত্তপ্ত বাতাবরণে কিন্তু অত্যন্ত সংযত ভাষায় শান্তিরক্ষার আবেদন জানিয়েছেন বসিরহাটের সদ্য নির্বাচিত তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান।
রবিবার এক বিবৃতিতে নুসরত বলেছেন, “বন্ধুরা, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। আমাদের সবাইকে এখন অবশ্যই শান্তির আবেদন করতে হবে। এটা কোনও সাম্প্রদায়িক বিষয় নয়, আমি সবসময়ই মানবতা ও ধর্ম নিরপেক্ষতার পক্ষে। যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁরা যে দলেরই হোন, তাঁদের পরিবারবর্গের জন্য আমি প্রার্থনা করছি। সর্বাগ্রে আসে মানবতা। আমি তাই আমার সংবাদ মাধ্যমের বন্ধুদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য। বসিরহাট একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এলাকা। কিন্তু সেখানকার মানুষ যাতে নিরাপদে থাকেন এবং তাঁরা যাতে আর কষ্ট না পান, তা আমরা সুনিশ্চিত করব। ধন্যবাদ।”
সন্দেশখালি হাটগাছি পতাকা খেলাকে কেন্দ্র করে বিজেপি তৃণমূলে সংঘর্ষ নিহত তিন জন। নিহতদের মধ্যে কায়ুম মোল্লা তৃণমূলের ও সুকান্ত মণ্ডল ও প্রদীপ মণ্ডল নামে দুই যুবক বিজেপি কর্মী। শনিবারের এই ঘটনার পর থেকে গোটা এলাকা থমথমে। এলাকায় পুলিশবাহিনী টহল দিচ্ছে। আহত বেশ কয়েকজনকে মিনাখাঁ গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উভয় পক্ষে বেশ কয়েকজন নিখোঁজ। কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধার করতে মাছের গাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সন্দেশখালি-ন্যাজাট-মিনাখাঁ থানার বিশাল পুলিশবাহিনী।
এই ঘটনার জেরে রাজ্য জুড়ে বিজেপি কর্মি সমর্থকেরা রবিবার দুপুর ১টা নাগাদ বিভিন্ন রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ মিছিল করে৷ উত্তর ২৪পরগনার বনগাঁ বাটা মোড়ের কাছে বিজেপি নেতা দেবদাস মন্ডলের নেতৃত্বে যশোর রোড অবরোধ করলে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। দেখুন – লাইভ
নিহত বিজেপি কর্মী প্রদীপ মণ্ডলের ভাই শ্যামল মণ্ডলের অভিযোগ, তাঁর দাদা বিজেপির পতাকা টাঙাচ্ছিলেন। তাঁকে তাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা গুলি করে। তাঁর আরও অভিযোগ, পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখে, কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
অন্য দিকে, তৃণমূলের নিহত কর্মী কায়ুম মোল্লার পরিবারের লোকেদের পাল্টা অভিযোগ, পুলিশের সামনেই নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছে কায়ুমকে।
স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, শনিবার তৃণমূলের মিছিল লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছিল বিজেপি কর্মীরা। সেই সময় কাইয়ুমের মাথায় গুলি লাগে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাঁকে রাস্তার ধারে টেনে এনে ধারালো অস্ত্রের কোপ বসানো হয়। শাসক দলের দাবি, বিজেপি কর্মীদের হামলায় মৃত্যু হয়েছে কায়ুম-সহ আরও কয়েকজন তৃণমূল কর্মীর।
অন্য দিকে, বিজেপি দাবি করেছে, তৃণমূল কর্মীদের হামলায় তাদের দলের দুই কর্মী নিহত হয়েছেন। তাঁদের নাম, সুকান্ত মণ্ডল (২৮) ও প্রদীপ মণ্ডল (৩৬)। বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসুর দাবি, ঘটনায় খোঁজ মিলছে না আরও দুই বিজেপি কর্মীর।
টুইট করে এই খুনের ঘটনায় সরাসরি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন মুকুল রায়। তাঁর কথায়, “এই ঘটনার পুরো দায়িত্ব মমতার।”
তবে সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে তাঁর অমিত শাহের দ্বারস্থ হওয়াকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তাঁদের মতে, সন্দেশখালির ঘটনাকে শুধু বাংলায় না আটকে রেখে জাতীয় স্তরে তুলে ধরতে চাইছে বিজেপি। যেমনটা হয়েছিল গতবার পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে পুরুলিয়ার ঘটনায়।