দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শুভেন্দু অধিকারীর টেক্সট মেসেজ পাওয়ার পর মুখ খুললেন তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়ও। তিনিই স্পষ্টতই জানিয়েছেন, তিনি যা দাবি করেছিলেন তা ষোলো আনা সত্যি। তাঁর কথায়, “যা বলেছিলাম, তা সত্যনিষ্ঠার সঙ্গেই জানিয়েছিলাম, শুভেন্দু মত পরিবর্তন করলে তিনিই বাকিটা বলবেন।”
সৌগতবাবুকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, শুভেন্দুর সঙ্গে কি ফের বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে? জবাবে তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে আর সম্ভবনা নেই।”
মঙ্গলবার রাতে সদ্য প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বৈঠকের পর সৌগত রায় দাবি করেছিলেন, “আলোচনা খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ বাতাবরণে হয়েছে।” সেই সঙ্গে তিনি বলেছিলেন, “শুভেন্দু তৃণমূলে রয়েছেন। ও তৃণমূল ছেড়ে কোথাও যাবে না। বাকিটা শুভেন্দুই বলবে।” সৌগতবাবুর সেই কথায়, তৃণমূলের অনেকের মধ্যেই আশার সঞ্চার হয়েছিল। এমনকী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় রাতারাতি ভোল বদল করে বলেছিলেন, শুভেন্দু আমার ভাই।
অথচ বুধবার বেলা গড়ানোর আগে সেই শুভেন্দুরই একটি টেক্সট মেসেজে ফের আন্দোলিত তৃণমূল। কারণ, সূত্রের মতে, দলের এই দাপুটে তরুণ নেতা জানিয়ে দিয়েছেন, এক সঙ্গে কাজ করা তাঁর পক্ষে আর সম্ভব নয়। অর্থাৎ ‘ব্যাক টু স্কোয়ার ওয়ান’।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার রাতে উত্তর কলকাতার কোনও এক বাড়িতে শুভেন্দু অধিকারী সঙ্গে ওই বৈঠকে সৌগত রায় ছাড়াও ছিলেন লোকসভায় তৃণমূল দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও পেশাদার ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর।
এদিন শুভেন্দুর মেসেজ পাওয়ার পর সৌগতবাবু আরও বলেছেন, “হ্যাঁ আমাকে একটা হোয়াটসঅ্যাপ টেক্সট করেছে। টেক্স ব্যক্তিগত, তাই আমি এর বেশি আর বলতে পারব না।”
মঙ্গলবার রাতে ওই বৈঠক চলাকালীন স্পিকার ফোনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ধরা হয়েছিল। সূত্রের মতে, দিদির সঙ্গে শুভেন্দুর কথাও হয়।
পর্যবেক্ষকদের মতে, তৃণমূল বোঝাতে চাইছে, শুভেন্দু গতকালের বৈঠকে তাঁদের কথা দিয়েছিলেন যে তিনি দলেই থাকবেন। তার পর রাতে ফের মত বদল করেছেন। সৌগতবাবু সত্যের কোনও অপলাপ করেননি।
আজ আর উত্তেজিত কথা নয়!
সৌগত রায়কে পাঠানো শুভেন্দু অধিকারীর হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে ফের উত্তেজনা ছড়িয়েছে। তার পর শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শুনে সত্যিই মনটা খারাপ হয়ে গেল।”
মঙ্গলবার রাতে শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠকের পর সৌগত রায় দাবি করেছিলেন, আলোচনা খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে। শুভেন্দু তৃণমূল ছাড়ছেন না।
তার পরপরই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, “আগের কথার আর পোস্টমর্টেম নাই বা করলেন। সব যদি ভালয় ভালয় মিটে যায় তা হলেই তো সবার ভাল। শুভেন্দু আমার ভাইয়ের মতো। আমাদের উদ্দেশ্য তো সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাস্ত করা। নিজেদের ঐক্যবদ্ধ রাখা।”
কিন্তু মঙ্গলবার রাত আর বুধবার দুপুরের রাজনৈতিক পরিবেশের যেন আসমান-জমিন ফারাক। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া জানতে তাঁকে ফের ফোন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, “গত রাতে সৌগতদার কথা শুনে এতটাই আনন্দ পেয়েছিলাম যে রাত দেড়টা পর্যন্ত ছেলের সঙ্গে আড্ডাও মেরেছি। খুব আনন্দ হচ্ছিল। তৃণমূল তো একটা পরিবারের মতোই। কিন্তু আজ আপনাদের থেকে শুনছি টেক্সট মেসেজের কথা। খারাপ লাগছে।”
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক ভাবে বরাবরই আগ্রাসী মেজাজের। তা নিয়ে বাইরে বিরোধীরা সমালোচনা করলেও. এটাও ঠিক যে সময়ে সময়ে তৃণমূলের জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর সভার পর তাঁকে আক্রমণাত্মক মেজাজে দেখা যায়। পরে শুভেন্দু হুগলি রিভারব্রিজ কমিশনের চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিলে সেই পদে তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে তাঁর এদিনের বক্তব্য থেকে অনেকে মনে করছেন, শুভেন্দুর সঙ্গে ব্যক্তিগত বৈরিতা চান না তিনি। রাজনৈতিক ভাবে সওয়াল জবাব তো হতেই পারে। সেটা রাজনীতির দস্তুর।
শুভেন্দু অধিকারীর এই অবস্থান সামনে আসার পর নতুন করে উজ্জিবীত হয়ে উঠেছে বিজেপি শিবির। মুকুল রায় কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘সৌগতদার বয়স হয়েছে। কাল কী হয়েছে বুঝতে ভুল করেছেন।’ নেত্রীর কাছে বেশি নম্বর পেতেই সৌগত রায় আগাম এত কথা বলেছিলেন বলে তোপ দেগেছেন বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়।