দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পরিযায়ী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্য আগামী ২০ জুন বিহারের খাগাড়িয়া জেলার পঞ্চায়েত ভবন থেকে নতুন প্রকল্পের সূচনা করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যে প্রকল্পের পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে—‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অভিযান’। কিন্তু কেন্দ্রের এই প্রকল্পের আওতা থেকেও আপাতত বাদ পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন প্রকল্পের মুখ্য বৈশিষ্ট্যগুলি জানাতে গিয়ে বলেছেন, দেশের ৬ টি রাজ্যের ১১৬টি জেলা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে। লকডাউনের সময় এই ১১৬টি জেলায় সব থেকে বেশি সংখ্যায় পরযায়ী শ্রমিক ফিরে এসেছেন। তাঁদের অবিলম্বে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অভিযান শুরু হতে চলেছে। ওই ৬ টি রাজ্য হল, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশা।
নির্মলাকে প্রশ্ন করা হয়, পশ্চিমবঙ্গ কেন বাদ পড়ল? কারণ, বাংলায় পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা কম নয়। তাঁদের কর্মসংস্থানের কী হবে? খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি বলেছেন, বাংলায় অন্তত ৬ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে এসেছেন।
এ প্রশ্নের জবাবে নির্মলা বলেন, “বাংলাকে বাদ দেওয়ার ব্যাপার নয়। কিছু শর্তপূরণের প্রয়োজন ছিল।” এ কথা বলেই কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন সচিব নাগেন্দ্র নাথ সিনহাকে এর বিশদে জবাব দিতে বলেন অর্থমন্ত্রী। গ্রামোন্নয়ন সচিব বলেন, “কোনও জেলায় ন্যূনতম ২৫ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে এলে সেই জেলাকে এই প্রকল্পের আওতায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। রাজ্যগুলিকে বলা হয় ১৫ জুনের মধ্যে সেই তালিকা দিতে। বাংলায় হয়তো অত শ্রমিক ফিরতে পারেনি বা সে ব্যাপারে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।”
পর্যবেক্ষকদের মতে, গ্রামোন্নয়ন সচিবের বক্তব্য থেকেই পরিষ্কার যে এর দায় রাজ্যের উপরেই ঠেলে দিতে চেয়েছেন তিনি। আবার পরে নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, এই ১১৬ টি জেলার তালিকাই চূড়ান্ত নয়। শর্ত পূরণ করলে নতুন জেলার নামও অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে।
পরে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের এক কর্তা এদিন বলেছেন, আসলে কেন্দ্রের এ ধরনের প্রকল্প বাংলায় বাস্তবায়নের ব্যাপারে বাংলার অনীহা রয়েছে। যেমন আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প বাংলায় বাস্তবায়িত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান প্রকল্প খাতে চাষীরা যে বছরে ৬ হাজার টাকা করে পাওয়ার কথা তাও বাংলায় বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে বাংলার চাষীরা বছরে ৬ হাজার টাকা পাওয়ার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ তাঁদের কাছে এই টাকাটা কিন্তু কম বড় টাকা নয়।
প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অভিযানের আওতায় কেন্দ্রের অনুদানে চলা ২৫ টি পরিকল্পনা চিহ্নিত করেছে। এই প্রকল্পগুলির আওতায় পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজ দেওয়া হবে। এই কারণে এই ২৫ টি প্রকল্প খাত থেকে মোট ৫০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল তৈরি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের এমন ভাবে কাজে লাগানো হবে যাতে গ্রামে স্থায়ী সম্পত্তি তৈরি করা যায়। যেমন গ্রামের রাস্তা, জল সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরি করা, গৃহ নির্মাণ ইত্যাদি।
তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, কেন শুধু ১২৫ দিন ধরে কেন অভিযান চলবে? কেন গোটা বছর নয়?
জবাবে নির্মলা বলেন, যে পরিযায়ী শ্রমিকরা বাড়ি ফিরে গিয়েছেন তাঁদের অবিলম্বে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এই অভিযান শুরু করা হচ্ছে। ১২৫ দিন মানে চার মাস। তার পর সরকার দেখবে, কতজন ওই কাজ করতে চান, আর কতজনই বা তাদের পুরনো জীবিকায় ফিরে যেতে চাইছেন। তা পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।