অশোক মজুমদার

পদবীটাই শুধু সরকার কিন্তু সরকার বাড়ির ধুতি বাগানো সাহেবদের ঔদ্ধত্য এমন যে তারা নিজেদের ‘দেশের সরকার’ মনে করেন। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে গিয়ে সীমান্তে যে জওয়ানরা শহিদ হলেন তাদের অবলীলাক্রমে ‘নিহত’ বলে দেগে দিতে পারেন জীবনে মলমূত্র ত্যাগ ছাড়া কিছুই ত্যাগ না করা সংবাদ বেওসায়িরা। ঔদ্ধত্যের সীমান্ত ছাড়িয়েছেন তারা। আমার খুব ভালো লাগছে দেশের মানুষ বিশেষ করে যুব সম্প্রদায় দেশপ্রেম এখনও বিসর্জন দেয়নি। সীমান্তে জওয়ানদের আত্মত্যাগকে তুচ্ছ করে দেখার প্রতিবাদে সরকার বাড়ির বাংলা ও ইংরেজি দুটি কাগজ বয়কটের ডাক দিয়েছেন বাঁকুড়ার যুবকরা। দ্য হিন্দু’র চিত্রসাংবাদিক ভ্রাতৃপ্রতিম অরুণাংশু চক্রবর্তীর পাঠানো একটা ভিডিওতে দেখলাম বাঁকুড়ায় সরকার বাড়ির কাগজ ছাপানোর অফিসের গেটে অনেক যুবক প্রতিবাদ জানাচ্ছেন এই অপকর্মের বিরুদ্ধে। বেশ কিছুদিন ধরে দেখছি জেলাগুলি প্রতিবাদের পথ দেখাচ্ছে। এবারও সেই একই ঘটনা ঘটলো।

প্রায় সব কাগজেই সীমান্ত রক্ষা করতে গিয়ে যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া ভারতীয় সেনাদের শহিদ বলা হয়েছে। শুধু ‘না পড়লে পিছিয়ে পড়তে হয়’ সরকার বাড়ির বাংলা ও ইংরেজি কাগজে এই আত্মদানকে অস্বীকার করে শুধুই ‘নিহত’ লেখার ‘স্মার্টনেস’ দেখানো হয়েছে। আমরা মেনে নিতে নিতে সবাই কেমন যেন নির্বোধ হয়ে গিয়েছি! গতকাল সকালে সরকার বাড়ির কাগজে এই শিরোনাম দেখেও আমার টনক নড়েনি। বাঁকুড়ার ছেলেদের প্রতিবাদ আমাকে ভাবতে বাধ্য করলো। দীর্ঘদিন ঐ বাড়ির কাগজে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, লক্ষাধিক টাকার বেতনভুক কর্মীরা বাবুদের গোলামি করতে করতে নিজেদের অজান্তেই ভাবনাচিন্তার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে দেন। তাদের বোধবুদ্ধি লোপ পেয়ে যায়, শহিদদের ‘নিহত’ লিখে বসেন! মরা বলতে বলতে রাম হওয়ার মত এই ‘সাংবাদিকরা’ নিজেদের অজান্তেই কাণ্ডজ্ঞান বিসর্জন দিয়ে বসেন!

একসময় এসব চলতো, কিন্তু এখন চলা মুশকিল। অন্যান্য বাংলা কাগজগুলিকে বঙ্গসংস্কৃতির স্বনির্বাচিত ধারক ও বাহকরা আগে ধর্তব্যের মধ্যেই আনতেন না, কিন্তু এখন অবস্থা বদলেছে। অন্যান্য কাগজগুলি তাদের ঘাড়ের কাছে শ্বাস ফেলছে। বড় বাড়ির অনেক নামকাটা সেপাই, ভুল বললাম, উত্তমকুমার এখন ম্যানেজমেন্টের চাপে ইস্তফা দিয়ে চাকরি খুইয়ে সেসব কাগজে ভর্তি হয়েছেন। লড়াই জোরদার। এখন আর বড় বাড়ির কোন টার্ম ডিক্টেট করার ক্ষমতা নেই। কোন ভুল করার পর জেদ বজায় রেখে অস্বীকার করলে এখন আরও গভীর গাড্ডায় পড়তে হবে। সেই আহাম্মকি যদি কেউ করেন তাহলে কাগজের সার্কুলেশন কমবে। এই ‘নিহত’ ইস্যুতেই সরকার বাড়ির ধুতি পরা সাহেবরা সেটা মেপে নিতে পারেন। তাই বলি, সংযত হোন, শহিদদের ‘নিহত’ বলার ঔদ্ধত্য দেখাবেন না। পাঠকের বিচারে আপনাদের কাগজ বাংলা সংবাদপত্রের একটা মাইলস্টোন। আর দু-এক বছর পরে শতবর্ষ অতিক্রম করবে সাদা বাড়ি কালো গ্রিলের কাগজ। শতবর্ষের প্রাক্কালে এই ভুলটা কি সংশোধন করে নেওয়া যায়না?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here