দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ করোনার উৎস খুঁজতে চিনের সরকার বিন্দুমাত্র সাহায্য করছে না, এমনটাই অভিযোগ দুই শীর্ষস্থানীয় মার্কিন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞের। তাঁদের দাবি, উহানের গবেষণাগার থেকে ভাইরাস লিক করেছে নাকি খোলা মাছ মাংসের বাজার থেকে ছড়িয়েছে, সেটা কিছুতেই চিন স্পষ্ট করে বলছে না। ভাইরাসের উৎস নিয়ে ভুল তথ্য দিয়ে আরও বিভ্রান্ত করছে। মার্কিন কর্তাদের বক্তব্য, এমন চলতে থাকলে কোভিড-১৯ অতিমহামারীর ইতি হবে না। উল্টে কোভিড-২৬ ও কোভিড-৩২ হানা দেবে আরও ভয়ঙ্কর রূপে।
মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর (এফডিএ)-এর প্রাক্তন কমিশনার স্কট গটলিয়েব বলছেন, উহানের বায়োসেফটি ল্যাবরেটরি থেকে ভাইরাস লিক করেছিল এই সন্দেহটাই জোরদার হচ্ছে। কিন্তু চিন কিছুতেই এই বিষয়টা মেনে নিতে চাইছে না। পাল্টা দোষারোপ করছে। স্কট গটলিয়েব ট্রাম্প জমানায় এইডিএ-র কমিশনার ছিলেন। এখন ফাইজারের বোর্ড অব ডিরেক্টরের সদস্য। এর আগেও একাধিকবার করোনার উৎস নিয়ে চিনের দিকেই আঙুল তুলেছিলেন তিনি। তবে তাঁর বক্তব্যকে উড়িয়ে চিন দাবি করেছিল, প্রকৃতিই ভাইরাসের উৎস। উহানের গবেষাগার থেকে কিছু ছড়ায়নি।
উহানের অতি সুরক্ষিত বায়োসেফটি লেভেল-৪ ল্যাবরেটরি থেকেই এই ভাইরাস ছড়িয়েছে কিনা সেই নিয়ে জোরদার তদন্ত চালাচ্ছে আমেরিকা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি চিনের ষড়যন্ত্র প্রমাণিত হয় তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে বাইডেন প্রশাসনও একই কথা বলেছে। খুব দ্রুত ভাইরাসের উৎস খুঁজে বের করার জন্য মার্কিন গোয়েন্দাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৯০ দিনের সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উহারে ওয়েট মার্কেটে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। তারপর থেকে এই ভাইরাস অতিমহামারী হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বেই। চিন জৈব-রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরি করতে গিয়েই ভাইরাস ছড়িয়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে বারে বারেই। আমেরিকা বরাবরই দাবি করে এসেছে, সি-ফুড মার্কেটের ব্যাপারটা নেহাতই চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা। আসলে চিন রাসায়নিক মারণাস্ত্র হিসেবে ভাইরাস বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।
টেক্সাস চিলড্রেন হাসপাতাল ও ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের প্রধান পিটার হোটেজ় বলেছেন, আগামী বিশ্ব এখনও সুরক্ষিত নয়। সংক্রামক ভাইরাস যে গতিতে রূপ বদলাচ্ছে, তাতে আতঙ্ক এখনও কাটেনি। ভাইরাস কোথা থেকে এবং কীভাবে এল, তা যদি জানা যায় তাহলে একে রোখার উপায় বের হতে পারে। না হলে বিপদ বাড়বে।
এর মধ্যেই উহানেরই কয়েকজন ভাইরোলজিস্ট ও সাংবাদিক দাবি করেন, উহানের ল্যাবরেটরিতেই রাসায়নিক উপায় জিনের গঠন বদলে তৈরি হয়েছে করোনার সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেন। এর পিছনে হাত রয়েছে চিনের সেনারও। প্রমাণ আছে বলেও দাবি করেছেন তাঁরা। মার্কিন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অ্যান্থনি ফৌজিও বলেছিলেন, ইরাসের উৎস নিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের তদন্ত শুরু করা হচ্ছে। উহানের গবেষণাগার নাকি খোলা বাজার, ভাইরাস কোথা থেকে এসেছে তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।
চীনের মিলিটারি ল্যাবেই জন্ম করোনার, ব্রিটেনের পর একই দাবি আমেরিকারও
বড়সড় দাবি করলেন আমেরিকার প্রাক্তন স্টেট সেক্রেটারি মাইক পম্পেও। তিনি বলছেন, চীনের উহান ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজির ল্যাবে শুধুমাত্র জনকল্যাণে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলত না। কাজকর্ম চলত পিপলস লিবারেশন আর্মির কাজও। ঠারেঠোরে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, চীনা মিলিটারি ল্যাবেই জন্ম হয়েছে করোনা ভাইরাসের।
শনিবার তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি। উহানের ল্যাবের সঙ্গে পিপলস লিবারেশন আর্মির যোগাযোগ ছিল। ওদের জনকল্যাণে গবেষণার দাবির পাশাপাশি মিলিটারির কাজও চলে।’ পম্পেও আরও বলেন, চীনা কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কিছুই বলতে চায় না, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তদন্তে গেলে তাদের কোনও কিছু দেখতে দেয়নি।
গোটা পৃথিবীকে বদলে দেওয়া করোনা ভাইরাসের জন্ম বা উৎস কোথায় তা নিয়ে তদন্ত চলছে, সেই সঙ্গে চাপ বাড়ছে চীনের ওপর। বিজ্ঞানীরাও আরও বেশি স্বচ্ছ তথ্য চাইছেন চীনের কাছ থেকে। অস্ট্রেলিয়ার স্কাই নিউজ চ্যানেলের সঞ্চালক আন্ড্রিউ বোল্ট ২৬ মে নামী এন্ডোক্রিনোলজিস্ট প্রফেসর নিকোলাই পেট্রভস্কির সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনায় বসেন। প্রফেসরটি দাবি করেন, গোটা দুনিয়ার বিজ্ঞানীদের সঙ্গে ছলনা করেছে চীন।
সঞ্চালকটি বলেন, শেষ পর্যন্ত প্রচুর বিশেষজ্ঞই বলছেন, ভাইরাসটি চীনের ল্যাব থেকেই ছড়িয়েছে এবং চীন এবার চাপ টের পাচ্ছে। পেট্রভস্কি বলেন, কিছু চীনা বিজ্ঞানী বলছেন ভাইরাসটি এসেছে প্যাঙ্গোলিন প্রাণির থেকে কিন্তু তা মিথ্যে। কিছুদিন আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উহানের সেই ল্যাবে তদন্ত করতে বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়েছিল। কিন্তু তারা তেমন কোনও প্রমাণ পাননি। যদিও হু-এর বিশেষজ্ঞ দলকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হয়নি, এমন অভিযোগ এসেছিল। তাঁরা চীনে পা রাখার আগেই সমস্ত প্রমাণ লোপাট হয়ে গেছে, অভিযোগ ছিল এমনটাও।