দেশের সময়: মতুয়া ভোট সঙ্গে রাখতে ঠাকুরবাড়ির বউমা মমতাবালা ঠাকুরকে সাংসদ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মমতাবালাই একুশের বিধানসভা ভোটের আগে ফোঁস করলেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। গাইঘাটার তৃণমূল প্রার্থী নরোত্তম বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুললেন প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তথা মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতাবালা ঠাকুর।
গাইঘাটার তৃণমূল প্রার্থী নিয়ে যে মমতাবালাদের ক্ষোভ রয়েছে তা আগেই জানা গিয়েছিল। এদিন মমতাবালা সংবাদমাধ্যমে বলেছেন,“প্রচারে বেরিয়ে নরোত্তম বিশ্বাস ভক্তদের ঠাকুরবাড়ি যেতে বারণ করছেন। বলছেন, ঠাকুরবাড়িতে আর কিছু নেই। ওখানে গিয়ে কোনও লাভ নেই”। মমতাবালার মতে, “এতে মানুষের সমর্থন হারাবে তৃণমূল৷ কারণ নরোত্তম ঠাকুরবাড়িকে অপমান করছেন”।
মতুয়া সঙ্ঘাতিপতি এও বলেন, “হরিণঘাটার বিজেপি প্রার্থী অসীম সরকারের শিষ্য হচ্ছেন নরোত্তম। ও নিজেকে বলে বেড়াচ্ছে ঠাকুর বাড়ির লোক। কিন্তু ও নিজে মতুয়া নয়। ঠাকুর বাড়ির লোকও নয়৷’’
নরোত্তম যদিও বলেছেন, তিনি ঠাকুরবাড়িকে অপমান করেননি। তাঁর দাবি, তিনিও মতুয়া আদর্শ প্রচার করেন।
এ নিয়ে আসরে নেমেছে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের নেতারা বলেছেন, তৃণমূলের মধ্যে যে বনিবনা নেই তা এই সংঘাতেই স্পষ্ট। মতুয়া সম্প্রদায়কে তাঁদের প্রাপ্য সম্মান দেবে নরেন্দ্র মোদী সরকারই। তাই গাইঘাটার মানুষ ঠিক তাঁদের জনপ্রতিনিধিকে নির্বাচিত করবেন।
বাম জমানায় সে ভাবে ঠাকুরবাড়ির উপর রাজনৈতিক প্রভাব ছিল না। কিন্তু বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকারের শেষ দিকে যখন বামেরা সমর্থন হারাচ্ছে, সেই সময়ে মতুয়াদের ব্যাপারটা দেখতে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট দায়িত্ব দিয়েছিল গৌতম দেবকে। তখন বড় মা বীণাপাণিদেবী জীবিত ছিলেন। মতুয়া মঞ্চে ধর্মতলায় হাজির হয়েছিলেন গৌতম দেব। কিন্তু ততদিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাথায় বড়মার হাত পড়ে গিয়েছে।
বড় মা যদ্দিন ছিলেন এক রকম ছিল। তিনি দেহ রাখতেই ঠাকুরবাড়িতে কালীঘাটের আধিপত্য ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। বিজেপি এমন ভাবে প্রভাব তৈরি করে যে তৃণমূল কোণঠাসা হয়ে পড়ে। গত লোকসভায় বড়মার নাতিকেই প্রার্থী করে বিজেপি। তৃণমূল প্রার্থী জেঠিমার বিরুদ্ধে জিতে সাংসদ হয়েছেন ভাসুরপো শান্তনু। মতুয়া অধ্যুষিত রানাঘাট আসনও গেরুয়া দখলে চলে গিয়েছে। একুশের ভোটের আগে যখন বাংলা দখলে আগ্রাসী বিজেপি তখন মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে তৃণমূলের মধ্যেই বিদ্রোহ। যাকে অনেকেই মনে করছেন, তৃণমূলের জন্য অশনি সঙ্কেত।