সম্পাদকীয়–পরিবেশ আমাদের লালন করে,পরিবেশকে অবলম্বন করেই আমাদের জীবন যাপন।দুর্ভাগ্যের কথা সেই পরিবেশকেই আমরা নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে তুলতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছি।এই যে দুর্গাপুজো বা ছটপুজো তাকে কেন্দ্র করে বার বার পরিবেশ দূষণের অভিযোগ উঠে আসছে।ছটপুজোকে কেন্দ্র করে তো শেষ পর্যন্ত একদল পরিবেশবিদকে আদালতের দারস্থ হতে হয়েছে।আদালত বলেছে ছটপুজোর সময় কোনভাবেই রবীন্দ্র সরোবর বা সুভাষ সরোবরের জলকে দূষিত করা যাবে না।দূর্গাপুজোর সময় বিভিন্ন এলাকায় গাছ কাটা নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল।পুজোর সময় গঙ্গার জল দূষিত করা নিয়েও নানা অভিযোগ বার বার উঠতে থাকে।বিষয়টা আসলে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের নয়,বিষয়টা আদপে আমাদের সচেতনতার অভাবের।আমরা ভুলে যাই উত্সব-উদ্দিপনায় মেতে ওঠার মানে কোনভাবেই পরিবেশকে উপেক্ষা করা নয়।পরিবেশকে সুন্দর সুস্থ রাখতে পারলে আমরাও সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকতে পারি।পরিবেশের নির্মলতার উপর সামাজিক জীবন-যাপনের নির্মলতা অনেকাংশে নির্ভর করে।দূষণ মুক্ত বায়ু জল, আমাদের নাগরিক জীবনকে সুস্থতার আশ্বাস দেয়।সুস্থ পরিবেশ মানব মনের বিকাশ ও উন্নয়নের প্রেরণা হয়ে উঠতে পারে।আমারা বার বার এ কথা ভুলে যাই,ভুলে গিয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে আনি,আহ্বান করে আনি নানা অসুখ-অসুস্থতাকে।উত্সব-আনন্দ যেমন সমাজিক একঘেয়েমিপনা থেকে মুক্তির জন্য দরাকার তেমনি একথাও ভুললে চলবে না যে তাতে যেন পরিবেশ কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।পরিবেশ আমাদের ধারণ করে থাকে তাই তার প্রতিও আমাদের দায়বদ্ধতা দেখাতে হবে।পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে মানব সভ্যতার বিপদ তরান্বিত হয় এ কথা আমারা অনেক পরে বুঝতে পেরেছি,তাই না বুঝেই আমরা পরিবেশের অনেক ক্ষতিসাধন করে ফেলেছি।এখন তাই আমাদের সচেতন হবার সময়,যে ক্ষতি হয়েছে তা কীভাবে পূরণ করা যায় তা নিয়ে গভীর ভাবে ভাবার সময়।মনে রাখতে হবে আমাদের এই সচেতনতাই আগামী প্রজন্মের কাছে,বিশুদ্ধ বায়ু ও জলের আশ্বাস বয়ে আনতে পারে।
কোন সন্দেহ নেই আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নয়নে নানা কর্মকান্ডের ফলে পরিবেশ নানা ভাবে দূষিত হয়ে চলেছে,পৃথিবীজুড়েই তাই এই সময় পরিবেশ সচেতনতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে সামনে আসতে শুরু করেছে।আমাদেরও সেই সচেতনতায় অংশ নিতে হবে,আমাদেরও বুঝতে হবে পরিবেশকে ধ্বংশ করতে চাইলে আসলে আমাদের মানব সভ্যতার ধ্বংস হওয়াটাই অনিবার্য হয়ে উঠবে।তাই যে কোন মুল্যে আমাদের পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।আমাদের মনে রাখতে হবে আনন্দ-উতসবে মেতে ওঠা মানে কোনভাবেই পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতাকে ভুলে যাওয়া নয়,আমাদের আনন্দ ও সুস্থ জীবনের স্বার্থেই দরকার পরিবেশকে রক্ষা করা,গাছকে বাঁচানো,জলকে পরিশুদ্ধ রাখার প্রয়াস করা।পরিবেশ রক্ষা করা কোন ফ্যাসান নয়,এটা আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে এ কথা ভুলে গেলে আমরা সামাজজীবনে ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনবো,তাই আনন্দ উত্সবের মঝেও পরিবেশ নিয়ে আমাদের মাথা ঘামাতেই হবে।কোর্ট বা আদালতের উপর নির্ভর করে পরিবেশকে রক্ষা করা যাবে না বরং নাগরিক জীবনের সুস্থতার গ্যারান্টি নাগরিক সমাজকেই নিতে হবে।আমাদের কিশোর কবির কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে,আমাদেরও বলার সময় এসে গেছে,-এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি,নবযাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার!!