দেশের সময় ,রানাঘাট: হার মানাবে হিন্দি সিনেমার জমজমাট গল্পকে। রানাঘাটে সোনার দোকানে দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনা শোরগোল ফেলেছে গোটা দেশে।
দিনেদুপুরে শহরের রাস্তায় গুলির শব্দ। জানলা দিয়ে উঁকি দিচ্ছিলেন কয়েক জন গৃহস্থ। তাঁদেরই কেউ এক জন মোবাইলে যে ভিডিয়ো করলেন, তাতে দেখা গেল রিভলভার হাতে সশস্ত্র কয়েক জনের পিছু নিয়েছেন এক জন। গায়ে পুলিশের উর্দি ছিল না। তাই স্থূলকায় মানুষটি কে, তা কেউই বোঝেননি।
শুনশান রাস্তায় ৮ জন দুষ্কৃতী রানাঘাটের গয়নার শোরুম লুঠ করে তখন গুলি চালাতে চালাতে ছুটছে। তাদের তাড়া করে ডোরাকাটা টি শার্ট পরা হাতে বন্দুক নিয়ে ছুটছেন গোলগাল চেহারার একজন মাত্র মানুষ। দোতলা বাড়ির উপর থেকে তোলা সেই দুধর্ষ রোমহর্ষক দৃশ্যের ভিডিও যাঁরাই দেখেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের মনে ঘুরেছে একটাই প্রশ্ন, এই অসম সাহসী ‘মোটাসোটা’ জেমস বন্ড কে?
পরে জানা যায়, তিনি রানাঘাট থানার এএসআই রতন কুমার রায়। প্রায় ১০২ কিলো ওজনের ওই দশাসই চেহারার পুলিশ অফিসার এখন সকলের কাছে ‘হিরো’ হয়ে উঠেছেন।
পুলিশের ফিটনেস নিয়ে বারে বারে প্রশ্ন ওঠে। ওজন কমাতে নানা ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরের রতনবাবুর ডাকাতদের ধাওয়া করার অভিযান যেন ফিটনেস নিয়ে ওঠা সব প্রশ্নকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। তিনি একাই দুষ্কতীদের গুলির প্রত্যত্তুর দিয়েছেন জং ধরা রিভলভার দিয়ে। চেহারা যাই হোক তাঁর অব্যর্থ লক্ষভেদ ঘায়েল করেছে দুটি ডাকাতকেও। ধরে পড়েছে দলের পাঁচ দুষ্কৃতী।
প্রায় ২৭ বছর ধরে পুলিশে চাকরি করছেন রতন রায়। আদতে তাঁর বাড়ি মুর্শিদাবাদে। চাকরির খাতিরে তিনি থাকেন রানাঘাটে। বাড়িতে স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। ডাকাত তাড়া করার এই ভিডিও ভাইরাল হতেই স্বামীকে ফোন করেছিলেন তাঁর স্ত্রী। স্বামীর এই দুঃসাহসিকতায় আতঙ্কিত হলেও মুগ্ধ রতনবাবুর স্ত্রী বলেন, ‘‘গর্ব হচ্ছে। তবে ভিডিওগুলো দেখছি আর আঁতকে উঠছি। যদি একটা গুলি ওর লেগে যেত!’’
তবে মঙ্গলবারের অভিযানের পর রতন কুমার রায় বলছেন, খবর পাওয়ার পর ডাকাতদের পালাতে না দেওয়াটাই প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের সম্মান রক্ষার বিষয়টিও তাঁর মাথায় ঘুরছিল। তাই ভয় পাননি। ডাকাতদের পিছনে ধাওয়া করার সময় শুধু মনে হচ্ছিল গুলি যেন শেষ না হয়ে যায়।
ডিপার্টমেন্টের এই সাহসী পুলিশ কর্মীর অভিযান নিয়ে খুশি রানাঘাটের পুলিশ জেলার সুপার কে কান্নান। তিনি বলেছে, রতন রায় ও তাঁর টিম যে ভাবে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তার জন্য প্রত্যেকেই ধন্যবাদ। ওঁদের জন্য বিভাগের সকলেই খুবই গর্বিত।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিককালে একাধিক ইস্যুতে বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা। প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশের ভূমিকা। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। কিন্তু, সেখানে যেন কর্তব্যে বলীয়ান থেকে নৈতিকতার এক অনন্য নজির তৈরি করেছেন রতনবাবু। প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে গোটা রানাঘাট। কেমন লাগছে প্রশংসা পেয়ে? রতনবাবু বলছেন, “কালকের কাজের পর অনেক মানুষই প্রশংসা করছেন। ভাল কাজের জন্য প্রশংসা পেলে ভালই তো লাগে। এটাই পাওয়ার। পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কাছে এটা বড় সাফল্য।”
একইসঙ্গে ডাকত ধরতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য রানাঘাটের বাসিন্দাদেরও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, “রানাঘাটের সবাইকে আমরা এর জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই। কারণ এলাকার মানুষেরা আমাদের খুবই সাহায্য করেছেন।