হকারদের জীবিকা খেয়ে নেওয়ার অধিকার আমার নেই, তবে ওদেরও নিয়ম মানতে হবে: মমতা
দেশের সময় কলকাতা :রাজ্য জুড়ে ‘দখল’মুক্তি অভিযান অব্যাহত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধমক খেয়ে মঙ্গলবারের পর বুধবারও তৎপর রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভা এবং পুরনিগম। বুধবার সারা দিন ধরেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় চলেছে ‘সাফাই’ অভিযান। বেদখল হয়ে যাওয়া বহু জমি থেকে ‘দখলদার’দের সরানো হয়। ‘দখলদার’দের সরাতে মাইক নিয়ে প্রচার করা হয় কোথাও। কোথাও আবার সরাসরি বুলডোজ়ার বা পেলোডার নিয়ে অবৈধ দোকানপাট এবং নির্মাণ ভেঙে দেওয়া হয়।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, সমস্ত পুরসভার মেয়র, জেলা শাসক ও পুলিশ কর্তাদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার নবান্নে বৈঠক ডাকেন। সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কারও চাকরি খেয়ে নাওয়ার অধিকার আমার নেই। হকারদের জীবিকা খেয়ে নাওয়ার অধিকারও আমার নেই। ওদেরও সংসার পরিবার রয়েছে।
মমতা বললেন, এক মাস আপাতত উচ্ছেদ হবে না। তার মধ্যে আমাদের সার্ভের কাজ চলবে। কিন্তু তার মধ্যে সব ঠিক করতে হবে। রাস্তা পরিষ্কার রাখতে হবে। আমাদের সার্ভে চালু থাকবে। আপনাদের কোথায় জায়গা দেওয়া যায়, তা সরকার দেখবে। গোডাউনের ব্যবস্থাও করবে। কিন্তু রাস্তা দখল করা যাবে না।
মমতা আরও বলেন, ‘‘হকারদের আমি ভালবাসি কেন জানেন? তার কারণ রাস্তায় একটা দুর্ঘটনা ঘটলে আর সবাই মুখ ফিরিয়ে চলে গেলেও হকারেরা ছুটে আসে। ওরা হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। কোনও মেয়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার হলে প্রতিবাদ করে। কিন্তু আমি যেটা করছি, সেটা ওদের বিরুদ্ধে নয়। কলকাতাকে সুন্দর করতে হবে। আপনারা সহযোগিতা করুন, সরকার আপনাদের সঙ্গে থাকবেন।’’
হকারদের থেকে তোলা আদায় করা এ দেশের বহু শহরের অপসংস্কৃতি। মুম্বই, দিল্লি, কলকাতা সব বড় শহরই উৎপাতে আক্রান্ত। দু’দিন ধরে কলকাতায় হকার ও জবরদখল উচ্ছেদের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিষ্কার করে জানিয়ে দিলেন, হকারদের বেয়াদপি যেমন চলবে না। তাঁদের নিয়ম মেনে চলতে হবে। তেমনই হকারদের থেকে কোনও চাঁদা নিতে পারবেন না হকার নেতারা। পুলিশও চাঁদা নিতে পারবে না। গরিব হকারদের থেকে নেতা ও পুলিশকে চাঁদা তোলা বন্ধ করতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, হাতিবাগানে গিয়ে দেখেছি। হকাররা অনেক আগেই ফুটপাত দখল করে নিয়েছে। এখন রাস্তায় উঠে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, এ জন্য কাউন্সিলররা দায়ী। পুলিশের একাংশও দায়ী। তাঁরা আগে টাকা নিয়ে হকারদের বসতে দিচ্ছে। তার পর বুলডোজার দিয়ে তুলে দিচ্ছে। এটা চলতে পারে না। এর পর থেকে যদি দেখি কোথাও রাস্তায় হকার বসানোর হচ্ছে তাহলে কাউন্সিলরকেই অ্যারেস্ট করিয়ে দেব।
এ ব্যাপারে গতকাল উত্তরবঙ্গে তৃণমূল নেতা গ্রেফতারের প্রসঙ্গও তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার সন্ধেয় শিলিগুড়ির মেয়র ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা দেবাশিস প্রামাণিককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিন সে প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,“ডাবগ্রামে দেখেছেন তো আমি জেলা প্রেসিডেন্টকে অ্যারেস্ট করিয়ে দিয়েছি। সরকারি জমি ৩ লক্ষ টাকা করে বিক্রি করে দিচ্ছিল। ওই জমিগুলো মিউটেশন যাবে না”। সরকারের শীর্ষ আমলা বিবেক কুমারকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিষয়টা দেখে নিতে।
এদিন কলকাতা সহ সমস্ত পুরসভা এলাকায় ফুটপাতে হকার বসার সুনির্দিষ্ট নিয়ম করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তা হল হকারদের নির্দিষ্ট জোন করে দিতে হবে। তাঁরা পরিচয়পত্র পাবেন।নির্দিষ্ট জায়গাতেই বসবে হকাররা। তবে হ্যাঁ ফুটপাতের পুরোটা বা রাস্তা দখল করে কোনওভাবেই দোকান বসানো যাবে না।
মুখ্যমন্ত্রী পষ্টাপষ্টিই বলেন, এই যে হকাররা রাস্তায় বসে পড়ছে তার জন্য দায়ী স্থানীয় নেতা ও পুলিশ। তাঁরা চাঁদা তুলছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আমি পরিষ্কার বলে দিচ্ছি হকারদের থেকে কেউ চাঁদা নেবে না। পুলিশও নেবে না। স্থানীয় নেতাও নেবে না।”
সরকারি জমি জবরদখল নিয়ে সোমবার বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকের পর
, হাও়ড়া, বিধাননগরে হকার ও জবরদখল উচ্ছেদ শুরু হয়ে যায়। হকার তুলতে কোথাও কোথাও পে-লোডার ও বুলডোজার নামানো হয়।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, আগে টাকা নিয়ে রাস্তায় হকার বসাবে। তার পর বুলডোজার দিয়ে তুলে দেবে। এ আমার নীতি নয়। হকারদের জীবন ও জীবিকার জন্য রাজ্যে আইন রয়েছে। ১০৪৫টি ন্যাচারাল মার্কেট। ৪৭৮৭ হেরিটেজ মার্কেট চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজ্যের ১২৮টি আর্বান লোকাল বডি এলাকায় হকার ভেন্ডিং কমি়টি তৈরির কথা বলা হয়েছে। এবার সেই কমিটিকে নজর রাখতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, কলকাতায় হকারদের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। মোট ৬২ হাজার আবেদন করেছিলেন। তার মধ্যে ৫৯ হাজার জনের আবেদন গৃহীত হয়েছে। বাকিদেরটা হয়নি। কারণ তাঁরা তিনটে চারটে করে ডালা নিয়ে বসছে। তা হবে না। শুধু তা নয়, হকারির নামে রাস্তার উপর গোডাউন বানানো যাবে না।
এদিনের বৈঠকে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি হকার জোনে একটি করে বাড়ি চিহ্নিত করতে হবে। সেখানে যাতে হকাররা তাঁদের মালপত্র রাখতে পারেন। কিন্তু রাস্তায় গোডাউন বানানো যাবে না। দোকান বানাতে প্লাস্টিকও ব্যবহার করা যাবে না।
হকারদের একই রকমের মেটেরিয়াল দিয়ে দোকান বানাতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। নীল সাদা রঙ হলে ভাল হয়। এমন মেটেরিয়াল দেখতে হবে যাতে আগুন না ধরে।