দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আগামিকাল পয়লা বৈশাখ, তবে এখনই তীব্র গরম কমার কোনও সম্ভাবনা নেই। কয়েকদিন ধরে লাফিয়ে বাড়ছে গোটা রাজ্যের তাপমাত্রা। নাজেহাল অবস্থা রাজ্যবাসীর। চাঁদিফাটা রোদে সকালের পর আর বাইরে বেরোনো যাচ্ছে না। এই অবস্থায় কলকাতাসহ রাজ্যের আবহাওয়া নিয়ে এখনও কোনও সুখবর শোনাতে পারল না আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
গতকালই প্রায় ৪০ ডিগ্রি ছুঁয়েছিল কলকাতার তাপমাত্রা । আবহাওয়া দফতর জানিয়েছিল, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ, শুক্রবার চৈত্র সংক্রান্তির দিনে তা আরও বেড়ে ঘোরাফেরা করবে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে, এমনটাই জানিয়েছে হাওযা অফিস।
পশ্চিমবঙ্গের ১৫ জেলায় তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, আজ উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, কলকাতা, হুগলি, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ার কয়েকটি অংশে তাপপ্রবাহ হবে। ওই জেলাগুলিতে কমলা সতর্কতাও জারি করেছে আবহাওয়া অফিস।
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাজ্যের ১১ জেলার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাত্রা ছাড়িয়েছে। পানাগড়ের তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রিতে পৌঁছয়। হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, আগামী কয়েকদিন এইভাবে গরমের তাপে পুড়বে দক্ষিণবঙ্গ। বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই।
জানা গেছে, আজ সকালে শুক্রবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে চার ডিগ্রি বেশি। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে তিন ডিগ্রি বেশি। সারাদিনের হিসেবে কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রির আশপাশে ঘোরাফেরা করবে।
আবহাওয়া দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, এর আগে কখনও চৈত্র মাসে এত গরম পড়েনি। ২০১৬ সালের পয়লা মে কলকাতার তাপমাত্রা ৪০.১ ডিগ্রিতে ঠেকেছিল, যা ইতিমধ্যেই এপ্রিল মাসে দেখে ফেলেছে কলকাতা। বরং সেটা আজ আরও বেড়ে ৪১ ডিগ্রি ছুঁয়ে ফেলতে পারে। আগামী কাল, পয়লা বৈশাখেও স্বস্তি মিলছে না কোনওরকম। আগামী সোমবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস জারি রয়েছে। বৃষ্টিপাতের কোনও সম্ভাবনা নেই।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূ্ত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টায় আরও দু’ থেকে তিন ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়তে পারে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। মঙ্গলবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে তাপপ্রবাহ চলবে বলেই জানিয়েছে আলিপুর। আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে আপাতত চার পাঁচ দিন বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই। বিভিন্ন জেলায় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় তিন থেকে পাঁচ ডিগ্রি পর্যন্ত বেশি থাকবে। বেলা বাড়লেই লু বইবে।
অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেও মাত্রা ছাড়াচ্ছে গরম। মালদার তাপমাত্রাও ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে ঘোরা ফেরা করছে। উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গিয়েছে। আবহাওয়াবিদদের আশঙ্কা দক্ষিণবঙ্গের পর উত্তরবঙ্গেও তাপপ্রবাহ হতে পারে। সেখানেও আপাতত বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই। আগামী কয়েকদিন গরম ও আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি থাকবে।
বিভিন্ন কাজে যাঁদের বাইরে যেতে হচ্ছে, এই তীব্র গরমে তাঁদের অবস্থাও বেশ নাজেহাল। অফিস যাত্রী সুমন শীল এই প্রসঙ্গে বলেন, “কলকাতার যা আবহাওয়া, তাতে অফিস যাওয়াই এখন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। কয়েকদিন ধরে গলদঘর্ম হয়ে আমাদের অফিস যেতে হচ্ছে। আগামী সপ্তাহেও যদি পরিস্থিতি এমন থাকে তবে অফিসে ওয়ার্ক ফ্রম হোমের কথা বলব। এই গরমে যেসব বাচ্চারা স্কুল যাচ্ছে, তাদের খুব সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।”
সারাদেশেই তাপমাত্রা স্বাভাবিকের উপরে থাকবে। মধ্য ভারত এবং দক্ষিণ ভারতের কিছু অংশে তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকতে পারে বলে অনুমান আবহাওয়াবিদদের।
স্বাভাবিকের তুলনায় তিন থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি তাপমাত্রা থাকবে হিমালয়ের পশ্চিমের রাজ্যগুলিতে৷ দেশের বাকি অংশেও তাপমাত্রা স্বাভাবিকের এক ডিগ্রি থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকতে পারে অনুমান আবহাওয়াবিদদের।
রাজস্থান এবং উত্তর বাংলাদেশের দুটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। উত্তর-পশ্চিম ভারতে নতুন করে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা আসবে ১৫ এপ্রিল। এছাড়াও একটি অক্ষরেখা রয়েছে, মধ্য ভারতের বিদর্ভ থেকে কর্নাটক পর্যন্ত যেটি মারাঠাওয়াড়ার উপর দিয়ে গেছে।
কঙ্কন গোয়া এবং মহারাষ্ট্রে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। আগামী পাঁচ দিন এই পরিস্থিতি থাকবে। শনিবার থেকে সোমবারের মধ্যে জম্মু-কাশ্মীর লাদাখ এবং মুজাফফরাবাদে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির আশঙ্কা। সামান্য বৃষ্টি হতে পারে উত্তরাখণ্ড এবং হিমাচল প্রদেশেও। রাজস্থানে রবিবার এবং পাঞ্জাবে সোমবার হালকা বৃষ্টির সামান্য সম্ভাবনা।