অর্পিতা বনিক ,দেশের সময় :বাংলার কিছু কিছু গ্রামে আজও চৈত্র সংক্রান্তির আগে টিকে আছে পুরনো সব লোকাচার। এর মধ্যে অন্যতম গাজন উৎসব।

চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহ জুড়ে অনুষ্ঠিত হয় এই গাজন উৎসব। চৈত্রের সংক্রান্তিতে চরক পুজোর মধ্য দিয়ে সমাপ্তি। এক মাস ধরে শিব মনসা ধর্মরাজ ও নীল পঞ্চানন্দ দেবতার আরাধনা কেন্দ্র করে ভক্তরা সন্ন্যাস গ্রহণ করে। সন্ন্যাসীরা দেবতাদের সন্তুষ্ট করতে ঝাঁপ ও বাণ ফোঁড়ার রীতিতে অংশগ্রহণ করে। এই রীতি বর্তমান সময়েও দারুণভাবে দেখা যায় বাংলার গ্রামে গ্রামে।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় নীল পুজো ৷চিরায়ত সনাতনী বাঙালি মহিলারা পরিবারের মঙ্গল কামনায় নীরোগ সুস্থ জীবন প্রার্থনা করে নীলষষ্ঠী ব্রত পালন করে আসছেন যুগ যুগ ধরে। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে জাঁকজমক করে নীলপুজো অনুষ্ঠিত হয়। দেখুন ভিডিও

নীলষষ্ঠী উপলক্ষে মন্দিরে মন্দিরে ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার জলেশ্বর শিব মন্দিরে ৷ যেখানে এই গাজন উৎসবে ভক্ত সমাগম থাকে চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে জলেশ্বরে দেখা যায় অসংখ্য ভক্ত সমাগম।

বহু বছর ধরে শিবের গাজন শুরু হয় গাইঘাটার ভাই বোন বটতলা গ্রামে ৷ আজও সেই প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী হয় পুজো পাঠ। তিনদিন ধরে চলে গাজন। মহা শিবের কাছে কোনও মানুষ মানত করলে, তা সফল হয় । তাই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে শিবের গাজনে আসেন।

বিভিন্ন ফল সামগ্রী দিয়ে পুষ্করিণী বা পুকুরে আর বাঁশের মাচার উপর উঠে ঝাঁপ। দেবতার মন্দিরের সামনে এই বাঁশের মাচার উপর থেকে ঝাঁপ দেওয়া হয়। মাচার উচ্চতা ২০-২৫ বা তারও বেশি থাকে। সেই মাচার উপর উঠে শিব নীল মনসা ধর্ম পঞ্চানন্দ ঠাকুরের নামে ফল সামগ্রী শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে সন্ন্যাসী ঝাঁপ দেন। সেই সময় নীচে থাকেন অন্যান্য ভক্ত। বাঁশের মাচা থেকে নীচে পড়ার মুহূর্তে লুফে নেন সন্ন্যাসীকে। এর সঙ্গে দেখা যায় বাণ ফোঁড়া ও বঁটির উপর ঝাঁপ। এই রীতি বর্তমান সময়েও ব্যাপক হারে দেখা যায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তে।

রীতি মেনে গাজন উৎসব পালন হয়ে আসছে বাংলার এই গ্রামে ৷গ্রামের মানুষজন চড়কের আগে শুদ্ধভাবে চৈত্র মাসের প্রথম দিনে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন।

একমাস ধরে নিরামিষ অন্ন ভোজন। গ্রামে একজন মূল সন্ন্যাসী থাকেন, যিনি বাকিদের নেতৃত্ব দেন। সন্ন্যাসীরা বাড়ি ঘুরে ভিক্ষা করেন।

সংক্রান্তির দিন গ্রামের শিব মন্দিরে পুজো দিয়ে তিনবার প্রদক্ষিণ করে আগুন নিয়ে শুরু হয় খেলা। গ্রামের সকলেই এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন ৷


সন্ন্যাসীরা আগুন নিয়ে খেলতে খেলতে ঘুরে বেড়ান। সন্ধ্যে নামলে গ্রামেরই শিব মন্দিরে চড়ক পুজো করে বাণ ফোঁড়ার রীতিতে অংশগ্রহণ করেন এবং উপোস ভাঙ্গেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here