দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ শীত বিদায়ের পর দোড়গোড়ায় এবার বসন্ত। আর কিছুদিনের মধ্যেই দোল। তার আগে ফের দুঃসংবাদ।
বসন্তেই গ্রীষ্মের চাঁদিফাটা গরম। চড়া রোদে দুপুরে রাস্তায় বেরোলেই হাঁসফাঁস অবস্থা হচ্ছে। মৌসম ভবন জানিয়ে দিয়েছে, এ বছরেও উষ্ণতম মার্চ দেখতে চলেছে দেশবাসী। ২০২০ সালের দাবদাহের স্মৃতি এখনও টাটকা। এমন প্রচণ্ড গরম আর তাপপ্রবাহ হয়েছিল সে বছর যে নাজেহাল হতে হয়েছিল মানুষজনকে। তাপপ্রবাহে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছিল। এ বছরেও তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি হয়েছে।
তাপপ্রবাহ নিয়ে উদ্বেগে কেন্দ্র। গতকাল মঙ্গলবারই তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করে একগুচ্ছ নির্দেশিকা দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা পূর্বাভাস দিয়েছেন, এ বছরে তীব্র দাবদাহ নাজেহাল করে দেবে। ভারতের একাধিক রাজ্যে তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি হয়েছে। বলা হচ্ছে, ১৯০১ সালের উষ্ণতম ফেব্রুয়ারির পরে এ বছর ভয়ানক দহনজ্বালা সইতে হবে মার্চ থেকে মে মাস অবধি।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, গত ৩০ বছরে প্রথমবার ফেব্রুয়ারি মাসেই এত বেশি তাপমাত্রার পারদ চড়ছে। মার্চ থেকে তো তাপমাত্রা আরও বাড়বে। হিমাচল, উত্তরাখণ্ডের মতো পাহাড়ি এলাকায় এখনই তাপমাত্রা ২৩ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, চণ্ডীগড়েও তাপমাত্রার পারদ ছুঁয়েছে ২৮ থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পশ্চিম ভারতে কোঙ্কণ এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতের কচ্ছ অঞ্চলে তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি হয়েছে। মৌসম ভবন জানিয়েছে, এখনই সেখানে দিনের তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে পৌঁছে যেতে পারে। গত দু’বছরের নিরিখে দিল্লিতে সোমবারটা ছিল ফেব্রুয়ারির উষ্ণতম দিন।
মৌসম ভবনের জারি করা আবহাওয়া সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মার্চ থেকেই মধ্যপ্রদেশের উত্তরাংশ ও মহারাষ্ট্রের কিছু অংশে তাপপ্রবাহ শুরু হবে। রাজস্থানে এবং হরিয়ানা, দিল্লি, দক্ষিণ-পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রের বিদর্ভে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি তৈরি হবে।
পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে গত কয়েক দিন ধরে উত্তর ভারতের কিছু অংশে ঝড়বৃষ্টি চলছে। ফলে নেমে এসেছে তাপমাত্রাও। কিন্তু এই মনোরম আবহাওয়া দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলেই পূর্বাভাস আবহাওয়া দফতরের।
গত কয়েক দশকে ভারতে তাপপ্রবাহ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। যার জেরে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ২০২২ সালের এপ্রিলে ভারত তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছিল। সেই সময় দিল্লির তাপমাত্রা ৪৬ ডিগ্রিতে পৌঁছে গিয়েছিল। অন্যদিকে গত মার্চ মাস ছিল এখনও পর্যন্ত উষ্ণতম। তাপমাত্রার এই বদলের জন্য বিশ্ব উষ্ণায়ণকেই দায়ী করছেন আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা। ২০২১-এ আবহাওয়া নিয়ে জি ২০ সম্মেলনে বলা হয়েছিল কার্বন বেশি নির্গত হতে থাকলে ২০৩৫-৬৫ সালের মধ্যে ভারত জুড়ে তাপপ্রবাহ ২৫ গুণ বেশি স্থায়ী হতে পারে।
হোলিতেও এবার গরমে নাজেহাল হবে রাজ্যবাসী। বসন্তের মৃদু বাতাসের বদলে থাকবে চরম অস্বস্তিকর আবহাওয়া। তাপমাত্রা পৌঁছে যেতে পারে প্রায় ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ৩ মার্চ থেকেই তাপমাত্রা হু হু করে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা শহরে। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর মার্চে গরমের দাপট আরও বেশি হবে বলেই খবর।
আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, দোলের দিন উষ্ণ আবহাওয়াই থাকবে বঙ্গে। সকালের দিকে এবং রাতে খানিকটা বসন্তের আমেজ অনুভূত হলেও দুপুরে প্রখর হবে সূর্য। কলকাতার সর্বচ্চো তাপমাত্রা পৌঁছে যেতে পারে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। জেলায় জেলায় থাকবে ভ্যাপসা গরম।
ফেব্রুয়ারির শেষটা ভ্যাপসা গরমেই কাটল শহরবাসীর। মার্চেও তার কোনও পরিবর্তন হবে না। বুধবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের থেকে তিন ডিগ্রি বেশি। মঙ্গলবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিস ৩১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের থেকে এক ডিগ্রি বেশি। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ থাকবে ৩০ থেকে ৯৮ শতাংশের মধ্যে। আপাতত কলকাতায় বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই।
মার্চের শুরু থেকেই প্যাচপ্যাচে গরমের পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। সেই মতো আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি বাড়তে শুরু করেছে জেলায় জেলায়। দক্ষিণবঙ্গে এই মুহূর্তে বৃষ্টির কোনও পূর্বাভাস নেই। তবে উত্তরবঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বৃষ্টি হবে। দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়িতে হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বাকি জেলাগুলিতে শুষ্কই থাকবে আবহাওয়া।
এদিকে, বুধবার আচমকাই বদলে গিয়েছে দিল্লির আবহাওয়া। ফেব্রুয়ারির জ্বালাপোড়া গরমের পর আচমকাই মার্চের প্রথম দিন সকাল থেকে রাজধানীর আকাশ মেঘলা। ঘন মেঘে আচ্ছন্ন আকাশ দেখা গিয়েছে সকাল থেকেই। বৃষ্টির পূর্বাভাসও রয়েছে বেশ কিছু অংশে। এদিকে, পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে আপাতত বৃষ্টি হবে জম্মু কাশ্মীর, লাদাখ, হিমাচলপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডে। নতুন পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে জম্মু কাশ্মীর, লাদাখ, উত্তরাখণ্ড, হিমাচলপ্রদেশ, কাশ্মীর ভ্যালি ছাড়াও পঞ্জাব, হরিয়ানা, চণ্ডীগড়ে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা। ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ দু’দিন কাশ্মীর ভ্যালি ও হিমাচলপ্রদেশে তুষারপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। পঞ্জাব, হরিয়ানা এবং গুজরাটে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় তাপমাত্রার কোনও পরিবর্তন নেই।