কলকাতা:সোমবার সকালে কলকাতা–সহ দক্ষিণবঙ্গের অনেকটা এলাকার আকাশে রোদ থাকলেও তার হাল ছিল পিঙ্ক বলে টেস্ট খেলা ইন্ডিয়া–র মতো। সেই রোদ নিস্তেজ হতে হতে বেলা কিছুটা বাড়ার পরেই আকাশে ক্রমশ মেঘ জমতে শুরু করে।
দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিম দিকের পুরুলিয়ায় বিভিন্ন জায়গায় অবশ্য এ দিন সকাল থেকেই ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে শুরু করে বৃষ্টির দাপটও। পরে অবশ্য সেই বৃষ্টি আর শুধু পুরুলিয়ায় থমকে থাকেনি। শুরু হয় ঝাড়গ্রাম, হাওড়া, নদিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং পশ্চিম বর্ধমানের মতো জেলাতেও। বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতাতেও।
এ দিন ‘অঘটন’ অবশ্য কলকাতা–সহ দক্ষিণবঙ্গেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। শহর থেকে প্রায় দু’হাজার কিলোমিটার দূরের মুম্বইও সাক্ষী থেকেছে সেই ‘অঘটন’–এর। আরব সাগরের তীরের শহরে শীতের কামড় কখনওই তেমন প্রবল হয় না। ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতেও গরম কমে মৃদু শীতের অনুভূতি তৈরি হয়। সোমবার ভোরে সেই মুম্বইয়ের ঘুম ভাঙল রীতিমতো কাঁপতে কাঁপতে।
শহরে সোমবার ভোরের তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল ১৩.৭ ডিগ্রিতে। পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজির (আইআইটিএম) তথ্য বলছে, ২০১৫–র ডিসেম্বরে মুম্বইয়ের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছিল ১১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তার পর থেকে এ পর্যন্ত ৯ ডিসেম্বর ২০২৪–এর চেয়ে বেশি ঠান্ডা দেখেননি মুম্বইকররা।
আবহবিদরা জানিয়েছেন, সোমবার এখানকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম ছিল। গত ৭২ ঘণ্টায় মুম্বইয়ের রাতের তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি থেকে হু হু করে প্রায় ১১ ডিগ্রি কমে গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
দেশের উত্তর–পশ্চিমে তৈরি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এবং একই সঙ্গে দক্ষিণ–পূর্ব বঙ্গোপসাগরে তৈরি নিম্নচাপের প্রভাবে ঠান্ডা হাওয়ার স্রোত যে সাময়িক ভাবে ধাক্কা খেতে চলেছে, এমন পূর্বাভাস আগেই দিয়েছিল মৌসম ভবন। সোমবার দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার আকাশ মেঘে ঢেকে যাওয়া এবং তার কিছুক্ষণের মধ্যে বিক্ষিপ্ত ভাবে হালকা বৃষ্টির নেপথ্যে এই দুই কারণই রয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহবিদরা।
আকাশে মেঘ এবং বৃষ্টির অনিবার্য পরিণতিতেই সোমবার রাজ্যের দক্ষিণের বিভিন্ন জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা হলেও বেড়েছে। কলকাতাতেই রবিবার রাতের তাপমাত্রা ছিল ১৫.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার সেখান থেকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে ১৬.৫ ডিগ্রিতে উঠে যায়। আবহবিদরা আশ্বাস দিয়েছেন, সামনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই এই পরিস্থিতি বদলে গিয়ে ফের ঠান্ডার অনুভূতি শুরু হয়ে যাবে বাংলায়।
জাঁকিয়ে শীত পড়তে চলেছে বঙ্গে। এমনটাই পূর্বাভাস জারি করল আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবারের মত মঙ্গলবারেও কলকাতা সহ কিছু জায়গায় মেঘলা আকাশ থাকবে। সকালে দিকে কুয়াশা থাকবে। বুধবার থেকে পরিষ্কার হবে আকাশ। ফলে, নিম্নমুখী হবে পারদ, কমবে তাপমাত্রা। শনিবারের মধ্যে তিন থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা। চলতি সপ্তাহের শেষে বঙ্গে জাঁকিয়ে শীত পড়ার সম্ভাবনা। সপ্তাহের শেষে কলকাতায় ১৫ ডিগ্রি বা তার নীচে নামতে পারে পারদ।
পশ্চিমের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা নেমে যেতে পারে ১০ ডিগ্রি বা তার নীচেও। তবে রাজ্যজুড়ে রাতের তাপমাত্রা এখনই আর বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। বুধবার থেকে আকাশ পরিষ্কার হওয়ার পরের দু’দিন দুই থেকে তিন ডিগ্রি কমতে পারে রাতের তাপমাত্রা। মঙ্গলবার ঘন কুয়াশার দাপট থাকবে আট জেলায়। এর দাপটে যানবাহন চলাচল ও বিমান চলাচল ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা।
দৃশ্যমানতা দু-এক জায়গায় ৫০ মিটারে নেমে আসতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওযা দপ্তর। সকালের দিকে কিছু জেলা ঢাকা থাকতে পারে ঘন কুয়াশায়। দক্ষিণবঙ্গে তাপমাত্রা আগামী ২৪ ঘণ্টায় প্রায় একই রকম থাকবে।
মঙ্গলবার সকালে কলকাতায় আংশিক মেঘলা আকাশ। বেলা বাড়লে আকাশ পরিষ্কার হবে। পাশাপাশি, শহরতলিতে কুয়াশা এবং ধোঁয়াশা থাকবে।
কলকাতায় মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিক তাপমাত্রার থেকে ১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিক তাপমাত্রার থেকে ১.৪ সেলসিয়াস কম। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বা আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৪০ থেকে ৯১ শতাংশ। সোমবার সামান্য বৃষ্টিও হয়েছে শহরে।