কলকাতায় ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে ২১ জুলাইয়ের কর্মসূচি আয়োজিত হয়েছে শুক্রবার। দলের সব স্তরের নেতা-কর্মীদের এক ছাতার তলায় নিয়ে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে লোকসভা ভোটে দলের রণকৌশল কী হতে পারে সেই নিয়ে বার্তা দিতে পারেন তৃণমূলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন জেলা থেকে দলের কর্মীরা ইতিমধ্যেই কলকাতার নানা প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছেন। তাঁরা থাকছেন দলের বিভিন্ন শিবিরে। বিধাননগরের সেন্ট্রাল পার্ক, ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র, দক্ষিণ কলকাতার গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে রয়েছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। কলকাতার তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও সকাল সকাল ধর্মতলার ভিক্টোরয়া হাউসের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
ইন্ডিয়া জোটের ব্যানারেই হবে লড়াই: মমতা
২৪-এর আগে একটা জোট তৈরি করতে পেরে আমি খুশি। সব লড়াই সেই জোটের ব্যানারে হবে। আমাদের কোনও চেয়ার তাই না। আমরা চাই দেশ থেকে বিজেপি বিদায় নিক ৷
১০০ দিনের কাজ নিয়ে বারবারই সরব হয়েছেন মমতা সহ তৃণমূল নেতৃত্ব। মঞ্চ থেকে মমতা জানালেন, এবার বাংলার সরকারের টাকাতেই যাতে ১০০ দিনের কাজ হয়, সেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে। মমতা সেই স্কিমের নাম দিতে চান, ‘খেলা হবে।’ যতদিন পর্যন্ত কেন্দ্র টাকা না দেবে, ততদিন পর্যন্ত জব কার্ড হোল্ডারদের সেই কাজ দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
মমতা বলেন, ‘ভোটের দিন ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভোটের আগে থেকে আজ পর্যন্ত মোট ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে ১৮ জন তৃণমূলের কর্মী। তৃণমূল কি তৃণমূলকে খুন করবে?’ ভোট-হিংসা নিয়ে মমতা বলেন, ভাঙড়, চাপড়া আর কোচবিহারেই শুধু গণ্ডগোল হয়েছে।
মমতা বলেন, ‘ভোটের দিন ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভোটের আগে থেকে আজ পর্যন্ত মোট ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে ১৮ জন তৃণমূলের কর্মী। তৃণমূল কি তৃণমূলকে খুন করবে?’ ভোট-হিংসা নিয়ে মমতা বলেন, ভাঙড়, চাপড়া আর কোচবিহারেই শুধু গণ্ডগোল হয়েছে।
মমতা উল্লেখ করেন, মৃতদের মধ্যে ১৮ জন তৃণমূলের, বিজেপির ৩ জন ও সিপিএমের ৩ জন রয়েছে। তাঁর দাবি, বিজেপি ঘটনা সাজিয়ে দিতে চাইছে। ভিডিও করে বাংলাকে অসম্মান করার চক্রান্ত করা হতে পারে বলেও দাবি মমতার।
‘কোথায় গেল বেটি বাঁচাও, দেশে বেটিরা জ্বলছে ‘, মণিপুর নিয়ে সরব মমতা :
২১ জুলাইয়ের সমাবেশ উপলক্ষে ধর্মতলা চত্বরে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে দুপুর দেড়টা নাগাদ সভামঞ্চে বক্তৃতা করতে উঠলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চে উঠেই মণিপুরকাণ্ড নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘কোথায় গেল বেটি বাঁচাও স্লোগান? দেশের বেটিরা এখন জ্বলছে।’’
পঞ্চায়েতে হানাহানির ঘটনা নিয়ে বিরোধীদের তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৭১ হাজার বুথে ভোট হল। কিন্তু গোলমাল হল তিন জায়গায়। ভাঙড়, ডোমকল, ইসলামপুর। আর কোচবিহারে গন্ডগোল হয়েছে। সব থেকে বেশি খুন হয়েছেন তৃণমূল কর্মীরাই। তৃণমূল কর্মীরা কি তৃণমূল কর্মীদের খুন করবে?’’ পঞ্চায়েত নির্বাচনে যাঁরা হিংসার বলি হয়েছেন, তাঁদের জন্য চাকরি এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণের কথাও ঘোষণা করেন মমতা।
‘গান্ধী জয়ন্তীকে দিল্লি চলো…’ ডাক দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় :
শুক্রবার একুশের মঞ্চে (TMC Rally on 21st July) অভিষেক ঘোষণা করেছেন, “আগামী ৫ অগস্ট বাংলায় বিজেপির জেলা থেকে ব্লক, ছোট, বড়, মেজ, সেজ সমস্ত নেতার বাড়ি ঘেরাও করবেন তৃণমূল কর্মীরা। সেই ঘেরাও অবশ্যই হতে হবে শান্তিপূর্ণ। বাংলার সৌভাতৃত্বের ঐতিহ্য মেনে তা করতে হবে। বিজেপি নেতার পরিবারে কোনও প্রবীণ নাগরিক থাকলে তাঁকে আটকানো চলবে না। কিন্তু সকাল ১০ টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত ৮ ঘণ্টা ওই বিজেপি নেতাকে বাড়ি থেকে বের হতে বা ঢুকতে দেওয়া হবে না”।
‘বিরোধীদের কাছে সব আছে, মানুষ নেই। আর তৃণমূলের কাছে কিছু নেই, মানুষ আছে। পঞ্চায়েত ফলাফলের হিসেব দিয়ে বললেন অভিষেক।’ বিজেপিকে সরাতে বিরোধী জোট যে বদ্ধপরিকর, সে কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ”নির্বাচনে জিতছে কে? INDIA আবার কে’। বকেয়ার দাবি নিয়ে আরও একবার সাধারণ মানুষকে দিল্লি যাওয়ার বার্তা দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
ব্লকে ব্লকে কতজন বিজেপি নেতা আছে, তার তালিকা তৈরি করুন। ৫ অগাস্ট, শনিবার শান্তিপূর্ণভাবে সেই নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করতে হবে। কারও গায়ে হাত দেবেন না। গণ ঘেরাও করুন: অভিষেক।
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগে ফের একবার সরব অভিষেক। দাবি আদায়ের জন্য দিল্লি যাওয়ার ডাক দিলেন তিনি। বেছে নিলেন গান্ধী জয়ন্তীকে। ২ অক্টোবর ট্রেনে চেপে দিল্লি যাবেন, জানালেন অভিষেক।
দিল্লিতে কৃষিভবন অভিযানে যাবেন বলে জানান তিনি। আগামী ৫ অগস্ট রাজ্যে বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচির কথাও ঘোষণা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
একুশে জুলাইয়ের দুপুরে বড় ঘটনা ঘটে গেল কালীঘাটে। হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির কাছে এদিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ একটা কালো গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। গাড়িটির কাঁচও ঝাপসা কালো। তার পর সেই গাড়ি থেকে নেমে এক যুবক নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করে। তাকে দেখে সন্দেহ হওয়ার তল্লাশি করা হয়। তখন তার কাছ থেকে একটা ভোজালি ও একটা আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া গিয়েছে। ওই যুবকের কাছে গাঁজাও ছিল বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল।
এ ঘটনা যখন ঘটেছে তখনও ধর্মতলার উদ্দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রওনা হননি। এর পরই তিনি রওনা হন। ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছে যান কলকাতা পুলিশের কমিশনার সহ পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। পুলিশ কমিশনার বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেড প্লাস ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পান। তাঁর বাড়িতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এক যুবক ঢুকে পড়তে চাইছে, এটা সিরিয়াস থ্রেট।
বিনীত গোয়েল জানিয়েছেন, ওই যুবককে তল্লাশি করে তার কাছে একাধিক পরিচয়পত্র তথা আই কার্ড পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে পুলিশের আই কার্ডও ছিল। ওই যুবকের কাছে পাওয়া একটি পরিচয়পত্রে নাম লেখা রয়েছে নূর আমিন। পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, ওই যুবককে এবার জেরা করে তথ্য জানার চেষ্টা করা হবে।
ঠিক এক বছর আগে গত বছর ৩ জুলাই মমতার বাড়ির পাঁচিল টপকে এক যুবক ঢুকে পড়েছিল। হাফিজুল নামে সেই যুবক সারা রাত মমতার বাড়িতে ঘাপটি মেরে ছিল। তার জামার মধ্যে লুকোনো ছিল একটা লোহার রড। সেবার ওই ঘটনা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠেছিল। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে কী করে এমনভাবে বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ল ওই যুবক? পরে অবশ্য ওই যুবকের পরিবার দাবি করেছিল, তাঁদের ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন।
কলকাতা যেন জনসমুদ্র। যেদিকে তাকানো যায় শুধু থিকথিক করছে ভিড়। রাস্তার ধারে পরপর দাঁড়িয়ে আছে নীলরঙের সরকারি বাস। শুক্রবার সকাল থেকে এই ছবি চোখে পড়ছে কলকাতার একাধিক জায়গায়। তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সেগুলো ধর্মতলায় একুশের মঞ্চের দিকে যাত্রা শুরু করেছে । নানা জেলা থেকে কর্মী-সমর্থকরা আসছেন। কেউ রেলপথে, কেউ নদীপথে আসছেন কলকাতায়। রাস্তায় ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে আজ খুবই সক্রিয় কলকাতা পুলিশ। রাস্তায় রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণও চলছে।
এবার তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।
ওপারে ‘অমর একুশে’,এপারে তৃণমূলের শহিদ দিবস ! মমতার লেখায় ওপারের ভাষা আন্দোলন –
তৃণমূলের শহিদ দিবস উপলক্ষে দলের মুখপত্র-তে শুক্রবার কলম ধরেছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ ‘আসুন, ইন্ডিয়া’কে জয়যুক্ত করি’ শিরোনামে নিবন্ধের শুরুতেই তৃণমূল নেত্রী লিখেছেন, পূর্ব পাকিস্তান অধূনা বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘মাতৃভাষার জন্য সেই আত্মবলিদান ইতিহাসে অমর হয়েছে। অমর একুশে আমাদের পশ্চিমবাংলার একুশে জুলাইও।’
তৃণমূল নেত্রী লিখেছেন, ‘তিরিশ বছর আগে কলকাতার রাজপথে পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছিলেন বাংলর ১৩জন। গণতন্ত্রের জন্য সেই আত্মবলিদানও ইতিহাসে অমর। একুশে ফেব্রুয়ারি হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, একুশে জুলাই হয়েছে শহিদ দিবস। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে জুলাই।’
তৃণমূলের ২১ জুলাই নিয়ে মমতা আরও লিখেছেন , সেইসব গুলিচালানো অত্যাচারী মুখগুলিকে আবার দেখছি।
তিরিশ বছর আগে তাদের হাতে বন্দুক ছিল, বেয়োনেট ছিল, লাঠিসোটা ছিল। আজ তাদের হাতে খবরের কাগজের কলম আছে, টেলিভিশনের সান্ধ্য আসর আছে। আজও তারা চোরাপথে গণতন্ত্রকে কব্জা করতে চায়।
দীর্ঘ নিবন্ধে তৃণমূল নেত্রী সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দল-সহ বিভিন্ন মহলের তোলা অভিযোগ পাল্টা যুক্তি সাজিয়ে খণ্ডন করেছেন। তুলে ধরেছেন তাঁর সরকারের নানা কল্যাণ কর্মসূচির কথা।
সেই সঙ্গে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে।
উল্লেখ করেছেন সদ্য গঠিত বিরোধী জোট ইন্ডিয়া’র কথা। তাৎপর্যপূর্ণ হল, বিগত বছরগুলিকে ২১জুলাই নিয়ে লেখায় মমতা সিপিএমের পাশাপাশি কংগ্রেসকেও কাঠগড়ায় তুলতেন। ১৯৯৩-এ তিনি ছিলেন রাজ্য যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী এবং দলের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। বস্তুত সেবারের ২১ জুলাইয়ের কর্মসূচি দিয়েই তিনি কংগ্রেসের থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নেওয়ার রাস্তায় হাঁটা শুরু করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল কংগ্রেস ও সিপিএমের দিল্লিতে দোস্তি, বাংলায় কুস্তি করে। আসলে দিল্লির কংগ্রেস সিপিএমের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চায় না।
তৃণমূল নেত্রীর এবারের নিবন্ধে তাঁর আগের দলের নিন্দামন্দ নেই। মনে করা হচ্ছে, নতুন জোট ইন্ডিয়া’র কথা মাথায় রেখেই নেত্রী কংগ্রেসকে এবার ২১ জুলাইয়ের নিবন্ধে আক্রমণ করেননি। শুক্রবারের মঞ্চে কী বলেন তা নিয়ে কৌতূহল আছে।
নয়া জোট ইন্ডিয়া প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘বিজেপির শেষের দিন শুরু হয়েছে। উদারচেতা, ভারতীয় সংস্কৃতি এবং কৃষ্টির ধারক-বাহক মোট ২৬টি দল অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষায় একত্রিত হয়েছে। ২৪-এর লোকসভা ভোটে দিল্লির মসনদ থেকে বিজেপির বিদায় শুধু সময়ের অপেক্ষা। দেশের মানুষকে আর বোকা বানানো যাবে না।’
সমাবেশ শুরুর আগে টুইটবার্তা অভিষেকের :
২১ জুলাইয়ের সমাবেশের সকালে টুইট করে বার্তা দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘শহিদ দিবস আমাদের হৃদয়ে অগণিত আবেগ জাগিয়ে তোলে। আজ বাংলার সেই ১৩ জন বীর শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়, যাঁরা অত্যাচারী শক্তির সঙ্গে লড়াই করে এবং গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। এঁদের থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে আমি ন্যায়সঙ্গত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাব।’’
#ShahidDibas, a day of resilience, evokes countless emotions in our hearts!
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) July 21, 2023
Today, Bengal pays homage to the 13 gallant martyrs who sacrificed their lives while fighting tyrannical forces and upholding democratic ethos.
Inspired, I shall keep working towards a just society.
‘জেলবন্দি’ পার্থ: ২১ জুলাই এর মঞ্চে এই প্রথম তিনি নেই:
ঠিক এক বছর আগের কথা। একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি থেকে শুরু করে সব ব্যবস্থাপনা দেখতেন তিনিই। তাঁর কাঁধেই ছিল একুশে জুলাইয়ের সমাবেশের গুরু দায়িত্ব। হবে নাই বা কেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব। বছর ঘুরেছে। পাল্টেছে অনেক কিছুই। এখন তিনি জেলে। নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়ার পর এখন তাঁর ঠিকানা প্রেসিডেন্সি জেল। দল থেকে তিনি বরখাস্ত। একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকবেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থাকবেন, শুধুই তিনিই থাকবেন না।
২০২২ সালে একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল। একুশে জুলাইয়ের সব ঝামেলা চুকিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। কিন্তু ঠিক তার পরের দিন সকালেই তাঁর বাড়ি হানা দেয় ইডি। আর ২৩ তারিখ গ্রেফতার হন। সেই থেকে দলের সঙ্গে ক্রমে দূরত্ব বেড়েছে। প্রথম প্রথম তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীরা খোঁজ খবর নিতেন তাঁর। এখন সেই ছবি প্রায় নেই বললেই চলে।
কিন্তু পার্থকে বারবার বলতে শোনা গেছে, তিনি এখনও দলের সঙ্গে রয়েছেন। তাঁর মুখে শোনা গেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা। তাই এবার একুশ জুলাই থেকে দূরে থাকায় তিনি যে মূর্ছে পড়বেন সেটাই স্বাভাবিক। জেল সূত্রে খবর, গত কয়েকদিন ধরেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন খারাপ। সব কাজই করছেন, কিন্তু কিছুটা উদাস।
একুশে জুলাইয়ের খুঁটিপুজো থেকে শুরু হত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যস্ততা। সময় পেলেই ধর্মতলা চত্বরে একবার করে ঢুঁ মারতেন তিনি। দেখে আসতেন কেমন চলতে প্রস্তুতি। একুশে জুলাইয়ের আগের দিন সেই ব্যস্ততা চরমে উঠত। ওয়াররুমেই কাটত দিনের বেশিরভাগ সময়। কোন জেলা থেকে কতজন আসছে, কী কী ব্যবস্থা সবই থাকত তাঁর নখদর্পণে।
একুশে জুলাই সকাল সকাল নাকতলার বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়তেন পার্থ ।
এবার সেই নাকতলার বাড়ি শুনশান। তাঁর বাড়ির আশপাশে এমন উন্মাদনা চোখে পড়ছে না। পুলিশের কড়াকড়িও নেই। পার্থ এবার জেলে। সেখান থেকেই দেখছেন এবারের একুশে জুলাই। তাই কিছুটা মন খারাপ রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর। সূত্রের খবর, এদিন সকালে তাঁকে দেখেই মনে হয়েছে তাঁর মন ভারাক্রান্ত। কম কথা বলছেন, উদ্বিগ্ন মন। চা খেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু টিফিন করেছেন অনেকটা পরেই। জেলে থাকলেও তাঁর মন যেন পড়ে রয়েছে একুশে জুলাইয়ের মঞ্চেই।
কলকাতার পথে জনজোয়ার, ধর্মতলামুখী শয়ে শয়ে সরকারি বাস:
এদিকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর এবছর বিপুল জন সমাবেশ প্রত্যাশা করছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। শহর জুড়ে তার প্রস্তুতি চোখে পড়ছে গত দু দিন ধরেই। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই শয়ে শয়ে কর্মী-সমর্থকদের ভিড় চোখে পড়েছে শহরের রাস্তায় রাস্তায়। দূরের জেলা থেকে কর্মী সমর্থকেরা আগেই পৌঁছে গিয়েছেন শহরে। গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম, সেন্ট্রাল পার্কের মতো একাধিক জায়গায় তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিধাননগরের সেন্ট্রাল পার্ক, ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রেও রয়েছেন তৃণমূলের নেতা কর্মীরা। সেখান থেকেই তাঁদের সভাস্থলে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেলা যত বাড়ছে ততই বাড়ছে ভিড়। ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চের সামনে ভিড়় জমাতে শুরু করেছেন কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। ভিন জেলা থেকে আসা কর্মী-সমর্থকরাও শহরে ঢোকার মুখে।
আরও একটা জিনিস লক্ষ্য করা গেছে, তা হল জোড়া ফুলের পতাকা সারা শরীরে এঁকে ধর্মতলার রাস্তায় ঘুরছেন অনেক সমর্থকরা। বিক্রি হচ্ছে সবুজ টুপি, জোড়া ফুলের চিহ্ন আঁকা টিশার্ট। ২১ শে জুলাইয়ের সভাস্থলে আজ, শুক্রবার সকাল থেকেই নজর কাড়ছে চন্দ্রযান। রকেটের গায়ে লেখা কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। বরাহনগর পুরসভার কাউন্সিলর দিলীপ নারায়ণ বসু এই অভিনব কায়দায় প্রচার করছেন ৷
স্কুল, অফিসে যাওয়ার জন্য যে যাত্রীরা রাস্তায় বেরিয়েছেন তাঁদের পৌঁছতে অসুবিধার মুখে পড়তে হচ্ছে। কলকাতা পুলিশের তরফে আগেই জানানো হয়েছিল আজ শহরের নানা জায়গায় রাস্তা বন্ধ থাকবে। আর্মহার্স্ট স্ট্রিটে উত্তর থেকে দক্ষিণে, ব্রেবোর্ন রোডের উত্তর থেকে দক্ষিণে, কলেজ স্ট্রিটে দক্ষিণ থেকে উত্তরে, হেয়ার স্ট্রিট থেকে রাজা উডমন্ট স্ট্রিট পর্যন্ত স্ট্র্যান্ড রোডে দক্ষিণ থেকে উত্তরে, কেসি সেন স্ট্রিট থেকে বিবেকানন্দ রোড পর্যন্ত বিধান সরণিতে দক্ষিণ থেকে উত্তরে, বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে পূর্ব থেকে পশ্চিমে, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে দক্ষিণ থেকে উত্তরে, নিউ সিআইটি রোডে পশ্চিম থেকে পূর্বে এবং বিকে পাল অ্যাভিনিউ থেকে লালবাজার স্ট্রিট পর্যন্ত, রবীন্দ্র সরণিতে দক্ষিণ থেকে উত্তরে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।