দেশের সময় :‘দ্য কেরালা স্টোরি’ পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যায় টিম কেরালা। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খায় রাজ্য সরকার। আদালতের নির্দেশে ছবিটিকে ফের চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু খাতায়-কলমে আসা সেই নির্দেশ রাজ্যে চালু হয়নি বলেই দেখা যায় কার্যক্ষেত্রে। কলকাতা বা তার বাইরে কোনও হলেই এই ছবি চলতে দেখা যায়নি।
তবে ব্যতিক্রম ঘটেছে। তথ্য বলছে, রাজ্যের মাত্র একটি প্রেক্ষাগৃহ দেখাচ্ছে এই ছবি। এবং তাতে দর্শকরা নাকি ভালই সাড়া দিচ্ছেন। ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার অ্যাসোসিয়েশন (ইমপা) দাবি করেছে, ২০ মে থেকে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ রীতিমতো রমরম করে চলছে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর রামনগর রোডের শ্রীমা সিনেমাহলে।
দ্য কেরালা স্টোরি মুক্তি পাওয়ার পরে প্রাথমিক ভাবে কলকাতা ও রাজ্যের ৬০টি হলে চলতে শুরু করে এই সিনেমা। এর কয়েক দিন পরেই, ৮ মে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের এক বৈঠকে দাবি করেন, ছবিটি বিতর্কিত, ধর্মীয়ভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, প্ররোচণামূলক। এ ছবি দেখানো হলে রাজ্যে অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে। এর দশ দিন পরে, ১৮ মে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সে ব্যান উঠে যায়। কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক, সিনেমাওয়ালারা খুব একটা আগ্রহ দেখাননি ছবিটি প্রদর্শন করার ব্যাপারে। দেখুন ভিডিও
বনগাঁর শ্রীমা সিনেমাহলের মালিক অবশ্য বলছেন, ‘সত্য তথ্যের উপরে ভিত্তি করেই এই ছবি নির্মিত। সুপ্রিম কোর্টের ছাড়পত্রও আছে। সে জন্যই ছবি চালিয়েছি।’
ইমপা-র তরফে এক আধিকারিক বলেন, ‘যেখানে কলকাতায় কোনও হলে সিনেমাটি চলছে না, সেখানে শহর থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে প্রায় সীমান্ত এলাকায় দিব্যি দেখানো হচ্ছে সেটি। আমাদের জানা নেই, অন্য কোনও হলে কেরালা স্টোরি চলছে কিনা। ব্যান হওয়ার আগে যে ৬০টা হলে চলছিল, ছাড়পত্র মেলার পরে তাদের বহুবার বললেও, কেউ চালায়নি।’
ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউটর কোম্পানি এসএসআর সিনেমার তরফে শতদীপ সাহা বলেন, ‘মাত্র একটা হলে সিনেমাটি চলছে। কোনও আইনি বাধা না থাকা সত্ত্বেও এক অজ্ঞাত কারণে হলমালিকরা ছবিটা দেখাচ্ছেন না।’
ইমপা-র এক্সিবিশন সেকশনের চেয়ারম্যান তথা দক্ষিণ কলকাতার বড় সিনেমা হল অজন্তার মালিক রতন সাহা বলেন, ‘আমি আগেই চিঠি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলাম, এমনিতেই এখন বড় সংখ্যক দর্শক হলে আসেন না। কেরালা স্টোরি সেখানে ভাল চলছে।
সিনেমাটি বন্ধ করবেন না। তবে তা বন্ধ হয়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে সুপ্রিম কোর্ট হ্যাঁ বলার পরে ছবি দেখানোর সিদ্ধান্ত তো হলমালিকদেরই নিতে হবে। সেটা তো ইমপা বলতে পারে না। আমি যতদূর জানি, ছবি ডিস্ট্রিবিউটরদের তরফে কোনও সমস্যা নেই। তবু হলমালিকরা মুখ ফিরিয়েছেন।’
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ব্যান ওঠার পরে কেরালা স্টোরির পরিচালক সুদীপ্ত সেন কলকাতায় একটি প্রেস কনফারেন্স করে দাবি করেন, তিনি খবর পেয়েছেন, বহু হলমালিককে হুমকি দেওয়া হচ্ছে ছবি না দেখানোর জন্য। তবে এই ছবি অবশ্যই খুব তাড়াতাড়ি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আসবে বলেও জানান তিনি, যাতে আরও বেশি সংখ্যক দর্শকের কাছে তা পৌঁছে যায়।
শুক্রবার শ্রীমা সিনেমা হলে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ দেখতে এসেছিলেন বহু সিনেপ্রেমী তাঁদের কথায়,” সিনেমাটি সকলের দেখা উচিত। আমাদের ভালো লেগেছে। কেন সিনেমাটি এ রাজ্যে ব্যান্ড করা হয়েছিল বুঝতে পারলাম না। ” তাহলে কেন মানুষ হলমুখি হচ্ছেন না?
শ্রীমা হলের কর্মী স্বপন দাস বলেন,” সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের মধ্যে যেমন সাড়া পাব আশা করেছিলাম তেমন পাচ্ছি না। সিনেমাটি প্রথম থেকে আমাদের বুকিং ছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার ছবিটা নিষিদ্ধ করায় আমরা প্রথমে সিনেমাটি চালায়নি। সুপ্রিম কোর্ট রায় দেওয়ার পর সিনেমাটি চলছে। কিন্তু ভিড় হচ্ছে না। “
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, অশান্তি এড়াতেই হয়তো ছবিটা দেখতে যাচ্ছেন না অনেকে। অন্যদিকে, বিজেপির বনগাঁ পুরসভার কাউন্সিলর দেবদাস মণ্ডল বলেন,” সিনেমাটি সকলের দেখা উচিত। সমাজে যেভাবে লাভ জেহাদি ছড়িয়ে পড়েছে, সে সম্পর্কে মানুষ সচেতন হতে পারবেন।”
এ বিষয়ে বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ বলেন, শ্রীমা হলটিকে বনগাঁর মানুষ বয়কট করেছেন, কারণ ওখানে নীল ছবির প্রদর্শন হয়৷ পুলিশ প্রশাসনকে বলেছি ব্যবস্থা নিতে ৷
বিতর্ককে ছায়াসঙ্গী করেই সাফল্যের পথে এগিয়ে চলেছে দ্য কেরালা স্টোরি। গত ৫ মে মুক্তি পেয়েছে সুদীপ্ত সেন পরিচালিত ও অদা শর্মা অভিনীত দ্য কেরালা স্টোরি। প্রথম দিন থেকেই সব বিতর্ককে নস্যাৎ করে বক্স অফিসে রমরমিয়ে ব্যবসা করে চলেছে এই ছবি।