দেশের সময় ,বসিরহাট: বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে বসিরহাট এসপি অফিস অভিযান ঘিরে রণক্ষেত্র পরিস্থিতি বসিরহাটে। মিছিল এসপি অফিসের সামনে পৌঁছতেই পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয় তাঁদের। প্রথম ব্যারিকেট ভেঙে ফেলতেই বিজেপি-র কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এরপর কিছুটা এগিয়ে পুলিশের দ্বিতীয় ব্যারিকেডও ভেঙে ফেলেন তাঁরা।
দ্বিতীয় ব্যারিকেড ভাঙার পর এগিয়ে আসেন মহিলা বিজেপি কর্মীরা। তাঁদের আটকায় মহিলা পুলিশ। কার্যত টেনে হিঁচড়ে টেনে নিয়ে যায় মহিলা পুলিশ। অপরদিকে, পুলিশের লাঠি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন বিজেপি কর্মীরা। রাজ্য পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান সুকান্ত। এ দিকে, পুলিশের দিকে ইটের টুকরো ছুড়ে মারার অভিযোগ ওঠে বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে। পাল্টা পুলিশও লাঠিপেটা শুরু করে। ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের সেল।
১৪৪ ধারা জারি করা হয় বসিরহাট জেলা পুলিশ দফতর চত্বরে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ। বিজেপির তরফে অভিযোগ, পুলিশের তরফে ইট ছোড়া হয়েছে বিজেপির মিছিল উদ্দেশ্য করে। মহিলা বিজেপি কর্মীদের হেনস্থা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। অন্যদিকে, সন্দেশখালিতে ১৪৪ ধারা বাতিল হাইকোর্টে।
১৪৪ ধারা বাতিল নিয়ে এদিন হাইকোর্ট জানায়, সন্দেশখালিতে এমন কোনও নথি রাজ্য দেখাতে পারেনি রাজ্য। যার জেরে মানতে হবে গোটা থানা এলাকা ১৪৪ ধারা প্রয়োগের জন্য জরুরি ছিল। তাই ১৪৪ ধারার নির্দেশ খারিজ করা হল। বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর পর্যবেক্ষণ, অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করে আবার ১৪৪ জারি করে গ্রামের মানুষকে আটকে দেওয়ার কৌশল বড় বিপদ ডেকে আনার জন্য যথেষ্ট।
ইন্টারনেট বন্ধ করা হয় সাম্প্রদায়িক অশান্তি বা দেশ বিরোধী প্রচার আটকানোর জন্য। এখানে কী কারণে সেটা করা হয়েছিল, সেটা স্পষ্ট নয়। কোনও নির্দিষ্ট এলাকায় অশান্তি, কতটা অশান্তি তার কোনও ব্যাখ্যা নেই। অথচ বলা হচ্ছে অশান্তি কমানোর জন্য এটা করা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেটের সন্তুষ্টি এখানে স্পষ্ট নয়। আরও বেশি দায়িত্বশীল হয়ে কারণ অনুধাবন করে ১৪৪ ধারা প্রয়োগ করা উচিত।
মঙ্গলবার দুপুরে বসিরহাট জেলা পুলিশ সুপারের অভিযান কর্মসূচি নিয়েছিল বিজেপি। সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে এদিন বিজেপি কর্মীরা সড়ক পথে বসিরহাট যাওয়ার চেষ্টা করেন। সড়ক পথে পুলিশ বাধা দিলে ফের ট্রেন পথে চলে আসেন সুকান্তররা। হৃদয়পুর স্টেশন থেকে ট্রেনে বসিরহাট যান সুকান্ত মজুমদার সহ অন্যান্য বিজেপি নেতৃত্বরা। সেখান থেকে বাইক করে বসিরহাট পুলিশ সুপার অফিসের সামনে হাজির হন তাঁরা।
এদিকে, বসিরহাট পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া ছিল পুলিশের। গোটা অফিস চত্বর ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। তৈরি থাকে জল কামান। অফিসের ৫০০ মিটার পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে রাখা হয়। সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে বিজেপি কর্মী, সমর্থকরা অফিসের সামনে পৌঁছলে তৈরি হয় ধুন্ধুমার পরিস্থিতি।
সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘আমাদের উপর ইট নিক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকারের দলদাস পুলিশ। আমাদের মহিলা বিজেপি কর্মীদের গায়ে হাত তোলা হয়েছে। আমরা পুলিশের এই বর্বরতার প্রতিবাদে এখানেই অবস্থান করব।’ এসপি অফিসের থেকে কিছুটা দূরে রাস্তায় বসে পড়েন সুকান্ত সহ অন্যান্য বিজেপি কর্মী, সমর্থকরা।
অন্যদিকে, সন্দেশখালি নিয়ে আজ কলকাতা হাইকোর্ট হস্তক্ষেপ করেছে। স্বতঃপ্রণোদিত মামলা গ্রহণ করে আদালত। আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়কে ‘আদালত বান্ধব’ হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু এদিন বলেন, ‘জাতীয় মহিলা কমিশনের কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়ে এই ঘটনায় কোর্ট সিবিআই তদন্ত দিক।’
মঙ্গলবার দিনভর সরগরম ছিল সন্দেশখালি। এদিন রাজ্য পুলিশের গঠিত ১০ সদস্যের বিশেষ টিম যায় সন্দেশখালি। ডিআইজি সিআইডি সোমা দাস মিত্র ও ডিআইজি পদমর্যাদার আইপিএস আধিকারিক দেবস্মিতা দাস সহ গোটা টিম যায় সন্দেশখালি থানায় এবং উপদ্রুত গ্রামে। সেখানকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন তাঁরা। গতকালই, রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা যান সন্দেশখালি। এরপর আজ জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান।