দেশের সময় : প্রথম বার তাঁর গান শুনে ভীমসেন জোশী বলেছিলেন, ‘‘ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত তার ভবিষ্যৎ পেয়ে গিয়েছে।’’ সেই ‘ভবিষ্যৎ’ই অকালে অতীত হয়ে গেলেন ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে।
মঙ্গলবার দুপুর ৩টে ৪৫ মিনিট। প্রয়াত হলেন ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুর সম্রাট রশিদ খান। তাঁর অসুস্থতার খবর পেয়ে এদিন দুপুরে হাসপাতালে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। তার কিছু পরেই শিল্পীর প্রয়াণের কথা জানান চিকিৎসকরা।
হাসপাতালে দাঁড়িয়েই এ ব্যাপারে গভীর শোক প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রশিদ আমার ভাইয়ের মতো। ও আমাকে বলত, তুমি আমার মা। রশিদ নেই, এটা ভাবতেও পারছি না, আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।”
গত ২২ নভেম্বর কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রশিদ খানকে। চিকিৎসকরা জানান, সম্প্রতি তিনি চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার ভোরে সঙ্গীতশিল্পীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। তড়িঘড়ি ভেন্টিলেশনে স্থানান্তরিত করা হয়। এরপর দুপুর ৩টে ৪৫ মিনিট নাগাদ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন রশিদ খান।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগামীকাল বুধবার রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রশিদ খানকে শেষ বিদায় জানানো হবে। এদিন সন্ধে ৬টা পর্যন্ত কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালেই রাখা থাকবে তাঁর মরদেহ। রাতে পিস ওয়ার্ল্ডে রাখা হবে সুর সম্রাটের দেহ।
আগামীকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে রবীন্দ্রসদনে তাঁর মরদেহ রাখা থাকবে। সেখানেই শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন অনুরাগী সহ সকলে। বুধবার বেলা ১টায় রবীন্দ্রসদনে শিল্পীকে রাজ্যের তরফে গান স্যালুট জানানোর পর পরিজনেরা শেষ কৃত্যের জন্য দেহ নিয়ে যাবেন টালিগঞ্জের কবরস্থানে।
উত্তরপ্রদেশে আদি বাড়ি হলেও কলকাতাতেই থাকতেন রশিদ। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “উত্তরপ্রদেশে বাড়ি হলেও উনি (রশিদ) বাংলাকে ভালবেসে কলকাতায় রয়ে গিয়েছিলেন। শুধু রশিদ নয়, ওর পরিবারের সঙ্গেও আমার যোগাযোগ ছিল। অল্প বয়সে রশিদ চলে যাওয়ায় ওর স্ত্রী, মেয়ে ও ছেলে ভেঙে পড়েছে। এখন থেকে আমি ওদের অভিভাবক।”
রশিদ খানের ছেলেও বাবার মতো খুব ভাল গান করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এত অল্প বয়সে ছেলেটা পিতৃহীন হয়ে গেল। খুব ভাল গান গায়। আশাকরি, আপনারা সকলে ওকে একটু সাপোর্ট দেবেন।”
উস্তাদ রশিদ খানের জন্ম উত্তরপ্রদেশের বাদাউনে। ১৯৬৮ সালের ১ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। সঙ্গীত পরিবারেই বেড়ে ওঠা রশিদের। দাদু উস্তাদ নিশার হুসেনের কাছে গান শেখা শুরু তাঁর। খুব ছোটবেলাতেই কলকাতায় চলে আসেন তিনি।
সম্পর্কে উস্তাদ গুলাম মুস্তাফা খানের ভাইপো ছিলেন রশিদ। পরে কাকার হাত ধরেই মুম্বইয়ে পাড়ি দেন রশিদ। সেখানে গানের তালিম নেন তিনি। এরপর উস্তাদ নিসার হুসেন খানের কাছে গানের তালিম শুরু করেন রশিদ। সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার, পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ সম্মান পেয়েছেন তিনি।
ইনায়েত হুসেন খাঁ-সাহিব যে ঘরানার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই রামপুর-সাসওয়ান ঘরানার শিল্পী রশিদ খান৷ মূলত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত গাইলেও ফিউশন বা বলিউড এবং টলিউডের ছবিতে বহু জনপ্রিয় গানও গেয়েছেন শিল্পী। ‘যব উই মেট’, ‘কিসনা’, ‘হাম দিল দে চুকে সনম’, ‘মাই নেম ইজ খান’, ‘রাজ ৩’-র মতো বলিউড ছবির পাশাপাশি ‘মিতিন মাসি’, ‘বাপি বাড়ি যা’, ‘কাদম্বরী’-র মতো বাংলা ছবিতেও রয়েছে তাঁর গান।