দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ তিন রাজ্য নির্বাচনী ফলপ্রকাশের পরেই দেশজুড়ে উচ্ছ্বাস শুরু হয়েছে বিজেপি কর্মীদের মধ্যে। এদিন সেই ছবিই দেখা গেল নয়া দিল্লির বিজেপির সদর কার্যালয়ে। ভোটের ফলাফল প্রকাশের পরে এদিন কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর নিশানায় ছিল বাম এবং কংগ্রেস শিবির। ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে বাম এবং কংগ্রেস শিবির একসঙ্গে লড়াই করেছে। সেই বিষয়টি টেনে এদিন কটাক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী।
উত্তর-পূর্বাঞ্চল দিল্লি থেকেও দূরে নয়, ‘দিল’ থেকে দূরে নয়। বৃহস্পতিবার উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের অভাবনীয় ফলের পর এমনই মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ত্রিপুরা, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে বিজেপি ও বিজেপি জোটের প্রার্থীদের জয়ী করার জন্য তিন রাজ্যের বাসিন্দাদের ধন্যবাদও জানান প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে এই জয়ের কৃতিত্ব দলীয় কর্মীদের দেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিন ত্রিপুরা, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে বিধানসভা ভোটে অভাবনীয় জয়ের পর নয়া দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতর থেকে তিন রাজ্যের বাসিন্দাদের শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বক্তব্যের শুরুতেই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সকল বাসিন্দাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “উত্তর-পূর্বাঞ্চল দিল্লি থেকে দূরে নয়, দিল থেকে দূরেও নয়। তিন রাজ্যের ভোটের আজকের ফল প্রমাণ করে দিয়েছে যে, গণতন্ত্রের উপর জনগণের বিশ্বাস রয়েছে।” এরপরই দলীয় কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিজেপি কর্মীরা আমাদের থেকেও ভাল কাজ করেছেন। ত্রিপুরা, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডের মানুষ বিজেপিকে আশীর্বাদ করেছেন।” এবার বিজেপি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষদের এই আশীর্বাদের সম্মান জাানাবে বলেও জানান নমো। তিনি বলেন, “উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিজেপির জয় আজ আরও একটা সুযোগ দিল, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাসিন্দাদের ভালবাসা ও সমর্থনের সম্মান জানানোর সুযোগ দিয়েছে। তিনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষের হৃদয় জয় করতে পেরেছেন এবং এটাই তাঁর বড় জয় বলে দাবি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই এবার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শান্তি, সমৃদ্ধি এবং অগ্রগতির দিকে নজর দেবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন নমো।
এদিনের বক্তব্যে কংগ্রেসকে খোঁচা দিতেও ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী মোদী। কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন, “কংগ্রেস উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে এটিএম-এ পরিণত করেছে। টাকা উপার্জন কর এবং দুর্নীতির চর্চা করতে দিন।” বিজেপি ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ নীতি নিয়ে চলে বলেও এদিন আরও একবার উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একইসঙ্গে তাঁর দাবি, গোয়া, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মতো আগামী দিনে কেরলেও বিজেপি সরকার গড়বে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কিছু দল পর্দার পিছনে জোট করছে। সেটা জনতা দেখছে। এক রাজ্য কুস্তি, অন্য রাজ্যে দোস্তি। এদের চেহারা মানুষ দেখে নিয়েছেন। কেরলের জনতাও দেখছে কীভাবে বাম কংগ্রেস অন্য রাজ্যে জোট করে। কেরলে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নাটক করে। সত্যি এটাই দুই দলই মিলেমিশে আছে। দুই দলই কেরলে লুঠ করছে। আমার বিশ্বাস, ভবিষ্যতে নাগাল্যান্ডের মতো কেরলে বিজেপির সরকার হবে। দেশের জনতা বারবার বিজেপির উপর বিশ্বাস রাখছে।”
তিনি বলেন, “কিছু লোকের মোদীর কবর খোড়ার ইচ্ছা ছিল, তাঁদের বলি পদ্ম বেড়েই চলেছে। কিছু লোক বেইমানি কট্টর ভাবে করে। এরা বলে মোদী সরে যাক। কিন্তু দেশ বলে মোদী যেও না। আজকের ভোটের ফলাফলের পরে কংগ্রেস বলছে এগুলো ছোট রাজ্য তো, এই নির্বাচনের প্রভাব থাকে না। এই রাজ্যগুলির লোকেদের অপমান। ছোট রাজ্যদের তিরস্কার করায় কংগ্রেস বড় ভুল করছে। এই ধারনার জন্য কংগ্রেস সবসময় দেশের দলিত, আদিবাসীদের অপমান করেছে। এই মানসিকতাই স্বাধীনতা পরে সবথেকে বড় সমস্যা তৈরি করেছে। আমি কংগ্রেসকে বলেছি, ছোট রাজ্যে প্রতি এমন ধারনা আপনাদের আরও ডুবিয়ে দেবে।”
প্রধানমন্ত্রী জানান, “অনেক কঠিন রাস্তার পরে আমরা সাফলতা পেয়েছি। স্বাধীনতার সাত দশক পরেও উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলির বহু গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। এখন এসব কথা ভাবাও যায় না। আগের সরকার এগুলোকে গুরুত্বও দেয়নি। এখন সেখানে জল, বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের সংযোগ আগের সরকার ভাবেনি। বিমানবন্দর, হাইওয়ে, রেলওয়ে এই কাজগুলি উত্তর-পূর্বে করা কঠিন ভাবা হত। এই জন্য সেখানে কিছু করতে গেলে দেরি হত।”
তিনি বলেন, “আজ ভারতের কথা গোটা বিশ্বে হচ্ছে। আমাদের তৃতীয় শক্তি আমাদের কর্মীরা। আমি তাঁদের সম্মান জানাই। আমাদের কর্মীরা কঠিন সময়েও পতাকা ধরে রেখেছে। আমাদের কর্মীদের বিরুদ্ধে হিংসাও হয়। কিন্তু আমাদের কর্মীরা রাষ্ট্রের প্রতি সংকল্পবদ্ধ থাকেন। তাই তারা কোনও ভাবে ভেঙে পড়েন না। তাঁরা সবসময় এগিয়ে যেতে থাকেন। যেই দলের কাছে এমন কর্মীভাণ্ডার থাকে, তাদের পক্ষে অসম্ভব কোনও কাজ নয়।”
প্রধানমন্ত্রী জানান, “ত্রিপুরা এবং উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির মা-বোনেদের আমি বিশেষ ধন্যবাদ জানাই। নাগাল্যান্ডের প্রথম রাজ্যসভার সাংসদ পদ একজন মহিলাকে দিয়ে শুরু করেছিলাম। কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক প্রকল্পের সুবিধা সরাসরি উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলি পাচ্ছে।”