দেশের সময় : পেট্রাপোল সীমান্তে বিএসএফ এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে খামখেয়ালিপনার অভিযোগ তুলে সোমবার সকালথেকে কর্মবিরতি শুরু করেছে বিভিন্ন সংগঠন। অনির্দিষ্ট কালের কর্মবিরতির জেরে আবারও বন্ধহয়েগেল পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বাণিজ্য।
তল্লাশির নামে ‘অত্যাচার’ চালাচ্ছে বিএসএফ। চালক, মালিক এবং ক্লিয়ারিং এজেন্টদের ‘নাজেহাল’ করা হচ্ছে। পাশাপাশি, বন্দর কর্তৃপক্ষও নানা ভাবে ‘জুলুম’ চালাচ্ছেন। এমনই একগুচ্ছ অভিযোগ তুলে পেট্রাপোল স্থলবন্দরে বিক্ষোভ শুরু করেছে ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন, বনগাঁ গুডস ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন, বনগাঁ নব মালিক সমিতি, বনগাঁ মোটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, সীমান্ত পরিবহণ মালিক সমিতি, শ্রমিক সংগঠন-সহ কয়েকটি সংগঠন। যার জেরে পেট্রাপোল দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বাণিজ্যের উপর কোপ পড়েছে।
পেট্রাপোল সীমান্তে রপ্তানী বানিজ্যে অচলাবস্থা কাটাতে বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সোমবার বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা৭টা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে সেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও ওই বৈঠকে সমাধান সূত্র মিললো না। ফলে আপাতত এই সীমান্ত দিয়ে রপ্তানী বানিজ্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তেই অনড় থাকছেন শ্রমিক সংগঠনগুলি৷
বনগাঁ গুডস ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খোকন পালের কথায়, ‘‘রবিবার রাত থেকে কোনও গাড়ি যায়নি। বিএসএফ এবং সিডব্লুসি-র ম্যানেজার কমলেশ সাইনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমরা কর্মবিরতি পালন করছি। অনির্দিষ্ট কালের জন্য আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা আলোচনা চাই। তবে কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত সেই আবেদনে সাড়া দেননি৷পেট্রাপোল স্থলবন্দর বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে বলেও অভিযোগ করেছেন খোকন। তবে এ নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।’’
পেট্রাপোল এক্সপোর্ট এন্ড ইমপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রদীপ দে বলেন, সমস্যা সমাধানে এদিন সন্ধেয় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। উপস্থিত ছিলেন বিএসএফ, শুল্ক দপ্তর সহ অন্যান্য দপ্তরের প্রতিনিধিরা। কিন্তু সেখানে শেষ পর্যন্ত কোনও সমাধান সূত্র মেলে নি।
আমদানি-রপ্তানির কাজ চালু রেখে সমস্যা সমাধানের পক্ষ্যে তাঁদের সংগঠন ,সেই মর্মে লিখিত ভাবে একটি ইমেলও পাঠানো হয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষেরকাছে৷ বন্দরের ভিতরে প্রবেশসহ নানা হয়রানি বন্ধ হোক এটা তাঁদের ও দাবি তবে কাজ বন্ধ রেখে ব্যাবসার ক্ষতি করে কোন উন্নয়ন সম্ভব বলে তাঁরা মনে করেননা। শ্রমিকদের দাবিগুলিকে মান্যতা দেওয়া হোক সরকারী নিয়ম মেনেই ৷
প্রসঙ্গত, পেট্রাপোল স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে সম্প্রতি সীমান্তে জারি করা হয়েছে নতুন কিছু বিধিনিষেধ। আর তাতেই সমস্যা তৈরি হচ্ছে রপ্তানী বানিজ্যে। সেখানে দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী এদেশের ট্রাক চালকদের সমস্তরকমের সঠিক কাগজপত্র ছাড়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। আর তারই বিরুদ্ধে সোমবার থেকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বানিজ্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দাবি না মানা পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
পেট্রাপোল স্থলবন্দরের ম্যানেজার কমলেশ সাহানির অভিযোগ, ‘সম্প্রতি এই সীমান্তে বহি:বানিজ্যের ট্রাক থেকে সোনা, গাঁজা, জাল লাইসেন্স উদ্ধার করেছে বিএসএফ। এরপর থেকে কেন্দ্র সরকার দেশের স্বার্থে সীমান্তে কিছু নিয়ম জারি করার নির্দেশ দিয়েছে। ট্রাক চালক সহ অন্যদের কমন আই কার্ড চালু করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর জন্য ১৫ ফেব্রয়ারীর মধ্যে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।’
পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্টস এন্ড স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানান, কভিড ১৯-এর কারণে তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্যে আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। আগে যেখানে ২৪ ঘন্টায় ৭০০ থেকে সাড়ে ৭৫০ পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে রপ্তানি হতো। করোনার কারণে এখন মাত্র সাড়ে ৩০০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। এরপর নতুন ল্যান্ড পোর্ট ম্যানেজার ব্যবসায়ীদের কোনো কথা না বলে বন্দর এলাকায় প্রবেশের ওপর নতুন নতুন আইন তৈরি করে আমাদের বাণিজ্যে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। নতুন ম্যানেজার বিএসএফকে কাজে লাগিয়ে পরিবহন কর্মিদের বন্দরের ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছেনা। পরিবহন কাজে জড়িত কর্মিদের আইসিপিতে প্রবেশের মুখে বিএসএফের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। যা এর আগে কখনো দেখেনি কয়েক হাজার শ্রমিক ও সীমান্তের বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ব্যাবসায়ীরা৷ এর সমাধান সূত্র বার করে শীঘ্র ব্যবস্থা না নিলে এশিযার বৃহত্তম পেট্রাপোল স্থল বন্দর মুখ থুবড়ে পড়বে৷
এদিকে, পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের ইচ্ছেমতো এই সীমান্তে নিয়ম জারি করেছে। এই অভিযোগ তুলে আমদানি–রপ্তানী বানিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ৮ টি সংগঠন যৌথভাবে আন্দোলনে নেমেছে। গত কয়েকদিন ধরে এই আন্দোলন চলছে।