দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ষড়যন্ত্রের শিকার! মন্ত্রিত্ব হারানোর পর, দলের সব পদ থেকে অপসারিত হওয়ার পর প্রথম প্রতিক্রিয়া শোনা গেল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মুখে।

অন্যদিকে হাসপাতালে ঢোকানোর আগে হাউ হাউ করে কাঁদলেন পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখার্জি। কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল হেফাজতে থাকাকালীন ৪৮ ঘন্টা অন্তর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে পার্থ চ্যাটার্জি এবং অর্পিতা মুখার্জির। আজ সেই কারণেই সিজিও কমপ্লেক্স থেকে জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দুজনকে। হাসপাতালে ঢোকার আগেই তৈরি হয় নাটকীয় পরিস্থিতি। গাড়ি থেকে নামতে একেবারেই নারাজ ছিলেন অর্পিতা। কিছুতেই গাড়ি থেকে নামতে চাইছিলেন না। তাঁকে নামানো হলেও তিনি ভেঙে পড়েন কার্যত। রীতিমত কান্নাকাটি করেন হাউ হাউ করে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অর্পিতাকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে ঢোকানো হয় হাসপাতালে। হাত-পা ধরে তাঁকে ঢোকান হয় হাসপাতালে। অর্পিতার পরেই হুইলচেয়ারে বসে হাসপাতালে ঢোকেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গ্রেপ্তারির ৬ দিন পর গতকাল পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানো হয়েছে, বৃহস্পতিবারেই তাঁকে অপসারিত করা হয়েছে দলের সব পদ থেকেও।

তারপরেই প্রথম প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মুখ থেকে মাস্ক সরিয়ে তিনি শুধু বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের শিকার’। তবে ঠিক কোন ক্ষেত্রে তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার তা স্পষ্ট করেননি তিনি। এর আগে মা উড়ালপুলের কাছে গাড়ি দাঁড়ালে তাঁকে দল থেকে অপসারণ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়েছিল, যদিও তখন তিনি কোন উত্তর দেননি।

এদিন একটা প্রশ্নের তিন রকম জবাব দিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় ৷ জোকা ইএসআইতে। সেখানে ঢোকার সময়ে পার্থবাবু সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।’ কিন্তু বের হওয়ার পর এক প্রশ্নের তিন জবাব দিলেন পার্থবাবু৷

এদিন জোকা ইএসআই থেকে পার্থবাবুকে যখন বের করা হচ্ছে সেই সময়ে তাঁর হুইল চেয়ারকে ঘিরে রেখেছিলেন ইডি অফিসারেরা। তার ঠিক পিছন থেকেই সাংবাদিকদের প্রশ্ন ধেয়ে যায়, পার্থদা, দলের সিদ্ধান্ত কি ঠিক? প্রথমবার এই প্রশ্নের জবাবে পার্থ বলেন, ‘সময় বলবে।’

বেহালা পশ্চিমের বিধায়ককে যখন গাড়িতে তোলা হচ্ছে তখন ওই জায়গায় বেশ জটলা। সব সাংবাদিকই বুম বাড়িয়ে পার্থর আওয়াজ ধরতে চাইছেন। সেই সময়ে ফের তাঁকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন ছুড়ে দেন, দলের সিদ্ধান্ত কি ঠিক পার্থদা? এবার গাড়ির পাদানিতে পা রেখে পার্থ বলেন, ‘নিরপেক্ষ তদন্তকে প্রভাবিত করতে পারে।’

এরপর পার্থবাবু গাড়ির মাঝখানের সিটে বসার পর তাঁর বাঁ পাশের জানলা দিয়ে আর এক সাংবাদিক সেই একই প্রশ্ন ছুড়ে দেন, পার্থদা, দলের সিদ্ধান্ত কি ঠিক? এবার পার্থর জবাব, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্ত ঠিক।’

অর্থাৎ একই প্রশ্নে কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে তিনরকম জবাব দিলেন পার্থ। কখনও ঠিক-ভুল ছেড়ে দিলেন সময়ের হাতে। কখনও বললেন নিরপেক্ষ তদন্ত প্রভাবিত করবে। আর একেবারে শেষে পার্থ বোঝালেন, তিনি নেত্রীর প্রতি এখনও আস্থাশীল। সুর শুনে অনেকে বলছেন, এক্ষেত্রে দল আর নেত্রীকে পৃথক করেই দেখাতে চেয়েছেন বর্ষীয়ান এই নেতা।

আরও প্রশ্ন হল, পার্থবাবু নিরপেক্ষ তদন্তকে প্রভাবিত করার কথা কেন বললেন?

এ ব্যাপারে পর্যবেক্ষকদের অনেকে বলছেন, পার্থবাবু হয়তো মনে করছেন, মন্ত্রিসভা ও দল থেকে তাঁর অপসারণ হয়তো বিচারের আগেই শাস্তি দিয়ে দেওয়ার মতো হয়ে গেল। হয়তো তিনি বুঝতে পারছেন জনমানসে এই ধারণা তৈরি হচ্ছে যে, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগে তাঁর অপসারণ আসলে রাজনৈতিক ভাবে তাঁকে সাজা দেওয়ার শামিল।

ভুবনেশ্বর থেকে পার্থবাবুকে যেদিন কলকাতায় আনা হল তার আগের দিন বঙ্গ সম্মানের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, মিডিয়া ট্রায়াল তিনি মানেন না। যথাযথভাবে আদালতে কেউ যদি দোষী প্রমাণিত হন তাহলে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও মুখ্যমন্ত্রীর কিছু যায় আসে না। সেই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় পার্থ বলেছিলেন, ‘ঠিকই তো বলেছেন।’

অনেকের মতে, পার্থ চট্টোপাধ্যায় যখন সাংবাদিক সম্মেলন করতেন তখনও অনেক বিষয় গুছিয়ে বলতে পারতেন না। ব্রিফ করার ক্ষেত্রে তাঁর সমস্যা ছিল। এ নিয়ে দলের মধ্যেও চর্চা চলত বিস্তর। সেই তিনিই এদিন একই প্রশ্নের তিন রকম জবাব দিলেন। যা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here