শিশুদের বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গী ও ধারণার কথা জানাতে অভিভাবকদের উৎসাহ দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ- শিশু মনে বর্তমান সময়ে কি প্রভাব পড়তে পারে এবং বিভিন্ন সমস্যার কিভাবে সমাধান করা যেতে পারে তা নিয়ে ‘দেশের সময় ‘-এর মনস্তত্ব বিভাগে লিখেছেন–
‘ইতিবাচক পরিবেশ, উৎসাহের অভাব বা লোকের সঙ্গে মেলামেশা না করলে শিশু মনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে’ ‘যাঁরা শিশুদের দেখভাল করবেন তাঁদের শিশুদের সঙ্গে কথা বলার সময় নম্র হতে হবে কারণ শিশুরা বুঝতে পারেনা তাদের মনের ভিতর কি হচ্ছে’ সুরক্ষিত পরিবেশ বর্তমান মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সংকট থেকে শিশুদের রক্ষা করতে পারে ৷
একটি ছেলে বা মেয়ে যদি পুঁথিগত বিদ্যায় ভালো নম্বর পায় তাহলে তাকেই ভালো ছেলে বা মেয়ে -এর তকমা দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এই পুঁথিগত বিদ্যা যথেষ্ট নয় ।
এই ইঁদুরদৌড়ের কারণে মানুষ তাদের মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলছে, এবং বিভিন্ন রকমের অসৎ পথ বেছে নিচ্ছে। ঠিক যেমন করে একটা কাঁকড়া আর একটি কাঁকড়াকে উঠতে গেলেই টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে দেয়, ঠিক তেমন আচরণ করতে দেখা যাচ্ছে ।
এর ফলে এক বিকৃত সমাজ তৈরী হচ্ছে।
এই বিকৃতির দূরীকরণের জন্যে দরকার সঠিক শিক্ষা যা কোনো পুঁথিতে আবধ্য নয় ।
তাই আধুনিক কবি , আইয়াপ্পা পানিকর বলেছেন,
” সব শিক্ষা একটি সার্কাস…
জ্ঞান কোথায় গেলো!
সে যেখানে গেছে সেটা ধোঁকা!”
এই অপরাধ মনস্কতার সূচনা শিশু বয়স থেকেই হয়।
শিশু বয়সে অনেকেই বহু অন্যায় করে থাকে যেমন স্কুলে বন্ধুর জিনিস না বলে নিয়ে নেওয়া, বন্ধুর ব্যাগ ফেলে দেওয়া, মারামারি করা, ইত্যাদি। এই সময়ে বহু খেত্রেই অভিভাবকেরা সঠিক শাসন করেন না, বরং দুষ্টমী বলে ছেড়ে দেন।
অপর দিকে বহু সংখক অভিভাবকেরা অত্যন্ত কড়া শাস্তি দেয় ।এর ফলে এই শিশুরা জানতেই পারেনা যে কেন তারা এই কাজটা সঠিক নয়, তাই হয়তো সাময়িক ভাবে কাজটির প্রদর্শণ করেনা তবে কিছু সময়ের পরে তারা ফের এই এক কাজ করে । তাই সকলের উচিৎ। Albert Bandura, তার সামাজিক শিক্ষা তত্ত্বে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে অধিকাংশ মানুষের আচরণ মডেলিং বা পর্যবেক্ষণমূলক ভাবে শেখে। তাই একটি শিশু যদি আগাগোড়া থেকেই এক আক্রমণাত্মক পরিবেশে বেড়ে ওঠে তাহলে সেই শিশুও আক্রমণাত্মক ও ধ্বংসত্মক আচরণ প্রদর্শন করে।
এই শিশু কালে সকল শিশুদের প্রয়োজন তাদের অভিভাবকরদের সান্নিধ্য । বিখ্যাত মনোবিদ Erik Erikson, বলেছিলেন যে একজন শিশু তার জীবনের প্রথম স্তরে তার বাবা মার সান্নিধ্য পায় । এই সময় একজন শিশু তার মাতা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল থাকে। যদি স্নেহপূর্ণ আচরণের মধ্য দিয়ে তার চাহিদা পূরণ হয় তবে পরিবারের প্রতি তার বিশ্বাস দৃঢ় হয়, এবং তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে ও মানসিক ভাবে সুরক্ষিত বোধ করে।
দ্বিধা ও সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষমতা শিশুর বুদ্ধির বিকাশে বাঁধা সৃষ্টি করে। এইসময়ে শিশুদের প্রয়োজন উৎসাহের শিশুকে উৎসাহিত করলেই তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে এবং তাদের জীবনের অসুবিধার মুখোমুখি হতে সক্ষম হয় ও তারা জীবনকে এক ভিন্ন কোন দিয়ে দেখতে শেখে।
অনেক মা-বাবাই তাঁদের সন্তানের শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন চাহিদা পূরণে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে সমস্যায় পরছেন। বিভিন্ন বয়সী শিশুদের চাহিদা আলাদা। তাদের প্রয়োজন, সময়, বিভিন্ন কাজে যুক্ত থাকার ধরণও আলাদা। বাড়িতে যদি উত্তেজনার পরিবেশ থাকে তাহলে শিশুর মানসিক বিকাশে সমস্যা হতে পারে। বর্তমানে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যে সমস্যা তৈরি হচ্ছে তার থেকে রেহাই পেতে নিরাপদ পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুরা যাতে ব্যস্ত থাকে বাবা-মা’দের সেদিকটি খেয়াল রাখতে হবে। শিশুদের জন্য ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। বাবা-মা’দের দৈনন্দিন কাজকর্মের ফাঁকে বাচ্চাদের জন্য সময় বার করতে হবে। যাঁরা মানসিক চাপের থেকে নিজেদের বার করতে পারছেন না তাঁদের পরিবার, বন্ধুবান্ধব অথবা পেশাদারদের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন।