OT ওটিতে গান শুনিয়ে রোগীদের মন ভালো করেন অর্থোপেডিক সার্জন ডা: বুদ্ধদেব চ্যাটার্জি , দেশের সময়’কে দিলেন একান্ত সাক্ষাৎকার: দেখুন ভিডিও

0
115
সৃজিতা শীল, কলকাতা

দেশেরসময় : গান অসুখ সারাতেও সাহায্য করে! গবেষকদের মতে, তেমন ভাবে শোনাতে পারলে হতাশার রোগী ভুলে যেতে পারেন তাঁর কষ্টের কথা, ব্যথা–বেদনায় ভারাক্রান্ত মানুষ সাময়িক ভাবে হলেও চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারেন৷ অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের  অর্থোপেডিক চিকিৎসক  বুদ্ধদেব চ্যাটার্জি তিনি নিজেই রোগীদেরকে চিকিৎসার সময় গান গেয়ে শোনান এবং নিয়মিত সংগীত চর্চা করে চলেছেন এখনও । সম্প্রতি তিনি মুম্বাইয়ের একটি স্টুডিওতে সাধনা সরগমের সঙ্গে একটি বাংলা গান রেকর্ড করে কলকাতায় ফিরেই দেশের সময় এর প্রতিনিধি সৃজিতা শীল’কে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন কিভাবে তিনি তাঁর চিকিৎসা পদ্ধতিতে (মিউজিক থেরাপি) অর্থাৎ গানের ব্যাবহার করেন ।  দেখুন ভিডিও

মিউজিক থেরাপি:

পছন্দের সুরে মন ভাল হয়। গানের ধরণ অনুযায়ী কখনও শান্ত হয় তো কখনও চনমনে হয়। কিন্তু সে যে আবার অসুখবিসুখও সারাতে পারে, সে কথাও মানেন বিজ্ঞানীরা।

গবেষকদের মতে, তেমন ভাবে শোনাতে পারলে হতাশার রোগী ভুলে যেতে পারেন তাঁর কষ্টের কথা, ব্যথা–বেদনায় ভারাক্রান্ত মানুষ সাময়িক ভাবে হলেও চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারেন৷ অনিদ্রার রোগীর চোখে নেমে আসতে পারে শান্তির ঘুম৷

স্ট্রেস–টেনশনে জেরবার মানুষ খুঁজে পেতে পারেন তাঁর সমস্যার হাল! কারণ, পছন্দের গান বা সুর সোজা গিয়ে হানা দেয় মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস নামের অংশে৷ যা কিনা সব আবেগের কেন্দ্র৷ পছন্দের গানে তারা উদ্দীপিত হয়৷ এনআইবিপি নামের মনিটর লাগালে ধরা পড়ে সেই উদ্দীপনা৷

প্রবল ব্যথায় বা টেনশনে যে হৃদস্পন্দন, নাড়ির গতি ও রক্তচাপ বেড়ে থাকে, তারা সব কমতে শুরু করে ৷ এক–আধ বারেই কষ্ট একেবারে কমে যায় এমন নয় I

তবে সুরের জগৎকে আপন করে নিতে পারলে ওষুধের মাত্রা কমে যায়৷ এরই নাম মিউজিক থেরাপি৷

মারাত্মক মানসিক চাপ ও টেনশন চলতে থাকলে সুরে ডুবে যাওয়া একটু কঠিন৷ কিন্তু কোনও মতে ডুবে যেতে পারলেই হল৷ আঠার মতো লেগে থাকা স্ট্রেস হরমোনকে সরিয়ে মন ভাল করা হরমোনরা ক্ষরিত হয়৷ তাতে সাময়িক ভাল লাগা যেমন হয়, কমে উচ্চ রক্তচাপ–নিদ্রা ও দীর্ঘমেয়াদি অসুখের প্রকোপ৷ মেজর ডিপ্রেশনে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট জাতীয় ওষুধ খাওয়ার সঙ্গে মিউজিক থেরাপি করলে আশাতীত ফল পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷

বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, হসপিটাল সিকনেসের প্রকোপ কমাতে মিউজিক থেরাপি একাই একশো৷ সেরিব্রাল পাল‌্‌সি, অটিজম ও পক্ষাঘাতের শুরুতে অন্যান্য চিকিৎসার সঙ্গে মিউজিক থেরাপি করলে ভাল ফল হয়৷ লাভ হয় বাতের চিকিৎসাতেও৷

এমনকী, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো কষ্টকর অসুখেও তার ভূমিকা আছে৷ নিয়মিত থেরাপি নিলে এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো বাড়িতে তার প্রয়োগ করলে ক্রনিক ব্যথার রোগীদের কাছে খুলে যায় এক নতুন দিগন্ত৷

অসুখের জটিলতার উপর নির্ভর করে অন্য চিকিৎসার পাশাপাশি এই থেরাপি করা হয়৷ প্রথমে রোগীর সঙ্গে কথা বলেন সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও মনোবিদ৷ মনে লুকিয়ে থাকা দুঃখ–কষ্টরা সব বেরিয়ে আসার পথ পায়৷ কিছুটা আরাম পান রোগী৷ প্রস্তুত হয় থেরাপির ক্ষেত্র৷ এ বার আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে ক্ষতে প্রলেপ লাগানোর পাশাপাশি তাঁর পছন্দের গান ও সুরের তালিকা বানানো হয়৷ মিউজিক থেরাপিস্ট নিয়ন্ত্রিত ভাবে সেই সব শোনাতে থাকেন এবং তাতে তাঁর কষ্ট কতটা কমছে তা বিভিন্ন পদ্ধতিতে মেপে দেখেন৷

কিছু দিন থেরাপি নেওয়ার পর অনেক সময়ই ওষুধের মাত্রা কমে যায়৷ কারণ টেনশন কমে গেলে মানুষ সঠিক জীবনযাপনে উদ্যোগী হন৷ তার হাত ধরে কমে যায় রোগের প্রকোপ৷


সব সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে বা বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থেরাপি করতে হবে এমন নয়৷ অল্পস্বল্প সমস্যায় নিজেও করতে পারেন৷ বা ছোট থেকে যদি নিয়ম করে গান শোনার অভ্যাস করতে পারেন, বিপদের সময় সে আপনার আশ্রয় হয়ে উঠতে পারবে৷

কী ভাবে কী করবেন, দেখে নিন-

পছন্দের গান বা সুর স্রেফ শুনে যান৷ বিশ্লেষণ করার দরকার নেই৷ দিনে বার চারেক মিনিট ১৫ করে শুনলেই হবে৷ একটানা শুনতে পারলে ভাল৷ নাহলে খাওয়ার সময়, কাজের ফাঁকে, গাড়িতে, ঘুমোনোর আগে, ব্যায়ামের সময় বা একা থাকার মুহূর্তে শুনতে পারেন৷ গান–বাজনার চর্চা করলে আরও বেশি লাভ৷

থেরাপির ক্ষেত্রে কী গান বা সুর শুনবেন তা নির্ভর করবে আপনার ব্যক্তিত্ব ও কী সমস্যায় ভুগছেন তার উপর৷ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, উচ্চ রক্তচাপ কমাতে আহির ভৈরব এবং টোড়ি, নিম্ন রক্তচাপে মালকোষ, মাথাব্যথায় দরবারি কানাড়া ও জয়জয়ন্তী, ঘুম পাড়াতে বাগেশ্রী ও দরবারি কানাড়া, টেনশন কমাতে দরবারি কানাড়া–খাম্বাজ এবং পুরিয়া খুব কার্যকর৷ উচ্চাঙ্গ সংগীতে আগ্রহ থাকলে এ সব শুনতে পারেন৷ তা সম্ভব না হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো লিস্ট করে নিন৷

Previous articleMamata Banerjee-High Court:বড় স্বস্তি মমতার,হাইকোর্টে নিষ্পত্তি হল মামলার
Next articleBangladesh ওপেন ডোর পলিসিতে ভারত হয়ে নেপাল-ভুটানে প্রবেশের দ্বার খুলছে বাংলাদেশের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here