
দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানে আটকে থাকা ভারতীয়দের উদ্ধারে, সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে চলছে অপারেশন কাবেরী। ভারতীয় সেনা সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ৩৮০০ জন ভারতীয়কে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে রাজধানী খারতুম থেকে। শেষতম অভিযানে বায়ুসেনার সি-১৩০জে বিমানে করে ৪৭ জন ভারতীয় জেদ্দা থেকে দিল্লি ফিরেছেন।

বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি টুইট করে জানান, অপারেশন কাবেরী চলছে। ৩৮০০ জন ভারতীয়কে উদ্ধারের কথাও নিশ্চিত করেন তিনি।

এর আগে বৃহস্পতিবারই ১৯২ জন ভারতীয়কে পোর্ট সুদান শহর থেকে আমদাবাদে পৌঁছে দিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান। ওই দিনই চাদ থেকে অন্য বিমানে চেন্নাই এবং বেঙ্গালুরু আনা হয়েছে আরও ২০ জনকে।
গত কয়েক মাস ধরেই সুদান জুড়ে শুরু চলছে তীব্র লড়াই ৷
রাজধানী খারতুমে চলেছে বিমানহানা, কার্যত শ্মশানে পরিণত হয়েছে আফ্রিকার অন্যতম জনবহুল শহর, দাউদাউ করে জ্বলছে সুদানের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে, আহত চার হাজারের কাছাকাছি। রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে আশঙ্কা করা হচ্ছে, অন্তত ৮ লক্ষ নাগরিক প্রাণভয়ে দেশছাড়া হতে পারেন।

গোটা খার্তুম কার্যত ভূতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে। কোথাও জল নেই, খাবার নেই, ওষুধের দোকান খোলা নেই, হাসপাতালগুলো ধুঁকছে। রাস্তায় পড়ে আছে মৃতদেহ, মর্গগুলো উপচে পড়ছে। ‘সুদান ডক্টর্স ট্রেড ইউনিয়ন’-এর সচিব ডাঃ আতিয়া আবদুল্লা মার্কিন ‘ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও’-কে জানিয়েছেন, প্রায় ৭০%-এর বেশি হাসপাতাল কাজ করছে না।

এখনও কানে বাজছে মিসাইল, গুলিগোলার শব্দ। চোখ বন্ধ করলেই ভেসে উঠছে সুদানের গৃহযুদ্ধের বীভৎসতা। হোটেলের সামনের সোনার দোকানের দিকে ধেয়ে এসছিল একটি মিসাইল। নিমেষের মধ্যে মাটিতে মিশে গিয়েছিল গোটা দোকান, লাগেয়া বাড়িগুলি। সুদান থেকে নিরাপদে বাড়ি ফিরে এসেও আতঙ্কের সেই রেশ কাটেনি উত্তর ২৪ পরগনার আশোকনগরের যুবক সুরজিৎ দে’র ।
বছর চব্বিশের যুবক সুরজিৎ পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। গত বছরও কাজের সূত্রে সুদানে গিয়েছিলেন। এবছরও পয়লা মার্চে সেদেশের রাজধানী খার্তুমে যেতে হয়েছিল তাঁকে। তখন অবশ্য অস্থিরতা থাকলেও এমন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ তিনি দেখেননি। কিন্তু এবার সেখানে গিয়ে যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেন, তা ভিতর থেকে নাড়িয়ে দিয়েছে সুরজিৎকে।

সুরজিৎ বলেন, ‘এক সময় মনে হয়েছিল বাড়িতে ফিরতে পারব না। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে হোটেল বন্দি হয়ে গিয়েছিলাম। বাইরে শুধু গোলাগুলি, মিসাইল ছোটার বিকট আওয়াজ। হোটেলে সামনে থাকা একটি দোকান যেদিন মিসাইল পড়ে গুঁড়িয়ে গেল, সেদিন ভাবলাম, হোটেলের রুম হোক বা রাস্তা কোনও জায়গায় নিরাপদ নই। তাই ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলে একটি বাস ভাড়া করে আমরা প্রায় পঁয়ষট্টিজন পোর্ট সুদানে উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েছিলাম। কারণ সেখানেই চলছে ভারতীয় সেনাদের অপারেশন কাবেরী।’
‘এগারো-বারো ঘণ্টার রাস্তাতেও ছুটছিল গুলি। জল, খাবার ছাড়া কোনওভাবে পোর্ট সুদান পৌঁছনোর পর সেনাবাহিনী সৌদির জেদ্দায় নিয়ে যায়। এরপরে সেখান থেকে ভারতে পৌঁছেছি।’
ছেলে বাড়ি ফিরে আসায় স্বস্তি ফিরেছে সুরজিৎ-এর বাবা-মার। এতদিন ছেলের চিন্তায় দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি তাঁরা। সুরজিৎ-এর বাবা জানান, ‘হোয়াটস অ্যাপে ছেলের একটা মেসেজ পাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে থাকতে হত। ছেলেকে ফিরে পেয়ে এখন নিশ্চিন্ত লাগছে।’
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,২০১৯ সালের প্রথম দিকের কথা। মুদ্রাস্ফীতির জন্য রুটির দাম বেড়ে যাওয়ায় রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছিলেন সুদানের নাগরিকরা। সেসময়েই রাষ্ট্রপ্রধান ওমর আল বাশির সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সেনা অভ্যুত্থান ঘটে। দেশকে বাঁচাতে সেনা-আধা সামরিক বাহিনী যৌথভাবেই কাজ করেছিল। কিন্তু বাশিরকে ক্ষমতাচ্যূত করার পর ফের দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে ক্ষমতার বোঝাপড়া নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। দুর্নীতি, ক্ষমতার লোভ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার আশায় আরও এক ক্ষমতার খেলায় জ্বলছে সুদান।
সুদানের ভারতীয় দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে, ৯ দিন ধরে একটানা অপারেশন কাবেরী চলার পরে আপাতত তা শেষ বলে ঘোষণা করা হল। এর মধ্যেই কয়োক হাজার ভারতীয়কে নিরাপদে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। প্রসঙ্গত, খারতুমের ভারতীয় দূতাবাস ইতিমধ্যেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে ৮৫০ কিলোমিটার দূরে, লোহিত সাগরের ধারের পোর্ট সুদান শহরে। এখন দেখার এ গৃহযুদ্ধের অবসান কবে হয়।

তবে এই সমস্যার শেষ কবে, আন্দাজ করতে পারছেন না কেউই। সবারই বক্তব্য, দেশের দুই যুযুধান ‘জেনারেল’ অন্তত একজনকে ঘায়েল না করলে আলোচনায় বসবেন না। ততক্ষণে ক্ষয়ক্ষতি চিকিৎসার বাইরে চলে যাবে। মার্কিন রাষ্ট্রসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, তিনি সরাসরি বুরহান এবং দাগালোর সঙ্গে কথা বলেছেন। মধ্যস্থতা করতে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহীও উদ্যোগী হয়েছে। তাতে চিঁড়ে ভেজে কিনা সেটাই দেখার।

বিশেষ হেল্পলাইনঃ
ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, দূতাবাসে যোগাযোগ করার জন্য +249 999163790; +249 119592986; +249 915028256 এই নম্বর এবং ইমেল সংযোগের জন্য cons1.khartoum@mea.gov.in আইডিতে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
